প্রণব বর্ধন। —ফাইল চিত্র।
ঘোর অর্থনৈতিক সঙ্কটের আবহেও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক নিরাপত্তাহীনতার জুজু দেশে দেশে দক্ষিণপন্থীদের হাত শক্ত করছে বলে প্রবীণ অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন তাঁর মত প্রকাশ করলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নেতাজি ভবনে শিশিরকুমার বসু স্মারক বক্তৃতায় এই মত উঠে আসে। ২০০৪ সালেও এই বার্ষিক বক্তৃতার আসরে ‘বিশ্বায়ন ও সামাজিক ন্যায়’ নিয়ে বলেন প্রণব। এ বার ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে এ বক্তৃতা খানিকটা সেই ধারাবাহিকতাই বহন করছিল।
যেখানে তিনি থাকেন সেই আমেরিকা এবং তাঁর জন্মভূমি ভারতের কথাই প্রধানত বলেছেন বার্কলেতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক প্রণব। ‘বিশ্ব রাজনীতির ডাইনে হেলার প্রবণতা’-শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি গোড়াতেই খোলসা করেন, বিশ্ব রাজনীতি বলতে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথাই এ ক্ষেত্রে বলছেন। তবে প্রণবের মতে, ঈশ্বরপ্রতিম দক্ষিণপন্থী নেতাদের প্রভাবের সর্বগ্রাসিতায় ট্রাম্পের আমেরিকাকেও পিছনে ফেলছে ভারত। তাঁর কথায়, “অল্প শিক্ষিত, গ্রামীণ, প্রবীণেরাই প্রধানত ট্রাম্পের সমর্থক। তুরস্কেও আঙ্কারার মতো শহরে এর্দোয়ান কম ভোট পান। কিন্তু দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুও মোদীকে ভোট দেয়।” নেতাজি রিসার্চ বুরোর চেয়ারপার্সন, ইতিহাসবিদ সুগত বসু অবশ্য বলেন, “গাজার গণহত্যা ইত্যাদিতে বাইডেনের প্রতি আমেরিকায় উদারবাদীদের মোহভঙ্গও ট্রাম্পের উত্থানের কারণ।” প্রণবের মতে, যে কোনও সেন্ট্রিস্ট বা ভারসাম্যবাদী রাজনৈতিক শক্তিই দেশের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ ধারণাটি সর্বত্র গেঁড়ে বসছে।
ভারতের পরিস্থিতি বোঝাতে এ দেশে চার ঘণ্টার নোটিসে দুনিয়ার ‘নিষ্ঠুরতম লকডাউনের’ একটি ঘটনা মেলে ধরেন প্রণব। হণ্টনরত এক হতদরিদ্র শ্রমিক মোদীর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের কথা বলছেন। কারণ, মোদী দেশকে মহান করছেন। প্রণবের কথায়, “এক ধরনের কাল্পনিক গৌরবের বয়ান প্রচারে মোদী সফল। কে বলবে, বিশ্বের বড় অংশের অপুষ্ট শিশুই ভারতের।” প্রণব বলেন, “মুসলিম ছাড়া দলিত, আদিবাসী, ওবিসি সবার মধ্যেই বিজেপি, সঙ্ঘের প্রভাব বাড়ছে। বামেরা শ্রেণি সংগ্রামের কথা বলে। কিন্তু জনজাতিদের দেবদেবীকেও আরএসএস হিন্দুদের তাঁবুতে এনে ফেলল। এর কৃতিত্ব দিতেই হবে!”
বিশ্বায়ন পরবর্তী জমানায় ট্রেড ইউনিয়নের শক্তি হ্রাসে শ্রমিক ঐক্যের ভিত্তিভূমি বিপন্ন হওয়ার কথাও বলেন প্রণব। এর ফলে শ্রমিক শ্রেণির সাংস্কৃতিক ঐক্যও পলকা হয়েছে। বামপন্থীদের কিছু গরিববন্ধু নীতি দক্ষিণপন্থীরাও আত্মসাৎ করেছে। আবার কর্পোরেট নির্ভর রাজনৈতিক দলগুলি ধনী তথা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির নানা সুবিধা করতে বদ্ধপরিকর। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় তার জবাব খোঁজেন প্রণব। তাঁর মতে, “কর্পোরেট প্রভাব কমাতে সরকারি খরচে ভোট পরিচালনার কথা ভারতের ভাবা উচিত। সংগঠিত, অসংগঠিত সব শ্রমিকের জন্য অভিন্ন স্বাস্থ্য নীতি বা শিশু পরিচর্যা নীতির মতো দাবিতে বামেদের লড়াই করা প্রত্যাশিত।” বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের প্রতি মোহভঙ্গ নিয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত প্রণবের 'আ ওয়র্লড অব ইনসিকিউরিটি' বইটির প্রসঙ্গ আসে থেকে থেকেই।
তবে ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধ বা লোকগান, সুফিবাদের সমন্বয়ী সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে আস্থা রাখেন প্রণব। তাঁর কথায়, “নেহরু, গান্ধীরা দেশভাগের বিষ কমাতে পেরেছিলেন। বিজেপি, আরএসএস জিন্নার পথেই হাঁটছে।” শিশিরের সহায়তায় ১৯৪১এর ১৬ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের ঐতিহাসিক মহানিষ্ক্রমণের সন্ধ্যার ৮৪ বছর বাদে এ বক্তৃতা শুনল নেতাজি ভবন। নেতাজি রিসার্চ বুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসু শিশিরের ‘শরৎ ও সুভাষ’ বইটি থেকে সেদিনের কথা পড়ে শোনান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy