শুশ্রূষা: অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে দেখছেন চিকিৎসকরা। নিজস্ব চিত্র
বছর পঞ্চাশের লক্ষ্মণ মুর্মুকে পরীক্ষা করে চমকে গিয়েছিলেন শল্যচিকিৎসক। প্রায় চার বছর ধরে তলপেটের দু’দিকে হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে দিনমজুরির কাজ করছিলেন গোপীবল্লভপুরের ভোঁড়োডাহি গ্রামের ওই প্রৌঢ়। তলপেটের ভিতরে মাংসপেশি ঠেলে দু’দিকে অন্ত্র বেরিয়ে গিয়ে ফুলে উঠেছিল। যন্ত্রণা নিয়েই দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে ভীষণই কষ্ট পাচ্ছিলেন ওই প্রৌঢ়। অথচ কোনও দিন সরকারি হাসপাতালে যাননি।
দিন কয়েক আগে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের আউটডোরে সার্জারি বিভাগে দেখাতে গিয়েছিলেন লক্ষ্মণবাবু। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ল তাঁর তলপেটের দু’দিকেই হার্নিয়া হয়েছে। অবিলম্বে অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন। অবশেষে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে গত মঙ্গলবার গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে লক্ষ্মণবাবুর সফল অস্ত্রোপচার হল। হাসপাতালের একমাত্র শল্য চিকিৎসক সুজয় পাল প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করেন। সুজয়বাবুকে অস্ত্রোপচারে সাহায্য করেন হাসপাতালের সুপার শুভঙ্কর কয়াল, অ্যানাস্থেটিস্ট শিবকৃষ্ণ চক্রবর্তী এবং তিনজন নার্স সোনালি হুতাইত, মমতা দাস ও মোনালিসা বেরা।
মাস খানেক হল গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে সার্জারি বিভাগ চালু হয়েছে। কিন্তু একজন মাত্র শল্যচিকিৎসক সুজয় পালকেই একা সার্জারি বিভাগ সামলাতে হচ্ছে।
ওডিশা লাগোয়া গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক এলাকায় আগে একটু গুরুতর অসুখবিসুখ হলেই এলাকাবাসী বারিপদা হাসপাতালে ছুটতেন। গত বছর গোপীবল্লভপুরে সুপার স্পেশ্যালিটি চালু হওয়ার পরেও উপযুক্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও সরঞ্জামের অভাবে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। রোগীদের ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটিতে রেফার করে দিতে বাধ্য হচ্ছিলেন কর্তৃপক্ষ। গত সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মা হাসপাতাল পরিদর্শন করে যাওয়ার পরে বিভিন্ন বিভাগে ৬ জন চিকিৎসককে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে হাসপাতালের সার্জারি ও ইএনটি বিভাগে বেশ কিছু সরঞ্জাম দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঝাড়গ্রাম জেলা সফরের দিনেই গত ১১ অক্টোবর এই হাসপাতালে এক ব্যক্তির পিঠের টিউমার অপারেশন করা হয়। এর পর গত এক মাসে বেশ কিছু অপারেশন হয়েছে।
শল্য চিকিৎসক সুজয় পাল জানালেন, তলপেটের দু’দিকেই হার্নিয়া সচরাচর দেখা যায় না। এই ধরনের অপারেশনকে ডাক্তারি পরিভাষায় বাইল্যাটারাল মেশ হার্নিওপ্ল্যাস্টি বলা হয়। অস্ত্রোপচার করে ওই রোগীর তলপেটের ভিতরে দু’টি বিশেষ ধরনের জালি (মেশ) লাগানো হয়েছে। যাতে আর এমন সমস্যা না হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই লক্ষ্মণবাবুকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। মাস ছ’য়েক পরে উনি স্বাভাবিক কাজকর্ম কাজকর্ম করতে পারবেন।
গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার শুভঙ্কর কয়াল বলেন, “জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য এই হাসপাতাল। আমরা সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আগামী দিনে গল ব্লাডার সহ জটিল অস্ত্রোপচারগুলি করার জন্য উদ্যোগী হচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy