Advertisement
১৩ জানুয়ারি ২০২৫
Attention-deficit hyperactivity disorder

সচেতনতা জরুরি

ছোটদের মনঃসংযোগের সমস্যা, সর্বক্ষণ অকারণ অস্থিরতার মতো লক্ষণ এই রোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলে মনে করা হয়। এডিএইচডি নেহাতই অপরিচিত অসুখ নয়।

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৩৩
Share: Save:

নাম, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজ়অর্ডার। সংক্ষেপে ‘এডিএইচডি’। ছোটদের মনঃসংযোগের সমস্যা, সর্বক্ষণ অকারণ অস্থিরতার মতো লক্ষণ এই রোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলে মনে করা হয়। এডিএইচডি নেহাতই অপরিচিত অসুখ নয়। প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিও যথেষ্ট কার্যকর। কিন্তু উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এর সংখ্যাবৃদ্ধি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানাচ্ছেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই লক্ষণগুলি পূর্বের তুলনায় অধিক প্রকাশ পাচ্ছে। এবং সমস্যাটি প্রাক্-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যথেষ্ট পরিমাণে চোখে পড়ছে। সেই কারণে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শ্রেণিকক্ষেই সহায়ক সরঞ্জাম এবং শিক্ষাকর্মী নিযুক্ত করে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছে।

এই উদ্যোগ আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচায়ক। কিন্তু তা এখনও যথেষ্ট কম, এবং মূলত শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি এবং সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে এডিএইচডি আক্রান্ত শিশু স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। পঠনপাঠনে বাধাও কাটিয়ে উঠতে পারে। অথচ, দীর্ঘ দিন পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে সামান্য অ-স্বাভাবিকতা লক্ষ করা গেলে অথবা সে সাধারণ পঠনপাঠনে অপারগ হলে অনেক সময়ই বিদ্যালয় থেকে অভিভাবকদের উপর বিশেষ স্কুলে পাঠানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। এই প্রবণতা শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯-এর পরিপন্থী, যেখানে ভারতের সমস্ত শিশু, এমনকি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদেরও শিক্ষার অধিকার সুরক্ষিত করার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতি, ২০২০-তেও শিক্ষকদের স্বল্পমেয়াদি কোর্সের কথা বলা হয়েছে, যাতে তাঁরা প্রচলিত পরিকাঠামোর মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন শিশুদের পড়াতে সক্ষম হন। তাদের চাহিদা এবং প্রয়োজন মাথায় রেখে সহায়ক সরঞ্জাম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু শুধুমাত্র বিদ্যালয়ে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিই যথেষ্ট নয়, বাড়ির পরিবেশটিকেও পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন। সত্য যে, সচেতনতা অনেক বেড়েছে বলেই পূর্বের চেয়ে লক্ষণগুলি অনেক দ্রুত এবং সহজে চিহ্নিত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এখনও অনেক অভিভাবক সন্তানের অসুবিধার প্রসঙ্গটিকে প্রাথমিক ভাবে অস্বীকার করেন। এডিএইচডি তাঁদের কাছে ‘ছোটদের দুষ্টুমি’ ভিন্ন অন্য কিছু নয়। যত ক্ষণে লক্ষণগুলি মান্যতা পায়, তত দিনে শিশুটির পঠনপাঠনে যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, এডিএইচডি-র মতো লক্ষণ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে শিশুদের স্ক্রিনটাইম এবং এডিএইচডি-র মধ্যে গভীর সংযোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। নিঃসন্দেহে শিশু মোবাইল, ল্যাপটপে বুঁদ হয়ে থাকলে তার বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়। সামাজিক মেলামেশায় ব্যাঘাত ঘটে, তার ভাবনার জগৎ, কল্পনাশক্তির ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। ভিডিয়ো গেমস আসক্তি তার মধ্যে জেদ, হিংসাত্মক মনোভাব বৃদ্ধি করতে পারে। এই কুচক্র থেকে শৈশবকে মুক্ত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয় থেকে অভিভাবক— একত্রে কাজ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে শিশুদের মধ্যে এডিএইচডি-র সমস্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে তা মহামারির চেয়ে কিছু কম দুর্ভাবনার নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

ADHD Children treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy