Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

প্রতিস্থাপন হোক, বেশি পাতার গাছও বাড়ুক

ঝড়ে প্রতি বছর পড়ে যায় বহু গাছ। সেগুলো কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু এই গাছগুলো বাঁচাতে পারলেই পরিবেশের বেশি লাভ। ঘূ্র্ণিঝড় আমপানে হলদিয়ার সুতাহাটায় পড়ে যাওয়া একটি প্রাচীন রাবার গাছকে চল্লিশ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করার পর দাঁড় করানো গিয়েছে।

হলদিয়ায় পড়ে যাওয়া গাছ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।।  নিজস্ব চিত্র

হলদিয়ায় পড়ে যাওয়া গাছ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০১:২৬
Share: Save:

পাল্টে যাচ্ছে স্লোগানটা। বদলাচ্ছে না বলে যোগ হচ্ছে বলাই ভাল। আগে জোর দেওয়া হত ‘গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও’ স্লোগানে। এখন বলা হচ্ছে, বড় গাছ বাঁচাও। সেই সঙ্গে গাছের চারা লাগাও। কোন বড় গাছেদের বাঁচানো হবে? উন্নয়নের বলি হতে বসা কোনও বড় গাছ। বা ঝড়ে পড়ে যাওয়া কোনও গাছ। এর যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। একটা গাছ বড় হতে দীর্ঘ সময় নেয়। তাই কোনও অঞ্চলে ঝড়ে গাছ পড়লে গাছ লাগানো দরকার। কিন্তু সেটা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কারণ গাছটি বড় হতে যথেষ্ট সময় নেবে। তার পর তার অবদান পরিবেশ বা মানুষের কাজে লাগবে। কিন্তু পড়ে যাওয়া বা কাটা পড়ার আশঙ্কায় থাকা গাছ প্রতিস্থাপন বা পুন:স্থাপন করলে পরিবেশ তাৎক্ষণিক ফল পাবে।

ঘূ্র্ণিঝড় আমপানে হলদিয়ার সুতাহাটায় পড়ে যাওয়া একটি প্রাচীন রাবার গাছকে চল্লিশ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করার পর দাঁড় করানো গিয়েছে। নতুন গাছ লাগানোর সঙ্গে পড়ে যাওয়া পুরনো গাছ বাঁচিয়ে তোলার উদ্যোগ চলেছে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল জুড়েই। তখনই প্রশ্ন উঠেছে, গাছ প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো জেলায় রয়েছে তো? বিষ্ণুপুরের পূর্ত বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার মানিক ভুঁইয়া হলদিয়ার বাসিন্দা। তিনি বললেন, ‘‘আমরা হলদিয়া জুড়ে সার্ভে করেছি। বহু গাছ বাঁচিয়ে তোলা যায়। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান অয়েলে আবাসনের কাছে ১০০টি কৃষ্ণচূড়া, রাধা চূড়া, শিরিশ গাছ তুলে ধরা যায়। এ ছাড়া হলদিয়া বন্দরের মধ্যে ১২০০ গাছ তুলে ধরা যায়।’’ হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ ভেঙে যাওয়া বা উপড়ে যাওয়া গাছের যত্নে উদ্যোগী হয়েছেন। বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার শশাঙ্ক পণ্ডিত জানান, একটি বুকুল গাছ প্রতিস্থাপন করেছেন। কিন্তু নয়াচরে লক্ষাধিক উপড়ে পড়া গাছ বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে তাঁর।

পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের প্রকোপ বেশি ফলে গাছের ক্ষতিও বেশ। বিভিন্ন ঝড়ে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই জেলার গাছ। ফলে প্রতিস্থাপন জরুরি। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া ব্যয় সাপেক্ষ। প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় প্রশিক্ষিত লোকজন দরকার হয়। সেই প্রযুক্তি নেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। যন্ত্রপাতির অনেক ভাড়া। হরমোনের প্রয়োগ করতে হয়। হলদিয়া মহকুমা, তমলুক মহকুমায় গাছ লাগান অরুণাশু প্রধান, মধুসূদন পড়ুয়া, কামাল শেখরা। এঁরা জানান, প্রশাসন ও বনদফতরের আরও সক্রিয়তা দরকার।

কিন্তু বন দফতর কী বলছে? পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএফও স্বাগতা দাস বলেন, ‘‘গাছ প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো কোনও জেলাতেই নেই। কলকাতায় রযেছে। হিডকো এই কাজ করে। আমরা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু ওরা আসতে রাজি নয়। কলকাতায় গাছ প্রতিস্থাপন করা হয়। হরমোন ব্যবহার করা হয়। যেহেতু যন্ত্রপাতি খুব দামি তাই কলকাতা থেকে এসে খরচে পোষাবে না জানিয়েছে তারা।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরে অবশ্য গাছের পুন:প্রতিষ্ঠা সে ভাবে হয় না। মেদিনীপুরের এডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, ‘‘একেবারে যে হয় না তা নয়। মাঝেমধ্যে গাছ প্রতিস্থাপন করা হয়। একবার আনন্দপুরে পড়ে যাওয়া একটি গাছ এ ভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চই বলেন, ‘‘এ রকম কাজ আমাদের জেলায় হয়নি।’’ ঝাড়গ্রাম শহরে ছিমছাম মোড়ের কাছে আমপানে প্রাচীন বহেড়া গাছটি পড়ে যায়। তা কেটে ফেলতে হয়। প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকলে গাছটি নিজের জায়গায় থাকত।

অন্য একটি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন ‘বটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী প্রবীররঞ্জন সুর। তিনি গাছ নির্বাচনে নজর দিতে বলছেন। প্রবীরবাবু জানান, পুরনো গাছ বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু রাস্তার ধারে সোনাঝুরি, আকাশমণি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া লাগানো উচিত নয়। তাঁর মত, ‘‘জারুল, স্বর্ণচাঁপা, দেবদারু, নিম, ছাতিম, অশোক, মহানিম, রক্তকাঞ্চন, কদম, মহুয়া, শ্বেতশিমূল লাগানো উচিত।’’ প্রবীর জানাচ্ছেন, যেসব গাছের পাতা বেশি, পাতার আওতায় অনেকটা জায়গা আসে সেই সব গাছ লাগানো উচিত।

তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Environment Trees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy