জেলায় জেলায় যথেষ্ট কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করা হইলে, এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ভাবে কোয়রান্টিনে রাখা হইলে রোগ তুলনায় কম ছড়াইত।
তিন মাস অতিক্রান্ত, কোভিড-১৯’এর দাপট এখনও অব্যাহত। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িতেছে, মৃতের সংখ্যাও। একটি কথা স্পষ্টতর হইতেছে— কোন রাজ্যে পরিস্থিতি কেমন, তাহা বহুলাংশে সেই রাজ্যের অবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাহার এক দিকে যেমন প্রশাসনিক কুশলতা, অন্য দিকে আছে গণস্বাস্থ্যব্যবস্থার হাল; এক দিকে নাগরিক সচেতনতা, অন্য দিকে রাজ্যের শাসকদের বিচক্ষণতা। অতিমারির বিরুদ্ধে সাফল্যের নিরিখে কেরল অতি ব্যতিক্রমী, সে রাজ্যের উদাহরণ লইয়া আলোচনা চলিতেছে বিশ্বময়। ওড়িশার ন্যায় কয়েকটি রাজ্যও অতিমারির মোকাবিলায় মোটের উপর সফল। আবার, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ুর অবস্থা ভয়াবহ। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কেমন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি বড় সমালোচকও দাবি করিবেন না যে রাজ্যের অবস্থা মহারাষ্ট্র বা দিল্লির ন্যায় খারাপ। আবার তেমনই তাঁহার একনিষ্ঠ সমর্থকদের পক্ষেও দাবি করা কঠিন যে অতিমারি সামলাইতে পশ্চিমবঙ্গ সম্পূর্ণ সফল। হরেক মানব-উন্নয়ন সূচকের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা যেমন মাঝামাঝি, কোভিড-১৯ সামলাইবার ক্ষেত্রেও রাজ্য সেই মাঝামাঝি অবস্থানেই আছে।
রাজ্যের প্রধানতম খামতি থাকিয়া গিয়াছে পরিকল্পনায়। তাহার একটি উদাহরণ পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা। ইহা সত্য যে কেন্দ্রীয় সরকার বা রেল দফতর রাজ্যের মতামতের তোয়াক্কা না করিয়াই শ্রমিকদের ফেরত পাঠাইয়া দিয়াছে। কিন্তু, সেই বাস্তবকে মানিয়াই রাজ্যের তৎপর হওয়া বিধেয় ছিল। জেলায় জেলায় যথেষ্ট কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করা হইলে, এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ভাবে কোয়রান্টিনে রাখা হইলে রোগ তুলনায় কম ছড়াইত। সংবাদে প্রকাশ, আন্তর্জাতিক বিমানে কলিকাতায় ফিরিয়া যাত্রীরা কোয়রান্টিনে না থাকিয়া বাড়ি চলিয়া গিয়াছেন। এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কোন মূল্য রাজ্যকে চুকাইতে হইবে, ভাবিলেও আতঙ্ক হয়। নাগরিক যথেচ্ছাচার করিলে প্রশাসনকে কঠোর হইতে হইবে, গত্যন্তর নাই। আনলক পর্বে যখন অফিস-কাছারির কাজ আরম্ভ হইতেছে, তখন গণপরিবহণের ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। রাস্তায় যথেষ্ট বাস নাই, সামাজিক দূরত্ববিধি শিকায় তুলিয়া যাত্রীদের যাতায়াত করিতে হইতেছে। মেট্রো রেল চালু করিবার যে প্রস্তাব রাজ্য সরকার করিয়াছিল, তাহাও যথেষ্ট বিবেচনাপ্রসূত কি? বাসে যদি বা যাত্রী-সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়, মেট্রোয় তাহার উপায় কী? না, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গই নহে, কার্যত দেশের সর্বত্রই বিবেচনার এই অভাব দেখা যাইতেছে। কিন্তু, অন্যরা পারিতেছে না বলিয়া এই রাজ্যের না পারার গুরুত্ব কমিয়া যায় না।
অব্যবস্থার আর একটি উদাহরণ চিকিৎসা ক্ষেত্র। অতিমারির প্রকোপ বাড়িলে যে হাসপাতালগুলির উপর চাপ বাড়িবে, এবং সেই চাপ সহ্য করিবার ক্ষমতা রাজ্যের হাসপাতালগুলির নাই, এই কথাটি প্রশাসনের অজানা থাকিবার কথা নহে। কাজেই, কী ভাবে এই বাড়তি চাপ সামাল দেওয়া যায়, অস্থায়ী হাসপাতাল গড়িয়া তোলা যায় কি না— কথাগুলি ভাবা জরুরি ছিল। প্রশাসন যথেষ্ট ভাবিয়াছে, তেমন কোনও প্রমাণ এখনও নাই। ফলে, চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের নিষ্ঠাময় পারদর্শিতা সত্ত্বেও হাসপাতালের ডামাডোল চলিতেছে। কোভিড-১৯ ব্যতীত অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা মিলিতেছে না বলিয়া অভিযোগ আসিতেছে। কোভিড-১৯’আক্রান্তরাও বহু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হইতে পারিতেছেন না। বেসরকারি হাসপাতালগুলিও বিবিধ অনিয়ম করিতেছে। রাজ্য সরকারের তরফে চিকিৎসার খরচ বাঁধিয়া দেওয়াই যথেষ্ট নহে। তিন মাস কাটিয়া যাওয়ার পরও কেন স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এত রকম হোঁচট খাইবার অবস্থা থাকিবে, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান— এবং সমাধান— জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy