Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
আগে জোর ঋণ খেলাপের সমস্যা মেটানোয়

মিশতে পারে দুই বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক

দেশের দু’টি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে মিশিয়ে দিতে পারে কেন্দ্র। পরের ধাপে সেই সংযুক্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতে পারে ছোট এবং আর্থিক ভাবে দুর্বল আরও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

দেশের দু’টি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে মিশিয়ে দিতে পারে কেন্দ্র। পরের ধাপে সেই সংযুক্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতে পারে ছোট এবং আর্থিক ভাবে দুর্বল আরও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে। ঋণ খেলাপের সমস্যায় ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে ঢেলে সাজার পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে এই দাওয়াই বাতলেছেন ব্যাঙ্কস বোর্ড ব্যুরোর কর্তা বিনোদ রাই। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, এ সব কিছুর জন্য আগে সরকারি ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা (ব্যালান্স শিট) পরিষ্কার করা জরুরি। মুছে ফেলা প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অনুৎপাদক সম্পদের দাগ।

কোন-কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে মেশানোর কথা ভাবা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ খোলেননি রাই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির খোলনলচে বদলাতে ৬৮ বছরের যে আমলাকে অবসর ভেঙে ফিরিয়ে এনেছে কেন্দ্র। বসিয়েছে এই কাজের দায়িত্বে থাকা ব্যাঙ্কস বোর্ড ব্যুরোর মাথায়। তবে তিনি বলেন, আগে অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা মেটানো প্রয়োজন। তারপরে মুম্বই-ভিত্তিক দু’টি বড় ব্যাঙ্ক-কে মিশিয়ে দেওয়া হতে পারে। উল্লেখ্য, দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক ছাড়া মুম্বইয়ে সদর দফতর থাকা আরও দুই বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক হল— ব্যাঙ্ক অব বরোদা এবং ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। তা ছাড়া, মহিলা ব্যাঙ্ক এবং পাঁচ সহযোগী ব্যাঙ্কের সঙ্গে স্টেট ব্যাঙ্কের সংযুক্তির প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই চলছে।

তবে রাই স্পষ্ট করেন, মুম্বইয়ের দুই বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গাঁটছড়ার ভাবনা এখনও প্রাথমিক স্তরে। তা ছাড়া, সে পথে এগোনোর পূর্বশর্ত, ঘাড়ে চেপে থাকা অনুৎপাদক সম্পদের বিপুল বোঝা নামিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির হিসেবের খাতা সাফসুতরো করা।

জুন পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে, সময়ে ফেরত না-পাওয়া মোট ৯.২৪ লক্ষ কোটি টাকা ধারের ৮৮% রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের খাতায়। সময়ে শোধ না-হওয়া ধারের জন্য টাকা সরিয়ে রাখতে গিয়ে বিপুল নিট লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছে তাদের অনেককে। কারও আবার লোকসান না-হলেও, মুনাফার অঙ্ক কমে গিয়েছে হুড়মুড়িয়ে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১.১৪ লক্ষ কোটির ধার মুছে ফেলতে হয়েছে হিসেবের খাতা থেকে। ২০১৫ সালেই অনুৎপাদক সম্পদের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩.৬১ লক্ষ কোটি।

এই পরিস্থিতিতে নগদের চাহিদা ও ঋণ খেলাপের সমস্যা সামাল দিয়ে ব্যাঙ্কগুলির ধার দেওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে অনেক বেশি শেয়ার-মূলধন জরুরি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জুলাইয়ে ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে ২২,৯১৫ কোটি টাকা শেয়ার মূলধন জোগানোর কথা ঘোষণাও করেছে কেন্দ্র। ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরে প্রতিশ্রুতি রয়েছে মোট ৭০ হাজার কোটি ঢালার। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মূলধনের প্রয়োজন আদপে তার তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করছে মুডিজ। তাদের মতে, ২০১৯ সালের মধ্যে শুধু ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই বাড়তি শেয়ার মূলধন লাগবে ১.২০ লক্ষ কোটি টাকা। যেখানে তাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৪৫ হাজার কোটি।

আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাটির মতে, সরকারি বরাদ্দে মূলধনের চাহিদার চিঁড়ে ভিজবে না। বিশেষজ্ঞদের মতেও, বাসেল-থ্রি নিয়ম মানতে গেলে ব্যাঙ্কগুলির হাতে এমনিতে অনেক বেশি নগদের জোগান থাকতে হবে। সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা সামাল দেওয়ার কথা।

এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংযুক্তির আগে ঋণ খেলাপের সমস্যা নিকেশের উপর জোর দিয়েছেন রাই। ওই সমস্যা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পরেই যে একমাত্র এ ধরনের বড় মাপের সংস্কারের রাস্তায় পা ফেলা সম্ভব, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

স্টেট ব্যাঙ্কের সংযুক্তির প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই চলছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, ‘‘আইডিবিআই ব্যাঙ্কে সরকারি অংশীদারি ৪৯ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।’’ আর এই সমস্ত কিছুর পরে এ বার দুই বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে মেশানোর কথা বললেন রাই-ও।

অন্য বিষয়গুলি:

PSU banks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE