Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

বিরোধী নয়, বরং পরিপূরক

গরিব ঘরের শিক্ষার্থীরা আজ আত্মসচেতন হয়ে উঠছে,  অনেকেই অল্প-অল্প করে টাকা জমিয়ে ৬-৭ হাজার টাকার একটা স্মার্টফোন কিনে নেয় বা নিতে পারে।

সূর্যশেখর দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছিলেন, অনলাইনে লেখাপড়ায় ওঁর আপত্তি নেই, তবে পড়ুয়াদের আর্থ-সামাজিক দিকটা ভাবা দরকার। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সংবেদনশীল মন্তব্য। ভারতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক পড়ুয়া রয়েছে যারা দরিদ্র পরিবার থেকে আসে, কষ্ট করে লেখাপড়া করে। ডিজিটাল লেখাপড়া চালাতে গেলে দরকার অন্তত একটা স্মার্টফোন, সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ। দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে তা কি সম্ভব?

তবে, অন্য দিকে কতগুলো কথাও আছে। গরিব ঘরের শিক্ষার্থীরা আজ আত্মসচেতন হয়ে উঠছে, অনেকেই অল্প-অল্প করে টাকা জমিয়ে ৬-৭ হাজার টাকার একটা স্মার্টফোন কিনে নেয় বা নিতে পারে। রোজ গড়ে ৭-৮ টাকা খরচ করলে দৈনিক ১.৫-২ জিবি ইন্টারনেট ডেটা পাওয়া যায়। এখন দেশ জুড়ে লকডাউন, কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যেতেই হবে। তাই এই পরিস্থিতিতে ডিজিটাল পড়াশোনার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। বহু পড়ুয়ার বাড়ি থেকে অনেক দূরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়, ট্রেন, বাস, অটো বা টোটো ভরসা। এখন যাতায়াত-সংক্রান্ত খরচের ব্যাপার নেই, সে ক্ষেত্রে রোজ গড়ে ৭-৮ টাকা খরচায় ইন্টারনেট নেওয়া যেতেই পারে।

ডিজিটালে লেখাপড়ার আরও সুবিধা। ধরা যাক, কোনও পড়ুয়া বিশেষ কারণে ডিজিটাল পঠন-পাঠন (অনলাইন ইন্টারঅ্যাক্টিভ ক্লাস) চলাকালীন অনুপস্থিত ছিল। সে নিজের সুবিধামতো সংশ্লিষ্ট ভিডিয়ো রেকর্ডিং দেখে নিতে পারে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক একই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করতে আগ্রহী নাও হতে পারেন। ডিজিটাল মাধ্যমে এই পুনরাবৃত্তির সুযোগ পুরোপুরি থাকে। ডিজিটাল লেখাপড়ায় সমাজমাধ্যম বড় ভূমিকা নিতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সেখানে নিজেদের গ্রুপ তৈরি করতে পারেন, সেখানে ছবি, ভিডিয়ো-অডিয়োর মাধ্যমে পাঠ দান ও গ্রহণ প্রক্রিয়া আলাদা মাত্রা পেতে পারে। লকডাউনে অনেকেই ডিজিটাল লেনদেনে পারদর্শী হয়ে উঠছেন। উইবমো ইন্‌ক-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লকডাউনের মাত্র প্রথম দু’সপ্তাহে ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছিল প্রায় ৫০ থেকে ৭২.৫ শতাংশ পর্যন্ত। অনেক শিক্ষার্থী স্মার্টফোন থেকেই বাড়ির বিদ্যুৎ ও রান্নার গ্যাসের বিল, মোবাইল রিচার্জ, অনেক কিছুই মেটাচ্ছিল।

কঠিন পরিস্থিতি অনেক সময় নতুন রাস্তা খুলে দেয়। মানুষ যত বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হয়, তত উদ্ভাবনশীল হয়ে ওঠে। মনে হয়, দীর্ঘ লকডাউনের অভূতপূর্ব পরিস্থিতি পড়ুয়াদের কাছে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। ডিজিটাল লেখাপড়ার মহাসমুদ্রে সাহস করে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতারটা কাটতে পারলে পড়াশোনার জগতে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আরও পরিশ্রমী ও অনুসন্ধিৎসু হতে হবে। কারণ আমাদের দেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা মূলত শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের উপর নির্ভরশীল। অনলাইনে পাঠ দান করতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিশ্রম যে বেশ খানিকটা বেড়ে যাবে, সেটা স্পষ্ট। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের সামনে ছাত্রছাত্রীরা অদৃশ্য, তাই প্রথাগত পদ্ধতিতে পড়াতে অভ্যস্ত শিক্ষকদের পড়ানোর ক্ষেত্রে নিজেদের পুনরাবিষ্কার করতে হতে পারে। শিক্ষক ও পড়ুয়া উভয়ের বিরুদ্ধেই অনেক সময় ফাঁকিবাজির অভিযোগ ওঠে। ডিজিটাল পড়াশোনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, কেউই ফাঁকিবাজির আশ্রয় নিতে পারবেন না।

ডিজিটাল পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নিশ্চয়ই রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে। অনেক জায়গাতেই ইন্টারনেট পরিষেবা প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছয়নি। কিন্তু নতুন একটা পদ্ধতি— যার বহুমাত্রিক উপযোগিতা রয়েছে— একটা সময় শুরু করতেই হয়। অসুবিধা থাকবে, তবুও তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অন্তত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আন্তরিক চেষ্টাটুকু করতে হবে। লকডাউনের এই সময় ডিজিটাল লেখাপড়া চালু করার আদর্শ সময়। ভবিষ্যতে আমরা আরও কঠিন, অজানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেই পারি।

ডিজিটাল মাধ্যমে লেখাপড়া চালাতে পারলে বোঝা যাবে, এই মাধ্যমের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য তা থামিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অনিবার্য কারণবশত যে পড়ুয়ারা ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা চালাতে পারছে না, শিক্ষক-শিক্ষিকারাই তাদের উৎসাহ দিতে পারেন। এতে হয়তো ডিজিটাল বিভাজনের গর্তে পড়ে যাওয়া হতাশ শিক্ষার্থীটি ভবিষ্যতে কখনও অনলাইন পঠন-পাঠনে আগ্রহী হয়ে উঠবে। লকডাউন অনন্তকাল চলবে না। এক বার শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু হলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিশ্চয়ই সেই পড়ুয়াদের বিশেষ গুরুত্ব দেবেন, ডিজিটাল বিভাজনে যারা সমস্যায় পড়েছে। অনলাইন পড়াশোনা ক্লাসরুম-নির্ভর লেখাপড়াকে লঘু করে দেবে, এ আশঙ্কা অমূলক। ‘ক্লাসরুম টিচিং’ তার উপযোগিতা হারাবে বলে মনে হয় না। বরং এই কঠিন পরিস্থিতিতে যদি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পাঠ দান ও গ্রহণে আন্তরিক হয়ে ওঠেন, তা হলে ডিজিটাল লেখাপড়াও শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠনের এক আদর্শ পরিপূরক হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy