Advertisement
০১ জুলাই ২০২৪
IIT Student Death

আইআইটিতে ‘অপশাসন’, সরব বিধায়ক হিরণও

হস্টেলের ঘরে ফয়জ়ানের দেহ ফেলে রাখার দাবি করেছিলেন মা রেহেনা বিবি। শেষে পুলিশি তদন্তে আস্থা রাখতে না পেরে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

ও   ও

আইআইটি খড়্গপুর। —ফাইল চিত্র।

আরুণি মুখোপাধ্যায়, দেবমাল্য বাগচী
কলকাতা, খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

পরপর ছাত্র মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে আইআইটি খড়্গপুরের বিরুদ্ধে।মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ফয়জ়ান আহমেদের মৃত্যুতে তো খুনের অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। প্রশ্নে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষা। এই আবহে এ বার আইআইটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হলেন রেলশহরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় (হিরণ)। প্রশ্ন তুললেন প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারির ‘তুঘলকি শাসন’ নিয়েও।

২০২২-এর ১৪ অক্টোবর অসমের তিনসুকিয়ার বাসিন্দা ফয়জ়ানের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল আইআইটিতে। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার দাবি করা হলেও মৃত ছাত্রের পরিজনেরা খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন। হস্টেলের ঘরে ফয়জ়ানের দেহ ফেলে রাখার দাবি করেছিলেন মা রেহেনা বিবি। শেষে পুলিশি তদন্তে আস্থা রাখতে না পেরে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। কলকাতা হাই কোর্টে ভর্ৎসনার মুখে পড়ে পুলিশ ও আইআইটি কর্তৃপক্ষকে। সামনে আসে র‌্যাগিং তত্ত্ব। চার পড়ুয়াকে বহিষ্কারও করা হয়। আদালতের নির্দেশে ফয়জ়ানের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের পরে ‘খুন’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়। সিট গড়ে শুরু হয় তদন্ত। সম্প্রতি তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।

ফয়জ়ানের মৃত্যুতেই আইআইটির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন হিরণ। তাঁর মতে, ‘‘আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টরকে অবিলম্বে বহিষ্কার করা উচিত। উনি তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারেন। বিগত কয়েক বছর ধরে উনি ইচ্ছে মতো আইআইটিতে তুঘলকি শাসন চালিয়েছেন। আমার তো মনে হয়, উনিই খুনিদের কোনও ভাবে আগলে রেখেছেন।’’ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ডিরেক্টর বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারিকে বহিষ্কারের দাবিও জানিয়েছেন খড়্গপুরের বিধায়ক।

ফয়জ়ানের পরেও একাধিক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে এই আইআইটিতে। গত ১৭ জুনও হস্টেলের বাইরে ছাদের কার্নিশে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ মেলে। তারপর বিভিন্ন সংগঠন আইআইটির গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়ে ডিরেক্টরের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবি করেছে। এই আবহে এ বার হিরণের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে আইআইটি কর্তৃপক্ষের দাবি, ফয়জ়ানের মৃত্যুর তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছে প্রতিষ্ঠান।

হিরণ এ বার লোকসভা ভোটে ঘাটাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়নের সময় দেওয়া নথিতে তাঁর খড়্গপুর আইআইটি থেকে পিএইচডি-র তথ্য নিয়ে জলঘোলাও হয়। হিরণ নিজেকে প্রতিষ্ঠানের ‘রিসার্চ স্কলার’ দাবি করলেও, তথ্য জানার অধিকারে একটি আবেদনের উত্তরে আইআইটি কিন্তু জানিয়েছে, হিরণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নন। এ নিয়ে ভোটের সময় হিরণকে বিঁধেছিলেন ঘাটালের সাংসদ দেবও।

এ বার নিজের সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই মুখ খুললেন হিরণ। কেন? তাঁর উত্তর, ‘‘আইআইটি কেবল রেলশহরের নয়, সারা দেশের সম্পদ। পরপর মৃত্যু এবং অপশাসনে প্রতিষ্ঠানের সুনাম খর্ব হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাও একই সুরে বলছেন, ‘‘আইআইটিতে পড়ুয়াদের মৃত্যু মিছিল এবং সেগুলিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ডিরেক্টরের অবিলম্বে শাস্তি হওয়া উচিত।’’ একই সঙ্গে হিরণের উদ্দেশে সুজয়ের খোঁচা, ‘‘একজন ভুয়ো ডিগ্রিধারীর নিজের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই বোধোদয় হওয়ায় ভাল লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE