—ফাইল চিত্র।
রাজ্যে প্রথম কোভিড আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলিবার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বলিয়াছিলেন, ইহা বাণিজ্যের সময় নহে, সহায়তা করিবার সময়। প্রায় তিন মাস কাটিয়া গিয়াছে, রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা পনেরো হাজার ছাড়াইয়াছে। জুনের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী ফের মনে করাইলেন, কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা করিতে অত্যধিক টাকা দাবি করা অনুচিত। স্বাস্থ্য সচিব আরও স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন, পিপিই প্রভৃতি সুরক্ষা সরঞ্জামের অতিরিক্ত খরচ রোগীদের উপর চাপাইতেছে বহু হাসপাতাল। তাহাতে চিকিৎসার ব্যয় সাধ্যাতীত হইয়া পড়িতেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার খরচের সীমা বাঁধে নাই; দিল্লি, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলি বাঁধিয়া দিয়াছে। রাজস্থান সরকার ভেন্টিলেটর-সহ আইসিইউ শয্যার খরচ দৈনিক চার হাজার টাকা সর্বাধিক মূল্য ধার্য করিয়াছে। দিল্লিতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে কোভিড ওয়ার্ডে শয্যার মূল্য প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়াছে। হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণের ভারপ্রাপ্ত কমিশন অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ পাঠাইয়াছে হাসপাতালগুলিকে। তাহাতে কর্তৃপক্ষ কতটা সংযত হইবে, সময়ই বলিবে। ইহার পূর্বেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করিবার অভিযোগে শোরগোল পড়িয়াছিল, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক ডাকিয়াছিলেন এবং কমিশন বানাইয়াছিলেন। শেষরক্ষা হইল কই?
চিকিৎসা নাগালের বাহিরে গেলে কেবল উপভোক্তার অধিকার লঙ্ঘন হয়, এমন নহে। চিকিৎসার অধিকার এবং জীবনের অধিকারও বিপন্ন হয়। তাই সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কোভিড-১৯ মহামারি আকার ধারণ করিতে সেই প্রয়োজন অনেক রাজ্যেই অনুভূত হইয়াছে। এই দেশে হাসপাতাল শয্যার একটি বড় অংশ বেসরকারি। আইসিইউ কক্ষ, ভেন্টিলেটর যন্ত্র প্রভৃতির অধিকাংশই বেসরকারি। অতএব বেসরকারি হাসপাতালগুলি দরজা বন্ধ করিলে দেশবাসীর চিকিৎসা পাইবার সম্ভাবনা কমিবে, মৃত্যুহার বাড়িবে। এমন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বেসরকারি ক্ষেত্রের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা অপেক্ষা নাগরিকের প্রাণ রক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সরকার হস্তক্ষেপ করিবে না কেন? তিক্ত সত্য ইহাই যে, মহামারির মোকাবিলায় যেমন তৎপরতা ও দায়বদ্ধতা প্রত্যাশিত, বেসরকারি চিকিৎসাক্ষেত্র তাহা দেখায় নাই।
ভারতে প্রায় সর্বত্র বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ফিরাইয়াছে, সামান্য সংখ্যায় ভর্তি করিয়াছে, অত্যধিক চড়া দরে চিকিৎসা বিক্রয় করিয়াছে। পরিকাঠামোর অভাব, চিকিৎসকের অভাব দর্শাইয়া বহু হাসপাতাল অন্যান্য রোগী ভর্তি, এমনকি বহির্বিভাগের পরিষেবাও প্রায় বন্ধ রাখিয়াছে। তাহাতে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে চাপ বাড়িয়াছে। এই পরিস্থিতিতে সুপরামর্শ দানই যথেষ্ট কি না, সেই প্রশ্ন থাকিয়া যায়। বিশেষত কোভিড আক্রান্তকে না ফিরাইবার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দাবি করিতেছে। জাতীয় বিপর্যয় আইনের অধীনে রাজ্য সরকার বেসরকারি হাসপাতালের শয্যাও গ্রহণ করিতে পারে, তাহার সম্পদ ব্যবহার করিতে পারে। কেরল, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্য তেমনই করিয়াছে। এই রাজ্যেও কোভিড রোগী বাড়িতেছে, তাই চিকিৎসাও বাড়াইতে হইবে। যথাশীঘ্র সম্ভব তাহার সাধনই কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy