প্রত্যাশার কাঁধে চড়েই অনেক আগে থেকে শাঁখে ফুঁ দিতে শুরু করেছিল শেয়ার বাজার। আর সেই প্রত্যাশা মিটিয়ে কেন্দ্রে স্থায়ী, শক্তিশালী সরকার গড়ার জনাদেশ সামনে আসতেই, তাকে দু’হাত তুলে স্বাগত জানাল শিল্পমহল। সেনসেক্স-সহ স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকগুলিতেও এ দিন তারই প্রতিধ্বনি।
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৭২ ছোঁবে এই আশায় মাস দুয়েক ধরেই পারদ চড়ছে শেয়ার বাজারে। একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছে সেনসেক্স। কিন্তু এ দিন বেলা কিছুটা গড়াতেই যখন বোঝা গেল যে, সরকার গড়ার সংখ্যা একা বিজেপিই জোগাড় করে ফেলবে, তখন ১,৪৭০ পয়েন্ট ঊর্ধ্বলাফ দিয়েছিল সেনসেক্স। এই প্রথম ঢুকে পড়েছিল ২৫ হাজারে। দিনের শেষে অবশ্য সেখান থেকে অনেকটাই নেমে তার উত্থান ২১৬ পয়েন্ট। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মুনাফা ঘরে তোলার তাগিদে শেয়ার বিক্রি এ দিন পরের দিকে সূচককে কিছুটা টেনে নামিয়েছে। এবং একই সঙ্গে বাস্তবের মাটিতেও ফিরতে শুরু করেছে বাজার।
একই কথা ঘুরছে শিল্পমহলের অলিন্দেও। ভোটের ফল দেখতে কলকাতায় সিআইআইয়ের ঘরে একসঙ্গে বসেছিলেন শিল্পকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ তিন দশক বাদে কোনও রাজনৈতিক দল একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে দেশ শাসনের অধিকারী হল। তাই নীতি যে দিকেই হাঁটুক, তা আর শরিকি কোন্দলে নীতিপঙ্গুত্বের শিকার হবে না।
গত দু’বছর ধরে কর্পোরেট দুনিয়ার অভিযোগ ছিল, অর্থনীতিকে খাদের ধারে দাঁড় করিয়েছে শিকেয় ওঠা সংস্কার আর কেন্দ্রের নীতিপঙ্গুত্ব। জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে। আর সেই কারণেই এ দিন বেলা যত গড়িয়েছে, যত স্পষ্ট হয়েছে কেন্দ্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার আসার ছবি, তার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে শিল্পকর্তাদের মুখেও। সেই আনন্দ প্রকাশ করতে দ্বিধাও করেননি টিটাগড় ওয়াগন্সের জে পি চৌধুরী, হলদিয়া পেট্রোকেমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তপন মিত্র, টাটা স্টিল প্রসেসিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের কর্তা সন্দীপন চক্রবর্তী, প্যাটন ট্যাঙ্কসের সঞ্জয় বুধিয়ারা।
শিল্পমহলের আশা, বিজেপির এই নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেবে মোদী-সরকারকে। কেন্দ্রের পক্ষে সহজ হবে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি ও তার রূপায়ণ। অ্যাসোচ্যাম প্রেসিডেন্ট রানা কপূরের মতে, দেশের প্রয়োজনে অপ্রিয় অথচ সাহসী পদক্ষেপ করতে পারে এই সরকার। ভারত চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সজ্জন ভজনকা এবং সিআইআইয়ের দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়েরও আশা,
এই সরকার সিদ্ধান্ত নিতে আপোস করবে না। ওয়েসম্যান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রাজন বাসওয়ানির বক্তব্য, “এ বার লড়াই জমবে।”
এ বিষয়ে স্পষ্ট ছোট শিল্পের প্রতিক্রিয়াও। তারা মনে করছে, অর্থনীতির হাল যে দিকে গড়াচ্ছিল, তাতে আগামী দিনে বেতন দেওয়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়াত। সম্ভাবনা তৈরি হত ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার। এখন তাদের আশা, সেই ভয় আর রইল না। কারণ, বড় শিল্পের জন্য লগ্নির পরিবেশ শোধরালে, বরাত পাওয়ার সুযোগও বাড়বে। ইউপিএ জমানার শেষ দিকে যে বরাতের অভাব ভুগিয়েছে তাদের।
বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট দিব্যেন্দু বসুর মতে, মজবুত সরকারে মতভেদের ঝুঁকি কম। এই ফলের পর শরিকি চাপ ও আপসের সম্ভাবনা থাকবে না বলে মনে করছেন ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফসমি-র প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আশা, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন মাথায় রেখে দৌড়তে চাইবে এই ভোটে রাজ্যে ৮০% আসন জেতা তৃণমূল কংগ্রেসও।
তবে এই বিপুল আস্থার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আকাশছোঁয়া প্রত্যাশাও। থাকছে দ্রুত কাজ করে দেখানোর চাপ। হয়তো সেই কারণে স্বাগত জানিয়েও কেন্দ্রের নতুন সরকারকে আগে একটু দেখে নিতে চায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আর এক সংগঠন ফ্যাক্সি। প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহর বক্তব্য, মোদী-সরকার কী ভাবে ইনিংস শুরু করে, আপাতত তা দেখার অপেক্ষায় তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy