Advertisement
E-Paper

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফেরানোর পথে বহু প্রশ্ন শিক্ষকদের

শিক্ষকদের প্রশ্ন, এখন ফের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কার্যকর করার কথা শিক্ষা দফতর বললেও পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালুর বিষয়টি আদৌ বাস্তবায়িত করা যাবে তো?

শিক্ষকদের একাংশের মতে, পাশ-ফেলের নতুন নীতি ঠিক মতো কার্যকর হলে স্কুলছুটও আটকানো যাবে।

শিক্ষকদের একাংশের মতে, পাশ-ফেলের নতুন নীতি ঠিক মতো কার্যকর হলে স্কুলছুটও আটকানো যাবে। —প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৪২
Share
Save

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনার কথা বলেছে কেন্দ্র। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, এই দুই শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার কথা ২০১৯ সালেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল শিক্ষা দফতর। কেন্দ্র যা বলেছে, তা তাঁদের কাছে নতুন নয়। কিন্তু শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এই বিজ্ঞপ্তি শিক্ষা দফতর দিলেও এখনও তা কার্যকর করার কথা বলেনি। তাই শিক্ষকদের প্রশ্ন, এখন ফের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কার্যকর করার কথা শিক্ষা দফতর বললেও পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালুর বিষয়টি আদৌ বাস্তবায়িত করা যাবে তো? সব স্কুলের সেই সদিচ্ছা থাকবে কিনা, প্রশ্ন আছে তা নিয়েও।

শিক্ষকদের মতে, নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনও পড়ুয়া পঞ্চম বা অষ্টমে ফেল করলে তাদের বিশেষ নজরদারিতে রেখে দু’মাসের মধ্যে পড়িয়ে ফের পরীক্ষায় বসাতে হবে। সেখানেও সে যদি পাশ করতে না পারে, তা হলে তাকে পুরনো ক্লাসেই রেখে দিতে হবে।

শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে তাঁদের একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। কোনও পড়ুয়া পাশ নম্বরের কাছাকাছি পেলে সাধারণত শিক্ষকেরা চেষ্টা করেন তাকে পাশ করিয়ে দিতে। যারা ফেল করে, তারা সাধারণত পুরো উত্তরপত্র জুড়েই ভুল উত্তর লেখে। বর্তমান নিয়মের ফলে শূন্য, দুই, পাঁচ পেয়েও বছরের পর বছর পরের শ্রেণিতে উঠে যাচ্ছে অনেক পড়ুয়া। শিক্ষকদের প্রশ্ন, যে পড়ুয়ারা প্রতিটা বিষয়ে শূন্য, পাঁচ বা দুই পেয়ে ফেল করল, তাকে দু’মাস পড়িয়ে কি পাশ করানো সম্ভব? যদি সে পাশ করেও যায়, তা হলে সে পরের ক্লাসে দু’মাস দেরি করে পড়াশোনা শুরু করবে। পিছিয়ে পড়া ওই পড়ুয়ার নতুন ক্লাসে উঠে কতটা লাভ হবে?

দ্বিতীয়ত, যারা ফেল করল, তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কোথায় দেওয়া হবে? এমনিতেই স্কুলগুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা কম। শিক্ষকেরা কি ওই পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য নিজের রুটিনের ক্লাসের পরে বিশেষ ক্লাস নিতে পারবেন? নিলে স্কুলের সময়ের মধ্যে তা কখন নেবেন? ছুটির পরে ক্লাস করতে পড়ুয়ারা রাজি হবে তো? পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের সাধারণ পড়ুয়াদের সঙ্গে ক্লাস নেওয়া যাবে না। তাদের জন্য আলাদা ক্লাসঘরের ব্যবস্থা করতে হবে। সব স্কুলে পর্যাপ্ত ক্লাসঘরও নেই। এর বদলে শিক্ষকদের একাংশের মত, কোনও পড়ুয়া ফেল করলে তাকে সেই ক্লাসে রেখে দেওয়া হোক।

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘যে পড়ুয়া শূন্য পাচ্ছে, তাকে দু’মাসে সেই বিষয়ে পড়িয়ে পাশ করানো কার্যত অসম্ভব। স্কুলগুলি দ্বিতীয় পরীক্ষার পরেও তাদের ফের ফেল করিয়ে রাখার দায় নেবে তো? স্কুলে সকলের পাশ করার জন্য আগে দরকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন।’’

তবে শিক্ষকদের একাংশের মতে, পাশ-ফেলের নতুন নীতি ঠিক মতো কার্যকর হলে স্কুলছুটও আটকানো যাবে। কারণ, এখন পরীক্ষায় পাশ-ফেলের ভীতি না থাকায় বহু পড়ুয়াই স্কুলে যায় না অথবা স্কুলে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে অন্যত্র চলে যায়। পরীক্ষার ফেল করার ভয় থাকলে সে স্কুলমুখী হবে বলেই শিক্ষকদের আশা। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এই নীতি কার্যকর করতে প্রয়োজন বাংলার শিক্ষা পোর্টালে বদল। এত দিন বাংলার শিক্ষা পোর্টালে তার কোনও প্রতিফলন হয়নি। এ বার সেই পরিবর্তন পোর্টালে হবে তো? এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এই বিষয়ে শিক্ষা দফতরে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। তাঁর মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Students Teachers Schools Exam

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}