Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সুরক্ষায় উদ্যোগ

বরং পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গিয়াছে কতকগুলি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে। সম্প্রতি নারী-নির্যাতনের যে কোনও ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করিয়া সর্বোচ্চ দশ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করিবার নির্দেশ দিয়াছেন তিনি।

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

অর্ধেক আকাশ জ্বলিতেছে। নির্যাতনের আগুনে। ঘটনাপরম্পরায় প্রমাণিত, দেশের কোথাও নারীরা সুরক্ষিত নহেন। যেন এই দেশে জন্মাইলে প্রতিনিয়ত অসম্মান আর অত্যাচারকে সঙ্গী করিয়া কোনওক্রমে বাঁচিয়া থাকা, অথবা অকালে মরিয়া যাওয়াই তাঁহার নিয়তি। তাঁহাদের সুরক্ষার দায়িত্ব যাঁহাদের হাতে অর্পণ করা হইয়াছিল, তাঁহারা সম্ভবত বিষয়টিকে তত পাত্তা দেন না। তাই জন্য, মেয়েরা পুড়িয়া মরিতেছেন, অথচ প্রধানমন্ত্রী কোনও কথাই বলেন না। অন্যেরাও তথৈবচ, তাঁহারা অন্যান্য বিষয়ে তর্কবিতর্ক করিতেছেন। প্রতিকারের দাবি অ-সহ্য হইলে তাঁহারা বড়জোর এনকাউন্টারের মতো কিছু জনমোহিনী নিদানে সমর্থন দেন, অথবা পুরাতন কোনও ঘটনায় অপরাধীদের মৃত্যুপরোয়ানায় দ্রুত সহি করিয়া আত্মতৃপ্ত হন। অথচ এই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল গোটা দেশের নারীসমাজের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রণয়নের। নির্ভয়া কাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে নারী-সুরক্ষায় একগুচ্ছ পরিকল্পনা রচিত হইয়াছিল। সময়ের সঙ্গে তাহাতে মরিচা ধরিয়াছে। সেইগুলির সংস্কার এবং নূতন পরিকল্পনা রূপায়ণে যে দ্রুততা এবং সদর্থক মনোভাবের প্রয়োজন ছিল, কোনও রাজ্য সরকারই তাহাতে মন দেয় নাই। উত্তরপ্রদেশের বাস্তবই বলিয়া দেয় যে, বিজেপির নারী-সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রচারের ঢক্কানিনাদের আড়ালেও আসলে কী সুগভীর অন্ধকার।

বরং পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গিয়াছে কতকগুলি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে। সম্প্রতি নারী-নির্যাতনের যে কোনও ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করিয়া সর্বোচ্চ দশ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করিবার নির্দেশ দিয়াছেন তিনি। অন্যথায় পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা হইবে। শহর কলিকাতায় ইতিমধ্যেই নারী-সুরক্ষার জন্য তৈরি হইয়াছে ‘সেফ সিটি’ প্রকল্প, যদিও তাহা মূলত শহর-কেন্দ্রিক। জেলাগুলির অসুবিধা দূর করিতে একটি পৃথক কলসেন্টার গড়িবার প্রস্তুতি লওয়া হইতেছে, যাহাতে জেলা হইতে সরাসরি অভিযোগ গ্রহণ করা যায়। হাওড়া পুলিশ মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য একটি নূতন অ্যাপ চালু করিয়াছে যাহাতে প্যানিক বোতামের সাহায্যে সরাসরি পুলিশ কনট্রোল রুমে সংবাদ পৌঁছনো সম্ভব। তেলঙ্গানার ঘটনার পর পরই কলিকাতা পুলিশের বিশেষ মহিলা বাহিনী ‘উইনার্স’-এর অভিযানও কিছুটা স্বস্তি দিয়াছে। এই সব কিছুর পরও অবশ্য একটি গুরুতর প্রশ্ন থাকিয়া যায়। এই পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা কত দিন থাকিবে? অভিজ্ঞতা বলে, কোনও ঘটনা-পরবর্তী প্রতিকারের আশ্বাস বা পরিকল্পনা হাওয়ায় মিলাইয়া যাইতে অধিক সময় লয় না। সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবিত ‘জ়িরো এফআইআর’-এর বিধি যেমন ঠিক ভাবে পালিত হয় না। কোন থানায় অভিযোগ জানাইতে হইবে, তাহা লইয়া বিভ্রান্তির শিকার হন অনেক অভিযোগকারী। পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর ১০০ ডায়াল করিয়াও সাড়া মিলে না। কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত ১১২ নম্বরটি লইয়া রাজ্য-কেন্দ্র টানাপড়েন চলিতে থাকে। বিষয় যেখানে নিরাপত্তা, সেখানে এত ধরনের বিভ্রান্তি বিপজ্জনক। আশার কথা এইটুকুই, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অন্তত নারী-সুরক্ষার বিষয়টিকে যথোচিত গুরুত্ব দিতেছেন। প্রস্তাবিত ব্যবস্থাগুলি কার্যকর হইলে, বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা কাটাইতে পারিলে হয়তো পশ্চিমবঙ্গ বাকি ভারতকে পথ দেখাইতেও পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Safety Security Rape Woamn in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy