E-Paper

কর্ণপাত

মহামান্য বিচারপতিরা গুজরাত পুলিশকে বলেছেন, সংবিধান প্রণয়নের পরেও পঁচাত্তর বছর কেটে গেল, এ বার অন্তত পুলিশের বোঝা উচিত— সংবিধানে বলা বাক্‌স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ কী।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৫
Share
Save

নাগরিকেরই কি শুধু দায় পরমতসংবেদী হওয়ার? রাষ্ট্র, বা রাষ্ট্রের ‘এজেন্সি’স্বরূপ কাজ করে যে প্রতিষ্ঠানগুলি, তাদের কি কোনও দায় নেই নাগরিকের মত বুঝতে চাওয়ার? আজকের ভারতে যে এই দ্বিতীয়টির গুরুত্ব কত, তা কোন অবস্থানেই বা দাঁড়িয়ে, বোঝা গেল কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ীর বিরুদ্ধে মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে। সাংসদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায়সংহিতার একাধিক ধারায় এফআইআর করেছিল গুজরাত পুলিশ। অভিযোগ, সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়োয় ব্যবহৃত তাঁর একটি কবিতা দেশের সংহতির হানি করেছে, অন্য নাগরিকদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে। কবিতায় ছিল ‘অ্যায় খুন কে পিয়াসে বাত সুনো’-র মতো বাক্য, সম্ভবত তা-ই এফআইআর দায়েরের পিছনে কাজ করে থাকবে— হাজার হোক, রাজ্যটি গুজরাত, ২০০২-এর ভূত এত সহজে যাওয়ার নয়। উপরন্তু যে কবির কবিতা নিয়ে এত কিছু, তিনি বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ। তবে শীর্ষ আদালতের মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ। মহামান্য বিচারপতিরা গুজরাত পুলিশকে বলেছেন, সংবিধান প্রণয়নের পরেও পঁচাত্তর বছর কেটে গেল, এ বার অন্তত পুলিশের বোঝা উচিত— সংবিধানে বলা বাক্‌স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ কী।

কবিতা পড়া বা তার রসোদ্ধার পুলিশের কাছে প্রত্যাশিত নয়। সেই কাজটাই তাদের নয়। কিন্তু শাসক ও শাসনব্যবস্থার অসঙ্গতির বিরুদ্ধে নাগরিকরা যেমন প্রতিবাদ করেন, কবিও ঠিক সেই পথে লিখতে পারেন কবিতা; দু’টিই শেষ বিচারে বাক্‌স্বাধীনতার, নিজের মতটি প্রকাশ করতে পারার পন্থা ও অধিকার, এই কথাটি পুলিশের না বোঝার মতো কিছু নয়। শাসক তা বুঝেও বুঝতে চায় না কারণ তার রাজনৈতিক স্বার্থ আছে, সেই স্বার্থসিদ্ধিতেই কাজে লাগানো হয় পুলিশকে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের বা পুলিশকে দিয়ে ধরপাকড়, খানাতল্লাশি, থানায় ডেকে জেরা, হেনস্থা এমনকি নির্যাতন— সবই ওই রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অঙ্গ। আজকের ভারতে প্রতি পদে এই বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার খর্ব হচ্ছে পুলিশের হাতে। নাগরিকের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান বিচারে সেই অধিকার লঙ্ঘনের মাত্রাটি ভিন্ন। ইমরান প্রতাপগড়ী খ্যাতনামা রাজনীতিক বলে হয়তো তাঁর তথাকথিত হেনস্থা হয়নি। কিন্তু এটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে, স্রেফ একটি কবিতার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর এবং মামলা হয়নি, বিরোধী দলের এবং সংখ্যালঘু পরিচয়ের রাজনীতিককে ঢিট করতে বিজেপি জমানায় এ এক বহুচর্চিত কৌশল।

সংবিধান ও তা প্রণয়নের পঁচাত্তর অতিক্রমের প্রসঙ্গটি তুলে ধরে শীর্ষ আদালত মনে করিয়ে দিয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলসত্য আজও ভারতে যথার্থ মর্যাদায় আচরিত হচ্ছে না। যাদের কথায় ও কাজে তা আচরিত হওয়ার কথা, শাসনব্যবস্থার সেই অঙ্গগুলিই তা লঙ্ঘন করে চলেছে। পুলিশের কাজ আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষা; তর্কের খাতিরেও যদি বলা যায় যে একটি কবিতা সেই শান্তিভঙ্গের ক্ষমতা রাখে, সেই পরিস্থিতিতেও সমাজে আইনশৃঙ্খলার স্থিতি নিশ্চিত করার কাজটি তাদের। প্রকৃত গণতন্ত্রে তা আর যা-ই হোক, কবি বা তাঁর কলমকে রুদ্ধ করে হয় না। বিচারব্যবস্থা এই কথাটি হাজারো উদাহরণে বারংবার বলে চলেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্য, শাসক ও তাঁর আজ্ঞাধীনরা শুনছেন না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gujarat Supreme Court of India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।