বিমল জালান
পেট্রোল-ডিজেলে ভর্তুকি উঠে গিয়েছে। কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের ভর্তুকিও শুধুমাত্র যাদের প্রয়োজন, তাদেরই দেওয়ার সুপারিশ করল বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন ব্যয় সঙ্কোচ কমিশন।
রাজকোষ ঘাটতিকে লাগাম পরাতে জালানের বাদবাকি সুপারিশগুলির মধ্যে রয়েছে:
• কেন্দ্রের একই ধরনের প্রকল্পগুলিকে মিশিয়ে দেওয়া।
• শুধু জ্বালানি নয়, যে-কোনও সরকারি ভর্তুকিই সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমার ব্যবস্থা।
• এ জন্য লেনদেন ব্যাঙ্ক হিসেবে ডাকঘরকে কাজে লাগানো।
• যোজনা ও যোজনা বহির্ভূত খাতে খরচের মধ্যে পার্থক্য তুলে দেওয়া।
নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ব্যয় সঙ্কোচের পথ খুঁজতে বিমাল জালানের নেতৃত্বে কমিশন তৈরি করেছিল। আগামী বছরের জন্য বাজেট তৈরিতে অরুণ জেটলি কী ভাবে ঘাটতিতে রাশ টানবেন, তার পথনির্দেশ রয়েছে এই কমিটির রিপোর্টে। প্রথম বাজেটে জেটলি বলেছিলেন, খাদ্য ও জ্বালানির ভর্তুকি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে। দু’দিন আগেই সুদের হার কমিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেছেন, মোদী সরকার রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরবে না, এই প্রতিশ্রুতি পেয়েই তিনি সুদের হার কমাচ্ছেন। রাজকোষ ঘাটতিকে বেঁধে রাখা তাই জেটলির কাছে শক্ত চ্যালেঞ্জ।
সরকারি সূত্রের খবর, ভর্তুকির বহর কমাতে বিমল জালান কমিশন একেবারে গরিব মানুষের জন্যই কেরোসিনে ভর্তুকি চালু রাখার সুপারিশ করেছে। রিপোর্ট বলছে, রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রেও যাঁরা বেশি দামে সিলিন্ডার কিনতে পারবেন, তাঁদের তা কম দামে দেওয়া বন্ধ করা হোক। যাঁদের সত্যিই ভর্তুকি প্রয়োজন, এ বার তাঁদের চিহ্নিত করে আধার কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি নগদ ভর্তুকি পৌঁছনো হোক। ডাক বিভাগকে লেনদেন ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করার লাইসেন্স দিলে তাদের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের হাতে নগদ ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।
ব্যয় কমাতে একগুচ্ছ কেন্দ্রীয় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের বদলে হাতে গোনা কয়েকটি প্রকল্প চালু রাখার সুপারিশ করেছে কমিশন। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যগুলিও এত দিন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা কমানোর পক্ষে সওয়াল করছিল। তাদের দাবি ছিল, ওই সব প্রকল্পের অর্থ রাজ্যগুলির হাতে কেন্দ্রীয় সাহায্য হিসেবে তুলে দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিই নিজস্ব প্রয়োজন বুঝে ব্যয় করতে পারবে। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে।
যোজনা খাতে ও যোজনা বহির্ভূত খাতে ব্যয়ের মধ্যে ফারাক তুলে দিতেও সওয়াল করেছে কমিশন। স্কুল -কলেজ-হাসপাতাল বা সেতু-সড়কের মতো স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির খরচ যোজনা খাতে ব্যয়ের আওতায় আসে। সরকারি কর্মীদের বেতন, সুদ বাবদ ব্যয় চলে যায় পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে। এর আগে যোজনা কমিশনে সি রঙ্গরাজন কমিটিও এই ভেদাভেদ তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল। যুক্তি ছিল, স্কুল-হাসপাতাল তৈরি হলে শিক্ষক-চিকিত্সকদের নিয়োগ করে বেতনও দিতে হবে। সেটি পরিকল্পনা বহির্ভূত বলে তাকে বাজে খরচ ধরে নিয়ে ব্যয় সঙ্কোচ করা যাবে না। এই ভেদাভেদ তুলে দিলে কোন খরচ কমানো উচিত, কোনটি নয়, তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। এ বার বিমল জালান কমিশনও সেই সুপারিশ করল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy