Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সুপ্রিম কোর্ট স্বস্তি দিল চর্মশিল্পকে

গবাদি পশু সংক্রান্ত সরকারি নিয়ম-কানুনে তিন মাসের ছাড় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। চর্মশিল্পমহলের দাবি, রফতানির বাজার বাঁচাতে সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ করেছে আদালত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গার্গী গুহঠাকুরতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৪
Share: Save:

গবাদি পশু বিক্রি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে দেশের ৮৫ হাজার কোটি টাকার চর্মশিল্প।

গত বছর নোট বাতিলের জেরে বড়দিনের বিদেশি বরাত সময়ে সরবরাহ করতে পারেনি রফতানিকারী সংস্থাগুলি। এ বছর গবাদি পশু বিক্রি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিধিনিষেধ সেই বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। কাঁচামালের অভাবে রফতানির জিনিসপত্র তৈরি করা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জারা, ওয়াইল্ড, হুগো বস, প্রাদা, ক্লার্ক-এর মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার বড়দিনের বাজার। এই বাজার হারানোর আশঙ্কায় কাঁটা হয়েছিলেন চর্ম ব্যবসায়ীরা। এই শঙ্কায় প্রলেপ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়।

গবাদি পশু সংক্রান্ত সরকারি নিয়ম-কানুনে তিন মাসের ছাড় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। চর্মশিল্পমহলের দাবি, রফতানির বাজার বাঁচাতে সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ করেছে আদালত। কারণ জুলাই মাসের মধ্যেই বড়দিনের বরাত দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে যায়।

লেদার এক্সপোর্ট কাউন্সিলের অন্যতম কর্তা রমেশ জুনেজার দাবি, ভারত থেকে ৬০০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়ার জিনিস রফতানি হয়। প্রায় ৫৫ শতাংশ রফতানি বড়দিনের বাজারের দৌলতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সুবাদে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরে পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

শীর্ষ আদালতের রায়ে ঘুচবে কাঁচামালের অভাবও। তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় চর্মশিল্পের প্রয়োজন বছরে ৩০০ কোটি বর্গ ফুট চামড়া। কাঁচা চামড়ার জোগানের অভাবে মার খাচ্ছে দেশ জুড়ে প্রায় ১৫০০ ট্যানারি। দেশের চর্মশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৩০ লক্ষের বেশি মানুষের রোজগার। এ রাজ্যের অন্যতম প্রধান রফতানিকারী জিয়া নফিসের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের চর্মশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা চামড়ার মাত্র ২০ শতাংশ স্থানীয়। বাকি ৮০ শতাংশ অন্য রাজ্য থেকে আসে। ‘গো-হত্যা’ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে এই জোগান কার্যত বন্ধ হতে বসেছে বলে অভিযোগ চামড়ার ব্যবসায়ীদের।

আদালতের হস্তক্ষেপে বড়দিনের বরাত সরবরাহ করার মতো কাঁচা চামড়া পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত নফিসের মতো ব্যবসায়ীরা। কাঁচা চামড়াকে জিনিস তৈরির উপযুক্ত করতে মাস দু’য়েক সময় লাগে বলে জানান তিনি। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বড়দিনের বরাত সরবরাহ করা হয়।

গত বছর নোট সঙ্কটে বিশ্ব বাজারে মুখ পুড়েছিল এ রাজ্যেরও। চুক্তি অনুযায়ী সময়ে সরবরাহ না -করার কারণে ইউরোপ, আমেরিকার ক্রেতারা প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বরাত বাতিল করে দিয়েছিলেন। ব্যবসার পাশাপাশি মার খেয়েছিল ভাবমূর্তিও। গবাদি পশু বিক্রি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মের জেরে একই পরিস্থিতি এ বছরেও হতে চলেছিল বলে অভিযোগ চর্মশিল্পের।

রফতানি-বাজার

• চর্মশিল্পের মোট ব্যবসা প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা

• রফতানি অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকার

• এর কমপক্ষে ৫৫ শতাংশের বরাত আসে বড়দিনের জন্য

• নোট বাতিলের সময়ে সরবরাহ না-পাওয়ার আশঙ্কায় ৫০০ কোটির বরাত বাতিল করেছিল বিদেশি সংস্থাগুলি

• সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেই কারণে আপাতত কিছুটা স্বস্তি

কাঁচামাল সঙ্কট

• কাঁচামাল হিসেবে বছরে লাগে ৩০০ কোটি বর্গ ফুট চামড়া

• দেশে মোট ট্যানারি ১,৫৪৮টি

• উত্তরপ্রদেশেই ৩৬৩টি

• কাঁচা চামড়ার অভাবে ব্যবসা মার খাচ্ছে সারা দেশেই

• চর্মশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে অন্তত ৩০ লক্ষ মানুষের রুজি-রুটি

• আদালতের রায় কিছুটা আশ্বস্ত করবে তাঁদেরও

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE