Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Book

স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যে খামতিগুলো আছে

সব চিকিৎসা-প্রক্রিয়ারই কম-বেশি কুফল থাকে। আর অতিচিকিৎসার ফল মারাত্মক হতে পারে।

শান্তনু চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

বইটি প্রকাশিত হয় এ বছরের গোড়ায়। তাই, এতে কোভিডের উল্লেখ নেই। কিন্তু, অনেক কিছুর সঙ্গে, অতিমারি মোকাবিলায় দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা ধসে পড়ার কারণ বুঝতেও বইটি সাহায্য করে। দশটি প্রবন্ধে নানা থিম: তার মধ্যে কয়েকটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

পরিস্থিতি মানবশরীরের নেহাত প্রতিকূল না হলে, অধিকাংশ মানুষই সুস্থ থাকেন। মাঝে-মধ্যে রোগভোগ, দুর্ঘটনা বা বয়সজনিত কারণে অসুস্থতা মানুষের জৈবিক নিয়তি। কিন্তু, ইদানীং চিকিৎসাবিদ্যার প্রবণতা হল মানুষকে স্বাভাবিক জৈবিক নিয়তি সম্পর্কে অসহিষ্ণু করা। এই অসহিষ্ণুতা মানুষকে করে দুর্বল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-ব্যবসার বোলবোলাও বাড়ায়।

সব চিকিৎসা-প্রক্রিয়ারই কম-বেশি কুফল থাকে। আর অতিচিকিৎসার ফল মারাত্মক হতে পারে। তাই ওষুধ, পরীক্ষা, কাটাছেঁড়া, এই সব ততটুকুই, যতটুকু না হলে নয়। দরদি-বিচক্ষণতাই চিকিৎসাবিদ্যার প্রাণ। সেই প্রাণটুকুই হারিয়ে যেতে বসেছে।

স্বাস্থ্য নিয়ে বাদবিসংবাদ

স্থবির দাশগুপ্ত

৪০০.০০

আনন্দ পাবলিশার্স

দরদে রোগীর উপকার। কিন্তু চিকিৎসার উপকরণের নির্মাতা-বিক্রেতার লোকসান। যত ওষুধ ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি বিক্রি হবে, ব্যবহার হবে, ততই নানান কিসিমের ব্যবসায়ীর লাভ। আজ আমরা জানি, ওষুধ কোম্পানিগুলো কী ভাবে নিত্য নতুন ওষুধের কার্যকারিতার সপক্ষে ‘প্রমাণ’ হাজির করার জন্য গবেষণাকে পরিচালিত-প্রভাবিত করে।

জিডিপির অনুপাতের হিসেবে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের ব্যাপারে ভারত এশিয়ার অনেক গরিব দেশের পিছনে। নির্লজ্জ ভাবে কর্পোরেটের স্বার্থরক্ষা ও সরকারি ব্যয়-সঙ্কোচনের ব্যাপারটা সম্প্রতি জোরদার হয়েছে। কিন্তু, সমস্যার শিকড় আরও গভীরে। স্বাস্থ্যনীতির লক্ষ্য সুস্থতা, যার জন্য দরকার যথাযথ পুষ্টি, বাসস্থান, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। দরকার স্বাস্থ্য-সুরক্ষার প্রাথমিক উপকরণ— যেমন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত জায়গায় প্রত্যেকের জন্য মশারি। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসার সরঞ্জামের অঢেল জোগানের আগে দরকার জনস্বাস্থ্যের ভিত আরও মজবুত করা।

দেশে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কোথাও উন্নতি হয়নি এমন নয়। লেখক কেরল, তামিলনাড়ু ও দিল্লির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু, দেশের (ও অনেক রাজ্যের) সরকারের সাধারণ প্রবণতা হল চমকের দিকে, যা আজকাল বাড়ছে। জঁ দ্রেজ়-এর অনুসরণে লেখক ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মধ্যেকার ধাপ্পাটিকে উন্মোচন করেছেন।

অনেক দেশের অভিজ্ঞতা আলোচনা করে লেখক মত দিয়েছেন সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার পুরো বা অধিকাংশ দায়িত্ব নেওয়ার পক্ষে। তবে তাতেই সব সমস্যার নিরসন হবে না। দরকার নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগে সততা, কাণ্ডজ্ঞান। শেষ তিনটি প্রবন্ধে আলোচনা আর একটু বিশদ হলে ভাল হত। নির্ঘণ্টতেও কার্পণ্য চোখে পড়ে। তবে, সূত্রনির্দেশগুলি মূল্যবান। বাংলা ভাষায় স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণের অভাব এই বই পূরণ করল।

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy