Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Donald Trump

এখন চলো নিয়মমতে

জনগণের এক বৃহৎ অংশ হয় মাস্ক পরিতেছেন না, নতুবা যথাযথ নিয়মবিধি মানিতেছেন না। অতিমারির এই চরম পর্যায়েও।

ছবি এপি ও রয়টার্স

ছবি এপি ও রয়টার্স

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

অভূতপূর্ব ঘটনা! সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে জনসমক্ষে মাস্ক-পরিহিত অবস্থায় দেখা গিয়াছে। দুনিয়া ধন্য বোধ করিতেছে! মাস্ক পরিধানে তাঁহাদের প্রবল আপত্তির বিষয়টি অজানা নহে। বিশেষত, ট্রাম্প প্রকাশ্যেই বহু বার মাস্ক-বিরোধী কথা বলিয়াছেন, মাস্ক-পরিহিতদের লইয়া উপহাস করিয়াছেন। মিলিটারি হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় মাস্ক পরিধানের পরও অননুকরণীয় ভঙ্গিতে বলিয়াছেন, তিনি মাস্ক-বিরোধী নহেন, কিন্তু বিশ্বাস করেন, জায়গা এবং সময় বুঝিয়াই তাহা ব্যবহার করা উচিত। এ হেন বেপরোয়া মনোভাব ব্রিটেনের সরকারও গোড়ায় দেখাইয়াছিল। ইউরোপের অন্যত্র মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হইলেও ব্রিটেন সেই পথে হাঁটিতে আগ্রহী ছিল না বহু দিন। কিন্তু দেশের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তাহাকে নিজ অবস্থানে স্থির থাকিতে দেয় নাই। রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক প্রয়োজনে, এবং পরিস্থিতির চাপেই অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হইয়াছেন। কিন্তু নেতাদের দেখিয়া যে সাধারণ মানুষরা যথেচ্ছাচার করিতেছেন মাস্ক লইয়া, তাঁহারা নিজেদের পরিবর্তন করিতেছেন কি? ইউরোপের বহু স্থানে, এমনকি অধুনা করোনা হটস্পট বলিয়া পরিচিত আমেরিকার ফ্লোরিডায় এখনও মাস্ক না পরিবার জন্য আন্দোলন চলিতেছে। ফ্রান্সে যাত্রীদের মাস্ক পরিতে অনুরোধ করায় এক সুনাগরিক বাসচালককে প্রচণ্ড প্রহার করা হইয়াছে।

ইহা বিদেশের ঘটনা বলিয়া মুখ ফিরাইয়া থাকা যাইতেছে না। এই দেশের চিত্রটিও অনুরূপ। জনগণের এক বৃহৎ অংশ হয় মাস্ক পরিতেছেন না, নতুবা যথাযথ নিয়মবিধি মানিতেছেন না। অতিমারির এই চরম পর্যায়েও। অথচ মাস্ক পরা এবং না-পরিবার সঙ্গে এক-এর নহে, বহু-র সুরক্ষার বিষয়টি জড়াইয়া আছে। দায়িত্ববোধের প্রশ্ন আছে। একটি ভুল পদক্ষেপে বহু-র স্বার্থ যেখানে বিপন্ন হইতে পারে, সেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার অজুহাত দেখানো যায় না। ব্যক্তির মত ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক কারণে কিছু কিছু সুরক্ষা লইতে হয়। যেমন টিকাকরণের ক্ষেত্রে। টিকা শুধুমাত্র এক জনের সুরক্ষাকবচ নহে, বৃহদর্থে সমগ্র সমাজের। সুতরাং এক জনও ব্যতিক্রম হইলে তাহা অনেকের বিপদের কারণ। নিয়ম ভাঙিবার কোনও জায়গা এখানে নাই। ইহা শুনিতে স্বৈরতন্ত্রী, কিন্তু বিপর্যয়ের সময় অবশ্যপালনীয়।

প্রশ্নটি আসলে বিবেচনা-বিষয়ক। ব্যক্তিস্বাধীনতা কখনওই স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর নহে। তাহা ব্যক্তিগত সঙ্কটের সঙ্গে সামাজিক দুর্যোগ ডাকিয়া আনিতে পারে। তাই কন্টেনমেন্ট জ়োনে নিয়ম না-মানিয়া পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, কিংবা গলায় মাস্ক ঝুলাইয়া বাড়ির বাহিরে পা রাখা, কিংবা সাংবাদিক সম্মেলনে স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধানের মাস্ক খুলিয়া তিনি করোনা পজ়িটিভ ঘোষণা করা— এ সবের মধ্যে কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নাই, এক ভয়ঙ্কর ঔদ্ধত্য এবং স্বেচ্ছাচারিতা রহিয়াছে। সর্বনাশ ডাকিয়া আনিবার মতো স্বেচ্ছাচারিতা। অতিমারির প্রতি দিনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাইয়া সর্বাগ্রে নিজস্ব মত এবং বিশ্বাসের উপরে নিয়মকে স্থান দিতে হইবে। না-মানিবার সহজাত প্রবৃত্তিটিকে দমন করিতে হইবে, অন্তত কিছু কালের জন্য। এখনই সাবধান না হইলে কত বড় দুর্যোগ আসিতে চলিয়াছে, এখনও আমরা বুঝিতেছি না।

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump Jair Bolsonaro Coronavirus Pandemic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy