শুরু হয়েছে ফলাফলের মরসুম। বড়দের মধ্যে বরাবরের মতো এ বারও ইনিংসের সূচনা করেছে দুই প্রযুক্তি-প্রধান ইনফোসিস এবং টিসিএস। যেমন আশা করা হয়েছিল, তার তুলনায় ভাল ফল প্রকাশ করেছে দু’টি সংস্থাই। আজ ফল প্রকাশ করবে আর এক মহারথী রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। এর পর একনাগাড়ে প্রকাশিত হতে থাকবে বহু সংস্থার ফলাফল। বোঝা যাবে নোট বাতিলের কতটা প্রভাব পড়েছে এদের ব্যবসায়। শেয়ার বাজারের আশা, যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, সম্ভবত ততটা খারাপ হবে না অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসের ফলাফল। এই কারণে বাজার অনেকটাই উঠেছে গত সপ্তাহে। নোট-কাণ্ডে সূচক যতটা পড়েছিল তার বেশির ভাগটাই ইতিমধ্যে পুষিয়ে গিয়েছে। অনেক শেয়ারের দাম ফিরে এসেছে আগের জায়গায়। বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। পাশাপাশি বাড়ছে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ। আশঙ্কার পরিবেশ থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে লগ্নির বাজার।
তবে নোট বাতিলের বড় ধাক্কা লেগেছে বাড়ি ও গাড়ি শিল্পে। ফ্ল্যাট বুকিং কমেছে কম-বেশি ২০%। অন্য দিকে গাড়ি বিক্রি মাত্র ১.৩৬% কমলেও ২২% কমেছে বাইক বিক্রি। মনে রাখতে হবে, বাড়ি-গাড়ির চাহিদা কমলে তার প্রভাব পড়ে সিমেন্ট, ইস্পাত, যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিন পণ্য, টায়ার, টিউব ইত্যাদি শিল্পে। তবে বাজারে নতুন নোটের জোগান বাড়তে থাকায় আশা করা যায় আগামী আর্থিক বছরে অবস্থার উন্নতি হবে।
গত ৩ মাসে ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের নিট লাভ বেড়েছে ২৯%। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও এই বেসরকারি ব্যাঙ্কের ঋণদান বেড়েছে ২৫%। নামমাত্র খরচে ব্যাঙ্কগুলির ঘরে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা পড়ায়, সেই সব ব্যাঙ্ক ভাল ফলাফল প্রকাশ করবে, যারা এই বাড়তি তহবিল লাভজনক ভাবে খাটাতে পেরেছে। বাজারের আশা, আগামী দিনে ব্যাঙ্ক ফান্ডগুলি ভাল ফল করবে।
১৮ জানুয়ারি বাজারে আসছে দ্বিতীয় সেন্ট্রাল পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজেস এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা সিপিএসই-ইটিএফ। এটি পরিচালনা করবে রিলায়্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড। এই ধরনের প্রথম প্রকল্পটি বেশ ভাল রিটার্নের ব্যবস্থা করায় দ্বিতীয় প্রকল্পের সাফল্যের ব্যাপারে উদ্যোক্তারা আশাবাদী। প্রথম প্রকল্পটিতে ব্যবসায়িক রিটার্ন পাওয়া গিয়েছে ১৪.২%। প্রকল্পের টাকা লগ্নি করা হয় ওএনজিসি, কোল ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান অয়েল, গেইল, আরইসি, পিএফসি ইত্যাদির মতো প্রথম সারির সরকারি সংস্থায়। এ বারের ইস্যুর আকার হবে ৪,৫০০ কোটি টাকা থেকে ৬,০০০ কোটি টাকার মধ্যে। প্রথম ইস্যুর মতো এ বারেও ৫% ডিসকাউন্ট পাবেন খুচরো লগ্নিকারীরা। অর্থাৎ কিছু টাকা লগ্নি করা যেতেই পারে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ইটিএফ প্রকল্পে। এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করে লাভ হলে তার উপর বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী কোনও কর দিতে হয় না ।
এ বার কিন্তু আশা দানা বাঁধছে ২০১৭-’১৮ সালে শেয়ার বাজারের দিশা নিয়ে। তার পিছনে কারণগুলি দেখে নেব এক নজরে:
১) নোট বাতিলের প্রতিকূল প্রভাব কমে কোনও কোনও শিল্পে ইতিমধ্যেই চাহিদা ফিরতে শুরু করা।
২) নভেম্বরে ৫.৭% শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি, যা গত ১৩ মাসে সর্বোচ্চ।
৩) খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কমা, যার জেরে ইঙ্গিত মিলেছে ফেব্রুয়ারিতে সুদ আরও কমার।
৪) বাজেট থেকে বাজারের আশা। ভাল বাজেট গতি দিতে পারে বাজারকে। মূলধনী লাভে কর না-বসলে বাজার স্বস্তি পাবে।
৫) সেপ্টেম্বরের আগেই পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হওয়ার সম্ভাবনা।
৬) বিদেশি বাণিজ্যে ঘাটতি হ্রাস। রফতানি বেড়েছে টানা চার মাস। ডিসেম্বরে বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৭২%। একই মাসে সোনা আমদানি কমেছে ৪৮.৪৯%।
৭) নোট বাতিলের প্রভাবে অধিক কর আদায়ের সম্ভাবনা। বাড়বে আয়করদাতার সংখ্যা।
৮) অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে উন্নয়ন খাতে বিপুল টাকা খরচ করবে কেন্দ্রীয় সরকার, আশা বিশেষজ্ঞদের।
৯) এ বারও বর্ষা ভাল হলে শেয়ার সূচকের নতুন মাত্রা ছোঁয়ার সম্ভাবনা।
এত কিছু আশার মধ্যে বাজারে কিন্তু সংশোধন আসতে পারে তিনটি কারণে— আশঙ্কার তুলনায় তৃতীয় ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফল যদি খারাপ হয়, বাজেট বাজারের পছন্দ না-হয় এবং নোট বাতিলের প্রতিকূল প্রভাব যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy