ছবি: পিটিআই।
অবশেষে আতঙ্কের অবসান। ফেড রেট অর্থাৎ মার্কিন মুলুকে সুদের হার বাড়েনি। শুক্রবারের সূচক দেখলেই বোঝা যায়, এতে বাজার কতটা খুশি। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ির মতোই ঊর্ধ্বচাপ পেয়েছিল সেনসেক্স ও নিফটি। এক সময়ে সেনসেক্স বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ৫০০ পয়েন্ট। তবে পরের দিকে শেয়ার বিক্রির চাপে তা ধরে রাখতে পারেনি বাজার। দিনের শেষে ২৫৪ পয়েন্ট বেড়ে মুম্বই সূচক থিতু হয় ২৬,২১৯ অঙ্কে। এই সময়ে নিফটিও বেড়ে পৌঁছেছিল ৭,৯৮২ অঙ্কে।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এখনই সুদ না-বাড়ানোয় একটি বড় আশঙ্কা আপাতত মিটল। এর পর নজর থাকবে ডিসেম্বরে ফেড রেট বাড়ে কি না, তার উপর।
১৭ সেপ্টেম্বর ছিল আশঙ্কার দিন। ওই আশঙ্কা উতরে এ বার সামনে আছে আশা করার দিন। ২৯ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতি পর্যালোচনা করবে। ওই দিন সুদ কমানোর জন্য শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপর যথেষ্ট চাপ তৈরি হয়েছে শিল্প ও সরকারের তরফে। রঘুরাম রাজন অবশ্য সুদ কমানোর ব্যাপারে এখনও তেমন কোনও ইঙ্গিত দেননি। বরং মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবুও অনেকেরই আশা, ২৫ বেসিস পয়েন্ট হলেও সুদের হার কমবে ২৯ তারিখে। সুদ কমলে শেয়ার সূচক বাড়বে। বাড়তে পারে ব্যাঙ্ক শেয়ারের সূচকও। অর্থাৎ আগামী সাতটি কাজের দিন আশা-আশঙ্কায় দুলতে দেখা যাবে সেনসেক্স ও নিফটি-কে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদ আরও কমানোর পথে হাঁটে, তবে জমার উপরও সুদের হার আরও কমাবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। সে ক্ষেত্রে তা বিশেষ ভাবে আঘাত করবে সুদ-নির্ভর অসংখ্য মানুষকে। ব্যাঙ্ক-জমার আকর্ষণ কমলে আশা করা যায় কিছু মানুষ বেশি আয়ের আশায় মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বাজারের পথে পা বাড়াবেন।
সুদ কমা সত্ত্বেও যাঁরা সুরক্ষিত স্থির আয় প্রকল্পেই থাকতে চাইবেন, তাঁদের কাছে ডাকঘর জমা প্রকল্পগুলি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ব্যাঙ্ক-সুদ কমার কারণে। সঙ্গের ‘ডাকঘর সঞ্চয়’ সারণিতে কয়েকটি প্রকল্পে বর্তমান সুদের হার তুলে ধরা হল।
অনেকটা প্রতীক্ষার পরে অবশেষে চলতি সপ্তাহে বাজারে আসতে চলেছে ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরের প্রথম করমুক্ত বন্ড। যে-ক’টি সংস্থা এই বন্ড-ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে, তাদের মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম বাজারে আসছে সরকারি সংস্থা এনটিপিসি। কোম্পানি যে-সুদের হার ঘোষণা করেছে, তাকে বর্তমান বাজারে বেশ আকর্ষণীয়ই বলতে হবে। খুচরো (১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত) আবেদনকারীদের ২০ বছর মেয়াদে সুদ দেওয়া হবে ৭.৬২ শতাংশ। যাঁরা ৩০.৯ শতাংশ করের আওতায় পড়েন, তাঁদের কাছে এই সুদ করযোগ্য ১১.০৪ শতাংশের সমান। বাজারে বর্তমানে প্রচলিত সুদের তুলনায় অবশ্যই আকর্ষণীয়। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল এনটিপিসি বন্ডে বিভিন্ন মেয়াদে সুদের হার। এই বন্ডের ফেস ভ্যালু ১,০০০ টাকা। কিনতে হবে কমপক্ষে ১টি বন্ড। মেয়াদ তিন রকম— ১০, ১৫ এবং ২০ বছর। কেনা যাবে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকলে তবেই। ইস্যুর মোট আকার ৭০০ কোটি টাকা। খুচরো লগ্নিকারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ২৮০ কোটি টাকার বন্ড। এই বন্ডের রেটিং ‘এএএ’ (ট্রিপল-এ) অর্থাৎ বন্ডের টাকা ফেরত এবং যথাসময়ে সুদ পাওয়ার ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ সুরক্ষা। সুদ দেওয়া হবে বার্ষিক ভিত্তিতে।
২০১৪-’১৫ সালে কোনও করমুক্ত বন্ড বাজারে আসেনি। ২০১৩-’১৪ সালে ইস্যু করা করমুক্ত বন্ডে সুদের হার এ যাবৎ সর্বাধিক। কোনও কোনও বন্ডে সুদ দেওয়া হয়েছে কম-বেশি ৯ শতাংশ। যাঁরা ওই বছর করমুক্ত বন্ডে লগ্নি করতে পেরেছেন, তাঁরা অবশ্যই আজ নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন। আগামী ৯, ১৪ অথবা ১৯ বছর ধরে তাঁরা একই হারে সুদ পেতে থাকবেন। এর মধ্যে বাজারে বিক্রি করলেও পাওয়া যাবে মোটা প্রিমিয়াম।
এ বছর এনটিপিসি-র পরে এক এক করে আসতে থাকবে অন্যান্য অনুমোদিত সংস্থার বন্ড। তবে ২৯ তারিখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদ কমায়, তবে তার প্রভাব পড়তে পারে ওই তারিখের পরে ইস্যু করা বন্ডগুলিতে। ২০১৩-’১৪ সালের তুলনায় সুদের হার কমলেও এ বারের বন্ডেরও বেশ ভাল চাহিদা থাকবে। কারণ, সাধারণ মানুষকে চিন্তায় ফেলে ব্যাঙ্কের সুদ ইতিমধ্যেই নেমে গিয়েছে অনেকখানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy