—নিজস্ব চিত্র।
পুরু কাচের আড়ালে রিভলভিং প্লেটে নরম গতিতে ঘুরছে দ্বিচক্রযান। রাস্তা দিয়ে ছুন্ত গাড়ির আলো পড়ে ঠিকরে উঠছে তার রূপ। শো-রুমের ম্যানেজার ঈষৎ গর্ব নিয়ে বলছেন, ‘‘এক বার ছুঁয়ে দেখুন কেমন মসৃণ!’’
কাচের ওপারে ভিড় করা মুখ উঠতি বয়স, বাইক দেখছে। ছুঁতে পারার প্রবল ইচ্ছে থমকে আছে শো-রুমের বাইরে। ভিতরে পা রাখলে দাম শুনে মাথা চুলকে বোতল থেকে জল গলায় ঢেলে ভাঙা মনে বেরিয়ে আসছে তারা!
৮০ থেকে দেড় লাখের সেই সব বাহারি নামের ব্র্যান্ডেড বাইক থেকে মুখ ফিরিয়ে রাস্তায নামতেই চুপিসারে পিছনে এসে দাঁড়াচ্ছে ছায়া— ‘‘নেবেন নাকি, একেবারে ব্র্যান্ড নিউ লুক, শুধু টাকার টানাটানিতে ছেড়ে দিচ্ছে হাফ দামে, রাতের দিকে আসুন।’’
লোভটা সামলাতে পারলে আপনার লাভ না হলে বিপত্তি! আসুন ব্যাপারটা খোলসা করি।
সেকেন্ড হ্যান্ড বা হাত বদল হওয়া মোটরবাইকের এমন খোলামেলা কারবার এখন আপামর মুর্শিদাবাদ জুড়ে। সেই তালিকায় উপর দিকেই আছে ফরাক্কা। আছে গায়ে গা লাগানো লাগোয়া শমসেরগঞ্জ-আহিরণ।
এই দুই ব্লকের যে কোনও গ্রামে বেশির ভাগ বাড়িতেই বাইকের ছড়াছড়ি।সে তা পেশায় তিনি বিড়ি শ্রমিকই হোন বা রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানী। বাইকে নম্বর রয়েছে, রয়েছে কাগজপত্রও। কিন্তু তা যে আসল তা বোঝার উপায় কি!
সন্দেহটা দানা বেঁধেছিল থানায় আসা নতুন ওসি’র। আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই তবু ফরাক্কার গ্রামে গ্রামে এমন বাহারি বাইকের রমরমা কেন? খোঁজ নিতে দু’পা এগোতেই ফর্সা হল অন্ধকার।
জাল টাকা ও আগ্নেয়াস্ত্র এমনকি মাদকের কারবারে বহুবার উঠে এসেছে ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জের নাম। কিন্তু বাইকের চোরা কারবারও যে ক্রমশও জাঁকিয়ে বসেছে সেখানে পুলিশের তেমন ধারণা ছিল না।
ফরাক্কার একদিকে কালিয়াচক, অন্য দিকে ঝাড়খণ্ড। আর পূর্বে বৈষ্ণবনগরের বিস্তীর্ণ চর এলাকার বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম। এই ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগে চুরি যাওয়া বাইক এসে ভিড়ছে ফরাক্কার গ্রামাঞ্চলে।
গত জুলাই মাসের সন্ধ্যে। টিপ টিপ বৃষ্টি। এনটিপিসি মোড়ে বাইক নিয়ে এক যুবককে ইতস্ততঃ ঘুরতে দেখেই কেমন যেন সন্দেহ হয় পুলিশের। সন্দেহের বশেই জিজ্ঞাসাবাদ। আর তাতেই একেবারে কিস্তিমাত। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। জানা যায়, বাড়ি ঝাড়খণ্ডের রাজমহলের তাহিরতোলা গ্রাম। নাম তানবীর শেখ। শুরু হয় খোঁজখবর। আর তাতেই ঝাড়খণ্ড পুলিশের সৌজন্যে বেরিয়ে আসে তানবিরের ঠিকুজি কুষ্ঠি।
পুলিশের দাবি, ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত বাইক চোর হিসেবে পরিচিত তানবীর। আরও বহু কুকর্মে জড়িত হয়ে জেলও খেটেছে সে বহু বার। আশপাশ থেকে চোরাই বাইক এনে জলের দামে বিক্রি করার খোঁজেই ঘনঘন ফরাক্কার গ্রামে গঞ্জে যাতায়াত তার। আনাগোনা যখন ফরাক্কায় তখন সাকরেদ তো কেউ আছেই। কিন্তু মুখ খোলে কই?
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy