Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

অভিজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টিতে সমৃদ্ধ

ব্যয়বহুল আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তক আজও বিলিতি। আমাদের জনস্বাস্থ্য এবং পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতার সাপেক্ষে বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গিতে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার বিশ্লেষণ এখানে অনুপস্থিত। আজকের তথ্যপ্রমাণগত (এভিডেন্স বেসড) এবং নির্দেশিকা-অনুসার (গাইডলাইন বেসড) চিকিৎসার যুগে বেশির ভাগ গবেষণাপত্রই বিদেশি।

ভুবন মাঝি
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

ব্যয়বহুল আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তক আজও বিলিতি। আমাদের জনস্বাস্থ্য এবং পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতার সাপেক্ষে বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গিতে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার বিশ্লেষণ এখানে অনুপস্থিত। আজকের তথ্যপ্রমাণগত (এভিডেন্স বেসড) এবং নির্দেশিকা-অনুসার (গাইডলাইন বেসড) চিকিৎসার যুগে বেশির ভাগ গবেষণাপত্রই বিদেশি। আমাদের জনসম্প্রদায়ের ওপর গবেষণা এবং তার ব্যবহারিক প্রয়োগ নিতান্ত বিরল। তথ্যপ্রমাণ এবং নির্দেশিকা অনেক ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন চিকিৎসা সমস্যার সমাধানে অপারগ। এমতাবস্থায় অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

বিলিতি বইয়ের অন্ধ অনুকরণে না গিয়ে, দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের অপূর্ব সমন্বয়ে রচিত বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডাক্তার সুব্রত মৈত্রের বইটি প্রকৃত অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ তিন চার দশকের অভিজ্ঞতার স্ফুরণ শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীই নয়, অভিজ্ঞ এবং তুলনায় অনভিজ্ঞ চিকিৎসকদেরও সমৃদ্ধ করবে। প্রতি দিনের অভিজ্ঞতায় প্রাপ্ত রোগের বৈচিত্রপূর্ণ সমাহার এর পাতায় পাতায়। রোগের উপসর্গ এবং লক্ষণ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে উপযুক্ত পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি অভূতপূর্ব। পরবর্তী পদক্ষেপে রোগের কার্যকারণসমূহ চিকিৎসাপদ্ধতি, সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং নির্দেশিকা, সবই একটি সুস্পষ্ট সূত্রে গ্রথিত। নাতিদীর্ঘ এবং কার্যকরী আলোচনা বইটির আয়তন সীমিত করেছে, মূল্যও সাধ্যের মধ্যে রেখেছে। চিকিৎসার প্রতিটি শাখায় লেখকের ব্যুৎপত্তি এবং অনায়াস বিচরণ সম্ভ্রমের উদ্রেক করে। সুন্দর, স্বচ্ছন্দ এবং প্রাঞ্জল ইংরেজিতে সুনিপুণ উপস্থাপনা।

চিকিৎসাশাখার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে বইয়ের শেষে চিত্রসহ রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি একে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। উপযুক্ত স্থানে যথাযথ রেফারেন্স এবং পরিশেষে বর্ণানুক্রমিক সূচি পাঠকের সহায়তায় আসবে।

আমাদের চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পুথিগত বিদ্যা ছাড়াও সামাজিক, ব্যবহারিক জ্ঞান এবং সেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গির মিশেল আবশ্যিক। লেখকের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং দিকনির্দেশ এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয়। চিকিৎসাশাস্ত্রের নৈতিক এবং আইনি দিকগুলো নিয়ে আলোচনাও বেশ মনোগ্রাহী। চিকিৎসক, রোগ এবং রোগীর প্রতি লেখকের সর্বাঙ্গীণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে ‘ডক্টর-পেশেন্ট রিলেশনশিপ অ্যান্ড দ্য কনজিউমারিজম’ নামক পরিচ্ছেদে। পরিচ্ছেদটি শেষ হয়েছে মানুষ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে। নির্দেশিকা অনুযায়ী চিকিৎসায় চিকিৎসকের সন্তুষ্টি, রোগীর আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ঠিকমতো প্রতিফলিত না করলে রোগযন্ত্রণার উপশম অধরা থাকে এবং চিকিৎসাও ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়। রোগীর প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীর সহৃদয় ব্যবহার, সহানুভূতি এবং ‘এমপ্যাথি’ চিকিৎসা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় তথাকথিত অবহেলিত এই বিষয়গুলির প্রতি দিকনির্দেশে লেখকের মুনশিয়ানা স্পষ্ট। চিকিৎসা ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় পরিষেবার আবশ্যিক অঙ্গ। লেখকের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি এবং দূরদৃষ্টি হবু চিকিৎসকদের মধ্যে সম্প্রসারিত হবে, এই আশা রাখি।

জনস্বাস্থ্য নিয়ে লেখকের দূরদৃষ্টির কিছু নিদর্শন রয়েছে মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিশেষজ্ঞ গ্রুপ-এর নির্দেশিকায় এবং তাদের সফল রূপায়ণে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে টারশিয়ারি কেয়ার সেন্টার পর্যন্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জনমুখী করা এবং ব্যয়সংকোচ করার ক্ষেত্রে তাঁর চিন্তাধারা উল্লেখযোগ্য।

নিছক একটি পাঠ্যপুস্তক হিসেবে আবদ্ধ না থেকে এবং প্রথাগত পাঠ্যপুস্তকের বিকল্পে না গিয়ে, এর পরিপূরক হিসেবে এটি মেডিক্যাল প্র্যাকটিস শুরুর আগে প্রতিটি চিকিৎসকের অবশ্যপাঠ্য।

আইপিজিএমই অ্যান্ড আর এবং এসএসকেএম হাসপাতালে কার্ডিয়োলজি বিভাগের শিক্ষক

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE