Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

অপ্রত্যাশিত সুফল

স্কুলশিক্ষার পরিকাঠামোয় সম্প্রতি বহু উন্নতি হইয়াছে, কিন্তু বড় পরিবর্তন কিছু হয় নাই।

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

লকডাউনের জেরে অনলাইন শিক্ষা আপাতত আবশ্যক হইয়াছে। প্রশ্ন অবশ্যই উঠিয়াছিল প্রযুক্তির প্রসার লইয়া। যে সব পরিবারে কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন নাই, যে সব এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বা ওয়াইফাই দুর্বল, সেই সকল ছাত্রছাত্রীরা কী প্রকারে পাঠগ্রহণ করিবে? চার মাস কাটিয়াছে, ইহার উত্তর এখনও মিলে নাই। কিন্তু সময় যত গড়াইয়াছে, প্রশ্নও বদলাইয়াছে। শিক্ষাদানের সার্থক উপায় কী, শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক কেন হওয়া প্রয়োজন, সেই প্রশ্নগুলি লইয়া ফের চর্চা চলিতেছে। শিক্ষকের ভূমিকা কেবল পাঠদানে সীমাবদ্ধ রাখিলে আজ শিক্ষার কাজ চলিবে না, তাহা অনুভূত হইতেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলায় শিক্ষকেরা তাঁহাদের ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোনে টাকা ভরিয়া দিতেছেন, কেহ ফোন করিয়া তাহাদের খোঁজ লইতেছেন। পড়ুয়া ক্লাসে যোগ দিতে পারিল কি না, পাঠ বুঝিল কি না, উত্তর লিখিতে সমস্যা হইতেছে কি না, শিক্ষক তাহা অনুসন্ধান করিতেছেন। শ্রেণিকক্ষ অন্তর্হিত হইয়াছে, প্রথম বেঞ্চও আর নাই। যাহারা যোগ দিতে পারিতেছে, তাহাদের সকলের অবস্থান এক। যাহারা পারে নাই, তাহাদের অপারগতাকে পড়াশোনায় অনাগ্রহ বলিয়া তুচ্ছ করা আর সম্ভব নহে। ভাবা হইতেছিল, অনলাইন শিক্ষা পড়ুয়াকে দৃষ্টির অগোচরে লইবার ফলে দূরত্ব সৃষ্টি হইবে। কিন্তু দেখা গেল, প্রতিটি শিশুকে ফোন করিয়া খোঁজ লইতেছেন যে শিক্ষক, তাঁহার সহিত ছাত্রদের এক অভূতপূর্ব নৈকট্য স্থাপিত হইতেছে। শ্রেণিকক্ষে যে উপেক্ষিত থাকিয়া যায়, এখন হয়তো তাহারই পাঠগ্রহণের ক্ষমতা লইয়া শিক্ষক বিশেষ চিন্তা করিতেছেন।

শাপে বর। দেশে স্কুলশিক্ষার মূল্যায়নে বার বার এই উদ্বেগজনক চিত্রটি ভাসিয়া উঠিয়াছে যে, ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাইতেছে কিন্তু শিখিতেছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষকেরা পাঠক্রম শেষ করিবার প্রতি যত নজর দেন, পড়ুয়াদের প্রতি ততটা নহে। এই কারণে প্রাথমিক স্কুলের পাঠ সম্পূর্ণ করিয়াও অনেক শিশুর লিখিবার-পড়িবার ক্ষমতা তৈরি হয় না। অভিভাবকরা গৃহশিক্ষক নিয়োগ করিয়া সেই ফাঁক পূরণের চেষ্টা করেন। অনলাইন শিক্ষা মনে করাইল, স্কুলশিক্ষকের বিকল্প খুঁজিবার প্রয়োজন নাই। প্রয়োজন শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি লইয়া নূতন চিন্তা। প্রযুক্তির অগ্রগতির সহিত বহু কর্মক্ষেত্রে চিন্তায় পরিবর্তন আসিয়াছে। দফতরহীন দফতর, অর্থাৎ কাজকে কোনও নির্দিষ্ট অবস্থান হইতে মুক্তি দিবার যে রীতি ক্রমশ জনপ্রিয় হইতেছে, তাহাও কর্মসংস্কৃতির নূতন আদর্শ নির্মাণ করিতেছে। লক্ষ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা, পদ্ধতিতে নমনীয়তা, বাহুল্যের বর্জন, ইহাই এখন কর্মসংস্কৃতি।

স্কুলশিক্ষার পরিকাঠামোয় সম্প্রতি বহু উন্নতি হইয়াছে, কিন্তু বড় পরিবর্তন কিছু হয় নাই। দেড় শতক পূর্বের পাঠদানের রীতির সহিত আজকের রীতির মৌলিক পার্থক্য কিছু নাই। লকডাউন সেই সাবেকি পদ্ধতি লইয়া ভাবিতে বাধ্য করিল। পড়ুয়ার প্রয়োজনের প্রতি সতর্ক করিল সমাজকে। শিক্ষকও বুঝিলেন, শিক্ষকতার কাজটি শ্রেণিকক্ষে বা স্কুলভবনে সীমাবদ্ধ নহে। কর্তব্য সমাধা করিতে তাঁহাকে যেমন প্রয়োজন, যখন প্রয়োজন, তখন তেমন ভাবে কাজ করিতে হইবে। যেমন করিতেছেন অন্যান্য পেশার মানুষ। স্কুল বন্ধ থাকিলেও শিক্ষা বন্ধ থাকিতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Online Classes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy