এক জন ‘প্রফেসর’ আর তাঁর প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ না করে স্বাধীন ভারতের উন্নয়নযজ্ঞের কাহিনি বলাই যাবে না। প্রতিষ্ঠানটি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট। আর মানুষটি? ‘প্রফেসর’ নামেই যাঁকে চিনত দেশ-বিদেশ? তিনি প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ। (ছবিতে, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে)
১৯৩১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের একচিলতে ঘর থেকে যাত্রা শুরু প্রতিষ্ঠানটির। সেখান থেকে বনহুগলির ক্যাম্পাস, দেশের বিভিন্ন শহরে শাখা প্রতিষ্ঠা, জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষিত হওয়া— ক্রমে মহীরুহ হয়ে উঠেছে আইএসআই। আর, অবিচ্ছেদ্য হয়েছে ভারতের উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে। নমুনা সমীক্ষার পদ্ধতি তৈরি করা, সেই সমীক্ষার ফলাফলের মান্যতা বিচার করার মাপকাঠি নির্মাণ, বন্যা-খরার আর্থিক পরিমাপ, স্ট্যাটিস্টিকাল কোয়ালিটি কনট্রোল আর অপারেশন রিসার্চ-এর মতো দুটি অসীম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ভারতে নিয়ে আসা— আইএসআই ছিল সদ্য-স্বাধীন দেশের উন্নয়নের কলকবজা তৈরির কারখানা।
কী ভাবে অত্যন্ত কম খরচে সরকারি পরিকল্পনার উপযুক্ত পরিসংখ্যান তৈরি করা যায়, গোটা উন্নয়নশীল দুনিয়া আইএসআই-এর কাছে শিখেছিল। নিকিতা ক্রুশ্চেভ, ঝৌ এনলাই, হো চি মিন— যিনিই ভারত সফরে এসেছেন, আইএসআই তাঁর সফরসূচিতে ছিল। দেশবিদেশের অর্থনীতিবিদদেরও নিয়মিত গন্তব্য ছিল আইএসআই। কৃতিত্বের তালিকায় সবচেয়ে গৌবরময় দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী যোজনা— ভারতের শিল্পায়নের রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠানটি।
পরিসংখ্যানের গণ্ডি ছাড়িয়ে কম্পিউটার সায়েন্স, গণিত, অর্থনীতি, লিঙ্গুইস্টিক্স, মেশিন ইনটেলিজেন্স, জেনেটিক্স, সাইকোমেট্রি থেকে সমাজবিজ্ঞান, বহুধা প্রবাহিত হয়েছে আইএসআই। কম্পিউটার সায়েন্সের গবেষণায় বিশ্বের প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বমানের কাজ হয়েছে ক্রিপ্টোলজি, অপটিকাল ক্যারেক্টার রেকগনিশন, ফাজি লজিক-এর মতো ক্ষেত্রে।
ভারতে যে ক’টি প্রতিষ্ঠানে বিশ্বমানের বিদ্যাচর্চা চলছে, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার স্বীকৃতি রয়েছে, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট তার মধ্যে অন্যতম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy