Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলার মুখ

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মতাদর্শের উত্তরসূরি শেখ হাসিনার উপর্যুপরি তিনটি শাসনকালে একুশ শতকের বাংলাদেশ বিবিধ প্রকার উত্তরণের পথে পা বাড়াইয়াছে।

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

আজ বাংলাদেশে বিজয় দিবস, সমগ্র দেশ পরিকীর্ণ হইবে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে উৎসবমুখর জনতার সমাবেশে। এই বৎসরের উদ্‌যাপন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার শেখ মুজিবুর রহমানের (১৯২০-৭৫) জন্মশতবর্ষেরও সূচনা হইয়াছে এই বৎসরেই। দেশভাগহেতু বাংলাদেশ এখন পৃথক ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, তথাপি এই প্রতিবেশী দেশটি লইয়া পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদেরও আগ্রহ ও উত্তেজনার অন্ত নাই। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আপাতত রাষ্ট্রিক ভাবে পৃথক দুই ভূখণ্ডের সেতুবন্ধ, বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরও কম অবদান নাই। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখিয়াছিলেন, এক জন বাঙালি হিসাবে যাহা কিছু বাঙালিদের সহিত সম্পর্কিত, তাহাই তাঁহাকে গভীর ভাবে ভাবায়। সেই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস, বাংলা ও বাঙালির প্রতি অক্ষয় ভালবাসা। এই ভালবাসাই তাঁহার রাজনীতি ও অস্তিত্বকে অর্থবহ করিয়া তুলিয়াছিল। বিজয় দিবসের উৎসব তাই এক দিকে যেমন এক সুদক্ষ দেশনেতার সুযোগ্য নেতৃত্বের স্মরণ, তেমনই বিপুল সংখ্যক বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের মূল্যে অর্জিত স্বাধিকার ও গণতন্ত্রেরও উদ্‌যাপন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মতাদর্শের উত্তরসূরি শেখ হাসিনার উপর্যুপরি তিনটি শাসনকালে একুশ শতকের বাংলাদেশ বিবিধ প্রকার উত্তরণের পথে পা বাড়াইয়াছে। আর্থিক বৃদ্ধির দ্রুততার নিরিখে এই বৎসরের প্রথমার্ধে তাহার অর্থনীতি ছিল সমগ্র বিশ্বে সপ্তম, এই মুহূর্তেও তাহা বিশ্বের দ্রুততম প্রসরমাণ অর্থনীতির অধিকারী দেশগুলির অন্যতম। কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পাশাপাশি সঙ্গী হইয়াছে বস্ত্র, মৎস্য, পাটজাত ও চর্মজ পণ্যের ন্যায় রফতানিযোগ্য শিল্পবস্তুর প্রভূত উৎপাদন, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার আগাইয়া দিয়াছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর মতো সরকারি প্রকল্পকে। ঢাকার রাজপথে চোখে পড়িতেছে ‘মুজিব বর্ষ’ পালনের অঙ্গীকার হিসাবে সরকারের প্রতিশ্রুতি— দেশব্যাপী জনগণের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ, বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়া দক্ষ জনশক্তি তৈয়ারি, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদিগকে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে উৎসাহদান ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষায় তৎপর বিচারব্যবস্থা যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ডবিধানে দার্ঢ্যের পরিচয় দিয়াছে। দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিটি অক্ষুণ্ণ ও গৌরবময় রাখিবার প্রচেষ্টাও সফল, স্বীকার করিতে হইবে। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গ লইয়া একদা শান্তিতে নোবেলজয়ী মায়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান যে ক্ষণে আন্তর্জাতিক বিচারমঞ্চে ব্যতিব্যস্ত ও বিব্রত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তখন মানবাধিকার রক্ষার মানবিক মুখটি দেখাইয়া বৈশ্বিক অভিবাদন কুড়াইয়াছেন। ক্রীড়া ক্ষেত্রে, বিশেষত ক্রিকেটে দেখা গিয়াছে অভূতপূর্ব উন্নতি, যাহা জয়ানুভব দিয়াছে সমগ্র বাঙালি জাতিকেই।

প্রাপ্তির ঝুলিটি কি তবে পূর্ণ? না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রতীক্ষারত দেশটির মর্মমূলে উদারপন্থা ও ধর্মের, শিক্ষা ও সংস্কারের দড়ি-টানাটানি এখনও প্রত্যহ অব্যাহত। মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রশ্নগুলিও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে স্মরণে রাখিতে হইবে, বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রাসন ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়াছিলেন যখন, সেই যুদ্ধের একটি বৃহত্তর ব্যঞ্জনা ছিল। সেই আহ্বান ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমান উদাত্ত ছিল। শেখ হাসিনার সরকার ধর্মীয় সন্ত্রাস রোধে যত কঠোরতা, সম্প্রীতি রক্ষায় যত তৎপরতা দেখাইবে, বঙ্গবন্ধুর কৃতিকে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা দেওয়া ততই সম্ভব হইবে। তাহার মধ্যেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গৌরব নিহিত। বৃহত্তর বাঙালিও স্বভাবতই তাহার আত্মিক অংশীদার।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Victory Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy