Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP

বিজয়রথ

সঙ্গত পাল্টা প্রশ্ন উঠিয়াছে, যে যে রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতাসীন, সেই সব রাজ্যেও কি তাহা হইলে ইভিএম কেলেঙ্কারির ফলেই তাঁহারা কুর্সি দখল করিতে পারিয়াছেন?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০১:৪৬
Share: Save:

দীপাবলির আগেই রোশনাই। বিহারের নির্বাচনের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন উপনির্বাচনে বিজেপির বিরাট বিজয়। এগারোটি রাজ্যে যতগুলি আসনে ভোট হইল, তাহার সিংহভাগই বিজেপির দখলে। কিন্তু ইহাই একমাত্র কথা নহে— যে যে রাজ্যে বিজেপি সরকার নাই সেখানেও তাহাদের বাজিমাত। আলাদা করিয়া বলিতে হয় মধ্যপ্রদেশের কথা, যেখানে বিজেপির হঠাৎ-পাওয়া ক্ষমতা শক্তপোক্ত ভিত পাইল এই বারের নির্বাচনে। গুজরাতেও কংগ্রেসের থেকে আটটি আসনই যে ভাবে বিজেপি ছিনাইয়া লইয়াছে, তাহার মধ্যে কেহ আগামী পালাবদলের ইঙ্গিত দেখিতে পারেন।

কর্নাটক, ওড়িশা, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, হরিয়ানা, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা— সর্বত্রই জয় আসিয়াছে নিষ্কণ্টক। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিহারের চোখ-ধাঁধানো সাফল্য। সে রাজ্যে বিজেপি যুগ শুরু হইল বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। দেশের শাসক স্থানে থাকিয়া, অতিমারি-কালীন দুঃসময় ও যাবতীয় দুর্ভোগের মধ্যে স্থিতাবস্থা-বিরোধিতার আশঙ্কা দূর করিয়া যে সাফল্য বিজেপি পাইল, তাহাকে কোনও মতেই ছোট করিয়া দেখিবার প্রশ্ন নাই। বিজেপির এই বিরাট সাফল্যের পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্বও কম করিয়া দেখিবার প্রশ্ন নাই। মোদী জিতিলেন, গোটা দেশেই জিতিলেন। ২০১৯ সালের মতোই, ২০২০ সালও তাঁহার।

পৃথক উল্লেখ দরকার উত্তরপ্রদেশের। এই রাজ্যটি গত এক বৎসরে বিভিন্ন কারণে সংবাদের কেন্দ্রে, কিংবা বলা ভাল, দুঃসংবাদের কেন্দ্রে থাকিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে একের পর এক অপশাসনের অভিযোগ, এমনকি তাঁহার পদত্যাগের দাবিও শোনা গিয়াছে। রাজ্যের দলিত জনতা ক্ষুব্ধ বোধ করিয়াছে দলিতবিরোধী কার্যক্রমে শাসক বিজেপির নিস্পৃহতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়া। তবু এই বারের উপনির্বাচনে সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টিতে জয়ী হইয়াছেন বিজেপি প্রার্থীরা। অবশ্য বলিতেই হয়, বিজেপির জয়ের পিছনে সেখানে এক অলক্ষ্য নায়ক, কিংবা নায়িকা, বিদ্যমান— বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। বেশ কিছু কেন্দ্রে তিনি প্রার্থী না দিলে দলিত ভোট ভাগাভাগি হইত না, বিজেপির জয়ের পথও কুসুমাস্তীর্ণ হইত না। অন্যান্য বিরোধী নেতানেত্রীরও নিষ্ক্রিয়তার একটি বড় ভূমিকা আছে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর উপস্থিতি হাথরস কাণ্ডে যথেষ্ট লক্ষিত হইলেও ভোটের আগে তাঁহাদের দেখা গেল না।

কংগ্রেসের কথা, প্রসঙ্গত, এই সূত্রে আলাদা করিয়া বলা দরকার। বিজেপির দেশব্যাপী উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেসের পতনের সংযোগ লক্ষ করিবার মতো। কংগ্রেসকে এখন জাতীয় দল বলাই মুশকিল। প্রতিটি রাজ্যে যে ভাবে কংগ্রেস অনুল্লেখযোগ্য শক্তি হইয়া পড়িতেছে, তাহাতে তাহার আঞ্চলিক সত্তাও গভীর প্রশ্নের মুখে। কমল নাথ হইতে শুরু করিয়া রাহুল গাঁধী, কেহই পরিস্থিতির সহিত যুঝিবার মতো ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দেন নাই। ২৩০ সদস্যবিশিষ্ট রাজ্যসভাতেও বিজেপি ১২৪ আসন পাইয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ। মাঝখান হইতে রাহুল গাঁধী ভোটের আগে ইভিএম কারচুপির কথা তুলিয়া ছেলেমানুষি দুর্বলতা দেখাইয়াছেন, হারিবার আগেই হারিয়া বসিয়াছেন।

সঙ্গত পাল্টা প্রশ্ন উঠিয়াছে, যে যে রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতাসীন, সেই সব রাজ্যেও কি তাহা হইলে ইভিএম কেলেঙ্কারির ফলেই তাঁহারা কুর্সি দখল করিতে পারিয়াছেন? বিজেপির এই দেশ-জোড়া সাফল্য হইতে কেবল কংগ্রেস নহে, দেশের অন্যান্য বিরোধী দলেরও কিছু শিক্ষা লইবার আছে। নিজেদের রাজনীতির অন্তহীন দুর্বলতার দিকে দৃষ্টি ফিরাইয়া পুনর্ভাবনার প্রয়োজন আছে। নেতৃত্বের গুরুত্ব বুঝিবার প্রয়োজন আছে। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ বড় মাপের রাজনীতিক সন্দেহ নাই, কিন্তু তাঁহাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা রাজনৈতিক যোগ্যতায় বিশেষ ভাবেই ছোট— এই বাস্তবও অনস্বীকার্য।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Election Victory Diwali Editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy