অতিমারির মাত্রা বাড়িতেছে, দূষণের মাত্রা কমিতেছে। আচম্বিতে এক অসুখ আসিয়া যখন সমগ্র দুনিয়াকে থামাইয়া দিল, তখন সেই সুযোগে নিজেকে খানিক পরিস্রুত করিয়া লইল ধরিত্রী। তবে দূষণের সহিত নোভেল করোনাভাইরাসের যোগ আরও নিবিড়। গবেষণা বলিতেছে, যে অঞ্চলে বায়ুদূষণ যত অধিক, সেই অঞ্চলে কোভিড-১৯’এ মৃত্যুর হারও তত অধিক। হিসাব জানাইতেছে, সূক্ষ্মকণা দূষণের মাত্রা মাত্র এক একক বৃদ্ধি পাইলেই এই অসুখে মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ বাড়িয়া যাইতেছে। অর্থাৎ নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন অঞ্চলের বায়ু যদি আর একটু পরিস্রুত হইত, তাহা হইলে শতাধিক প্রাণ রক্ষা পাইত।
অতএব, কোভিড-১৯ হইতে সারিয়া উঠিবার পরেও এই পরিচ্ছন্ন বায়ুকে ধরিয়া রাখিবার লড়াই চালাইতে হইবে। এক্ষণে বিশ্ব শোধিত হইয়াছে মানুষের বাধ্যতায়, স্বেচ্ছায় নহে। দুনিয়া ছন্দে ফিরিবার পর দূষণও পুরাতন হারে ফিরিয়া গেলে এই অবকাশের কোনও লাভই পাওয়া যাইবে না। প্রকৃতির শিক্ষাটি অবহেলা করিলে সঙ্কট আরও ঘনাইবে।
আধুনিক মানুষ যাহাকে সভ্যতা বলিয়া জানে, তাহা বহুলাংশে প্রকৃতির পরিপন্থী। মানবজগতে উন্নয়নের সংজ্ঞা কেবল নূতন নূতন নির্মাণের ভিতর দিয়াই প্রকাশিত হয়— তাহা যে মূল্যেই হউক না কেন। রাষ্ট্র যেহেতু ‘উন্নয়নবাদী’, ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন নামক বিপদটির প্রকৃত মাপ সে বুঝিয়াও বোঝে না। সকলেই হয়তো বিশ্ব উষ্ণায়নকে ‘কাল্পনিক’ ভাবেন না— কেহ কেহ ভাবেন, তাহা অনস্বীকার্য— কিন্তু তাহা লইয়া যে প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন হইয়া থাকা জরুরি, ইহাও বুঝেন না। এক অতিমারি আসিয়া সেই সারসত্যটি আর এক বার বুঝাইয়া দিল। প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ জানাইয়া মনুষ্যজাতির পক্ষে টিকিয়া থাকা অসম্ভব। স্মরণ করা যাইতে পারে, ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ নাটকের সন্ন্যাসী প্রকৃতির উপর জয়ী হইয়া অনন্তকে উপলব্ধি করিতে চাহিয়াছিল। শেষাবধি এক বালিকা তাহাকে স্নেহপাশে বাঁধিয়া সংসারে ফিরাইয়া আনে। কোভিড-১৯’এর কল্যাণে সমগ্র মনুষ্যজাতির তদ্রূপ চেতনার উদয় হইবে, ইহাই আশা।
আরও পড়ুন: রাস্তাঘাট সুনসান, কিন্তু ব্রিটেনের সুপারমার্কেটগুলিতে দেদার রি-স্টক হচ্ছে!
যাহা গিয়াছে তাহা গিয়াছে। করোনাভাইরাস ঘুরপথে আমাদের যে সুযোগ করিয়া দিয়াছে, তাহার পূর্ণ সদ্ব্যবহারই লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রথম কাজ হইবে বায়ুদূষণের মূল উৎসগুলি চিহ্নিত করা, এবং যখন পুনরায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হইবে, তখন কী ভাবে দূষণের মাত্রাটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহা লইয়া চিন্তা করা। কলকারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যানবাহন, যন্ত্রনির্ভর কৃষিক্ষেত্র, বৃহৎ নগরীর ন্যায় স্তম্ভগুলি আমাদের সমগ্র সভ্যতার কাঠামোটিকে দাঁড় করাইয়া রাখিয়াছে। এই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রই আবার দূষণের মাত্রাও ক্রমশ বৃদ্ধি করিতেছে। অতএব, নীতি-নির্ধারকরা যে ভাবে সমাজ-অর্থনীতির দিকটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন, ঠিক সেই গুরুত্বেই স্বাস্থ্যবিধির কথাও ভাবিতে হইবে। ইহার জন্য পরিবেশমুখী নূতন গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রয়োজন, এবং প্রয়োজন রাষ্ট্র, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টা। করোনাভাইরাস এবং তজ্জনিত লকডাউন হইতে আমাদের মূল শিক্ষা ইহাই— আমাদের অস্তিত্বে প্রকৃতি প্রাতঃস্মরণীয়। উহাকে অবহেলা করা চলিবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy