যামিনী রায়/ পত্রাবলী ও প্রবন্ধ
সম্পাদক: দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
মূল্য: ২০০.০০
প্রকাশক: অনুষ্টুপ
রবীন্দ্রনাথের ছবি নিয়ে লেখার পর যামিনী রায়কে শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণ থেকে কবি যখন চিঠি লেখেন তখন তিনি শয্যাশায়ী, ১৯৪১: ‘এই অবস্থায় আমার ছবি সম্বন্ধে তোমার লেখাটি পড়ে আমি বড় আনন্দ পেয়েছি।... এদেশে আমাদের রচনা অনেকদিন পর্য্যন্ত অপরিচিত থাকবে। আমাদের পরিচয় জনতার বাহিরে, তোমাদের নিভৃত অন্তরের মধ্যে। আমার সৌভাগ্য এই বিদায় নেবার পূর্বেই নানা সংশয় এবং অবজ্ঞার ভিতরে আমি তোমাদের সেই স্বীকৃতি লাভ করে যেতে পারলুম...।’ যামিনী রায়ের এমনই আর-একটি লেখা ‘পটুয়া শিল্প’। প্রবন্ধাদির সঙ্গে তাঁর যে পত্রাবলি পূর্ণ করেছে বইটিকে, তার একটিতে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে লিখছেন, ১৯৪৩-এ: ‘মাঝে মাঝে তোমাদের সঙ্গে দেখা হলে আনন্দ পাই। ছবি আঁকার গড়নের দিক থেকেও আমি সাহায্য পাই, তাই তোমাদের বিরক্ত করি আসবার জন্য তাগিদ দিয়ে।’ দেবীপ্রসাদের নিজের পঠনপাঠন ছিল দর্শন, তিনি কেন যামিনী রায়ের সান্নিধ্যে মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন সে কারণও জানিয়েছেন: ‘তাঁর মতো একেবারে খাঁটি দার্শনিক আমার জীবনে কমই দেখেছি।’ সংকলক সোমেশ চট্টোপাধ্যায় প্রাসঙ্গিক সূত্রগুলি বুনে দিয়েছেন।
সিনেমায় ডবল ফেলুদা
লেখক: সত্যজিৎ রায়
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: আনন্দ
সত্যজিৎ রায়ের লেখার খসড়ার যে সব পাণ্ডুলিপি সযত্নে রক্ষিত সন্দীপ রায়ের কাছে, তা থেকে অজানা তথ্য বেরিয়ে পড়ে অনেক সময়ই। যেমন ‘গোলোকধাম রহস্য’-র নাম সত্যজিৎ প্রথমে রাখেন ‘প্রফেসর দাশগুপ্তের ফরমুলা’। সেই খসড়ার প্রথম পাতার প্রতিলিপি প্রকাশ করেছেন সন্দীপ, সিনেমায় ডবল ফেলুদা। ‘গোলোকধাম রহস্য’-এর সঙ্গে ‘সমাদ্দারের চাবি’ আছে এ-বইয়ে। ১৯৮৯-এ সত্যজিতের অন্য দু’টি ফেলুদা নিয়ে ‘ডবল ফেলুদা’ বেরিয়েছিল, তাই এ-বইয়ের নামের আগে ‘সিনেমায়’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। সন্দীপ তাঁর ভূমিকা-য় লিখেছেন: ‘‘ফেলুদা প্রকাশনার পঞ্চাশ বছরে বের হল ‘সিনেমায় ডবল ফেলুদা’র স্পেশাল ফিল্ম এডিশন। এই বিশেষ বছরে যখন ঠিক করলাম যে বাবার অত্যন্ত প্রিয় দুটি গল্প— ‘সমাদ্দারের চাবি’ ও ‘গোলোকধাম রহস্য’ নিয়ে একটা সিনেমা বানাব, তখন ছবির টাইটেল হিসেবে ফেলুদারই একটা পুরনো বইয়ের নাম ব্যবহার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।’’ মূল গল্পের সঙ্গে সত্যজিতের আঁকা ইলাসট্রেশন ও হেডপিস রয়েছে বইটিতে, সঙ্গে সত্যজিৎ-পৌত্র সৌরদীপের তোলা ফিল্ম ও ফিল্ম শুটিং-এর স্থিরচিত্র, আর ফিল্মটির কিছু পোস্টার ও হোর্ডিং। পিতার গল্প ও পুত্রের ফিল্মের যুগলবন্দি।
আশ্চর্যময়ী/ ভিন্ন ঘরানার বাঙালি নারীর কথা
সম্পাদক: শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: দীপ
নারীমুক্তি জিনিসটা কী, খায় না মাথায় দেয়, সে ধোঁয়াশা আজও কাটেনি। সেই আবছা মানচিত্রে যে সব মেয়ের জীবন লাইটহাউসের কাজ করে, তাঁদের নিয়েই এই সংকলন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের তেমন তিরিশ জনের কথা রয়েছে এখানে। রাজনৈতিক আন্দোলন, জ্ঞান চর্চা, সাহিত্য-শিল্প-নাটকে তাঁরা যুক্ত। সমকালে তাঁদের কাজের মূল্যায়ন, ভবিষ্যতের উপর তার ছাপ অতখানি বিবেচনার বিষয় হয়ে ওঠেনি সম্পাদকের কাছে। সম্পাদক লিখছেন, এই মেয়েরা ‘‘নৈমিত্তিকতার বাইরে সৃজন করেছেন এক টুকরো নিজস্ব আকাশ, যা আমাদের আজও প্রণোদিত করে।’’ এরা লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে জীবন কাটানোর চিটচিটে লোভটা ছেড়ে বাইরের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। আশালতা সেনের মতো গাঁধীবাদী বিপ্লবী, বীণা দাশ, প্রীতিলতার মতো সশস্ত্র বিপ্লবী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, নকশাল আন্দোলনে সামিল মেয়েরা, সংগীত, নাটক, ফিল্মে অভিনয়ে যাঁরা ভাস্বর, তেমন অনেকে আছেন। শেষে কোলাজ শিল্পী শাকিলা এবং পর্বতারোহী ছন্দা গায়েন।
কোনও নিবন্ধে স্মৃতিচারণা, কোনওটা সন্ধানী পাঠ, কখনও সংক্ষিপ্ত জীবনকথন। একটু বিনিসুতোর মালা ধরনের সংকলন। তবু ‘পাকা ধানের গান’-এর লেখক সাবিত্রী রায়, নকশাল আন্দোলনে যুক্ত জেলের ভিতর জেল বইয়ের লেখক মীনাক্ষী সেন, কীর্তনগায়িকা রাধারানি দেবী, ভাস্কর মীরা মুখোপাধ্যায়, এঁদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় মেলা সহজ নয়। এক সঙ্গে অনেকগুলি জীবন তুলে ধরে সে কাজটি অন্তত খানিকটা করা গিয়েছে এই বইতে।
বাঙালির দুষ্প্রাপ্য শিকার অভিযান
সম্পাদক: বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়
মূল্য: ৩৭৫.০০
প্রকাশক: বুকফার্ম
এখন দেশে শিকার নিষিদ্ধ। নতুন করে শিকার কাহিনি লেখা হবে না আর, পুরনোগুলোই ঝেড়ে-বেছে ফিরে ফিরে পড়তে হবে। বিশু মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বিখ্যাত শিকার কাহিনী (১৯৬৩) নামক ‘অধুনালুপ্ত’ সংকলনটির সঙ্গে আরও কিছু শিকার কাহিনি, তথ্যপঞ্জি, আলোকচিত্র ও অলংকরণ আত্মস্থ করে এ বইটি জন্ম নিয়েছে। বাংলা শিকার কাহিনির খ্যাত লেখকদের অনেকেই আছেন, যেমন ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায়, কুমুদনাথ চৌধুরী, সুধাংশুকান্ত আচার্য, ভূপেন্দ্রচন্দ্র সিংহ, হীরালাল দাশগুপ্ত প্রমুখ। ‘শিকার’ মানে মুখ্যত বিগ গেম— বাঘ, লেপার্ড, হাতি, ভাল্লুক। অগাধ রোমাঞ্চ ও বাঙালির সাহসিকতার ছবি ছাড়াও পঞ্চাশ থেকে একশো বছর আগে বাংলা, অসম, বিহারের নানা কোণের প্রাকৃতিক সম্ভারের বর্ণনা অবাক করে দেয়। বইয়ের শেষে শিকার বিষয়ে বাঙালির লেখা আরও কিছু বই থেকে হাতিয়ার, শিকারযোগ্য প্রাণী, শিকারে বেরিয়ে কর্তব্য-অকর্তব্য ইত্যাদি সংক্রান্ত নানা তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। পুরনো বইয়ের পুনঃপ্রকাশ হিসেবে ভাবলে কোনও গোল নেই, কিন্তু তার অতিরিক্ত কোনও ভাবনা ধরা গেল না। জানা গেল না, কোন রচনা মূল বইতে ছিল, কোনটি আজকের সংযোজন, এবং সেটি সংযোজিত হওয়ার উদ্দেশ্য; কেন শিকারের অস্ত্র ও কৌশল সংক্রান্ত নানা খুঁটিনাটি (আজ যা তামাদি) আমাদের জানানো দরকার হল, অথচ রচনার বহু অংশ যা টীকা দাবি করে তা দেওয়া হল না। তথ্যপঞ্জির বড় অংশ অসম্পূর্ণ। ময়ূখ চৌধুরীর রেখাচিত্রগুলি অসামান্য। কিন্তু প্রচুর আলোকচিত্রের অধিকাংশের উপযুক্ত পরিচিতি নেই। লেখকদের অনেকের সম্পর্কেই তথ্যের অভাব। রচনাগুলো সমস্তই কি, যেমন দাবি করা হয়েছে, হুবহু সত্য?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy