প্রতীকী ছবি।
এ রাজ্যেই বাড়ি। কিন্তু বিমান পরিষেবা সংস্থার কর্মী হিসেবে কাজ করতেন পড়শি রাজ্যে। বেতন মাসে ৬৫,০০০ টাকা। মা-বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই শহরে নতুন কেনা ফ্ল্যাটে। গুনতেন বাড়ি-গাড়ির ইএমআই। কিন্তু একটা সময় থেকে বকেয়া হতে শুরু করল বেতন। শেষ পর্যন্ত গুটিয়েই গেল সেই সংস্থা কিংফিশার। গেল চাকরি। তিন বছর যন্ত্রণাময় জীবন। ফ্ল্যাট-গাড়ি বিক্রি। শেষ পর্যন্ত আবার ভিন্ রাজ্যে চাকরি। তবে এ বার মা-বাবাকে তুলতে হয়েছে ভাড়ার ফ্ল্যাটে।
শুধু কিংফিশার নয়। কাজ হারানো, কাজ কমা আর চাকরি ঘিরে অনিশ্চয়তার ছবি এখন দেশের প্রায় পুরো বিমান পরিবহণ শিল্পেই। বিমানের ককপিটে বসার স্বপ্ন ছেলেবেলায় দেখেননি, এমন জনের দেখা কম মেলে। অথচ এখন চাকরি নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ কো-পাইলটেরও। আকাশে ওড়ার স্বপ্ন নিয়ে কেবিন-ক্রু বা এয়ারহোস্টেস হতে যে প্রবল আগ্রহ ছিল, চিড় ধরছে সেখানেও। সব মিলিয়ে বরাবর যা মোটা বেতন এবং সামাজিক সম্মানের জন্য ‘স্বপ্নের চাকরি’ ছিল, এখন তাতে কখনও সময়ে বেতন না হওয়ার যন্ত্রণা, কখনও কাজে কোপ।
হবে না-ই বা কেন? মাঝে সঙ্কটে পড়া স্পাইসজেট কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শনিবারও জেট জানিয়েছে, পাইলটদের বকেয়া বেতন এখনই মেটাতে পারবে না তারা। আর হন্যে হয়ে ক্রেতা খুঁজেও এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য তা জোগাড় করতে পারেনি কেন্দ্র। ওয়াকিবহাল মহল তাই বলছে, এই অবস্থায় চাকরি হবে কোথা থেকে?
বিমান পরিবহণে সমস্যা বরাবরই আছে। যে কারণে পরিষেবা চালু করেও ডানা গোটাতে হয়েছে মোদিলুফৎ, ডেকানের মতো সংস্থাকে। কিন্তু খটকা বাড়ছে এই কারণে যে, মোদী সরকার বার বার জোর দিয়ে বলছে উড়ান প্রকল্পের কথা। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, দেখলে মনে হবে বিমান পরিবহণে বুঝি দারুণ কিছু একটা হচ্ছে। ছোট শহরগুলির মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে নতুন বিমানবন্দর, ছোট বিমানবন্দরের উন্নয়ন, বড় শহরে দ্বিতীয় বিমানবন্দর, পার্কিং বে-র সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি। প্রশ্ন উঠছে, এত নতুন বিমানবন্দর, এত পুঁজি। তা হলে এই শিল্পের এবং সেখানে কাজের অবস্থা এমন বেহাল কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল কারণ চড়া খরচ আর গলাকাটা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে সস্তা টিকিট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। কলকাতার অভিজ্ঞ পাইলট সর্বেশ গুপ্ত জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার টিকিট গড়ে ৫,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বিমান ওড়ার খরচ প্রতি মিনিটে ৬,০০০ টাকা। সেই হিসেবে আড়াই ঘণ্টার উড়ানের খরচ ৯ লক্ষ টাকা। ১৮০ আসনের বিমানের প্রতিটি আসন ভরলে তবেই এই টাকা ওঠে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। ফলে অধিকাংশ উড়ান চলে লোকসানে।
উড়ান ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, টিকিটের দাম বাড়লেই হইচই শুরু হয়ে যায়। তখন টিকিটের দামের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেয় কেন্দ্র। কিন্তু তা হলে টিকিটের দামের নিম্নসীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না কেন? যাতে সংস্থাগুলি বাজারে টিকে থাকতে পারে।
কিন্তু খোলা বাজারে কি আদৌ তা সম্ভব? তা ছাড়া, বিদেশেও তো সস্তার টিকিট পাওয়া যায়! এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখুন, বিদেশে এত করের বোঝা থাকে না। এখানে জ্বালানির উপরে বিশাল কর। রয়েছে বড় বিমানবন্দরের ল্যান্ডিং চার্জ। পার্কিং চার্জ।’’ অভিযোগ, এই টাকায় তৈরি হচ্ছে নতুন বিমানবন্দর। আর রক্ত ঝরছে উড়ান সংস্থাগুলির। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়াকে কয়েক দফায় ৩০,০০০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। চাকরি হয়েছে ক’জনের?’’ কিংফিশারের প্রাক্তন ম্যানেজার শুদ্ধ ঘোষের কথায়, ‘‘যে ভাবে উড়ান সংস্থাগুলির রক্ত ঝরছে, ভবিষ্যৎ কেউ জানে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy