Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সুদ বাড়ায় মুষড়ে পড়েনি বাজার

আশা এখন দেশীয় লগ্নি, সময়ে বর্ষাও

অশোধিত তেল এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধিকেই রেপো রেট বাড়ানোর কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাদের অনুমান, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ভাগে মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪.৭%। যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ০.৩% বেশি।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

বাজার আঁচ করেছিল আগেই। যা সত্যি করে গত সপ্তাহে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তা দাঁড়িয়েছে ৬.২৫%। এই সুদেই শীর্ষ ব্যাঙ্ক সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে ঋণ দেয়। টানা চার বছর পরে বাড়ানো হল যার হার।

অশোধিত তেল এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধিকেই রেপো রেট বাড়ানোর কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাদের অনুমান, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ভাগে মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪.৭%। যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ০.৩% বেশি। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশা, রেপো রেটের এই বৃদ্ধিতে অর্থনীতি তেমন ধাক্কা খাবে না। যে কারণে চলতি বছরে বৃদ্ধির পূর্বাভাসও ৭.৪ শতাংশেই ধরে রাখা হয়েছে।

একে তো রেপো রেট বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল আগেই। তার উপরে ভবিষ্যতে সুদ আরও বাড়তে পারে, এমন ইঙ্গিতও ঋণনীতিতে দেয়নি আরবিআই। ফলে সুদ বাড়ানোর ঘোষণায় বাজার তো মুষড়ে পড়েইনি, বরং চটজলদি চাঙ্গা হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে তাকে। সবাইকে অবাক করে সুদের হার ঘোষণার দিন এবং তার পরের দিন সেনসেক্স বেড়েছিল মোট ৫৬০ অঙ্ক। ফের পৌঁছয় ৩৫ হাজারের ঘরে।

তবে আপাতদৃষ্টিতে এই পরিবর্তন বড় মনে না হলেও, শিল্প-বাণিজ্য এবং শেয়ার বাজারের কাছে তার তাৎপর্য মোটেই ছোট নয়। কারণ—

• এর ফলে শিল্পঋণে সুদ বাড়বে। অনেক ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে বর্ধিত সুদের হার ঘোষণা করেছে।

• বাড়ি, গাড়ি ঋণে সুদ বাড়ার আশঙ্কা। যা দুই শিল্পের উপরেই কিছুটা আঘাত হানবে।

• ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির (এনবিএফসি) জমাতেও সুদ বাড়ার সম্ভাবনা। কোনও কোনও জায়গায় তা বাড়তে শুরু করেছে আগে থেকেই। জুলাই থেকে সুদ বাড়ানো হতে পারে কিছু ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পেও। এটা অবশ্য সুদ নির্ভর মানুষদের জন্য বেশ ভাল খবর।

হাল হকিকত

• রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

• এর জেরে শিল্পের নেওয়া ঋণে বাড়বে সুদ

• সুদ বাড়বে গাড়ি, বাড়ি-সহ অন্যান্য ঋণেও

• ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলির জমাতে মিলবে বেশি সুদ

• বন্ডের বাজারদর পড়বে। বাড়বে ইল্ড। চাপ বাড়বে বন্ড ফান্ডের

• এপ্রিল, মে মাসে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি মোটা অঙ্কের শেয়ার বেচেছে

• তবে দেশীয় মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি টানা পুঁজি ঢালেছে শেয়ারে, যা বাজারের পক্ষে ভাল

• সময়ের আগেই ভারতে ঢুকেছে বর্ষা। আশা, এ বার তা স্বাভাবিক হলে চাষ ভাল হবে। অর্থনীতি এগোবে। চাঙ্গা থাকবে বাজার

বন্ডের বাজার দর পড়বে। বাড়বে বন্ড ইল্ড। ফলে চাপ বাড়বে বন্ড ফান্ডগুলির উপর। এর প্রভাবে গত শুক্রবার এক সময়ে বন্ড ইল্ড ছাড়িয়েছিল ৮ শতাংশ। ব্যাঙ্কে সুদের হার বাড়লে আগে ইস্যু করা বন্ডের দাম কমে প্রকৃত আয় বা ইল্ড বেড়ে ওঠে। ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) ফান্ডগুলির জন্য তা মোটেও ভাল খবর নয়।

এ দিকে, এপ্রিল ও মে মাসে বিদেশি লগ্নিকারীরা মোটা অঙ্কের শেয়ার বেচলেও, বাজার তেমন জমি হারায়নি মিউচুয়াল ফান্ডের
মতো দেশীয় আর্থিক সংস্থাগুলির নাগাড়ে লগ্নির জেরে। এপ্রিলে এসআইপি-র পথে ফান্ডে লগ্নি এসেছে ৭,০০০ কোটি টাকার। এই পথে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে মোট লগ্নির অঙ্ক ছিল ৬৭,০০০ কোটি, যা তার আগের বছরের তুলনায় ২৩,১০০ কোটি টাকা বেশি।

জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে কয়েকটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে নতুন সুদের হার। যা চালু হবে ১ জুলাই থেকে। কয়েকটি প্রকল্পে সুদ বন্ড ইল্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ইল্ড সম্প্রতি ৮ শতাংশের আশেপাশে উঠে আসাতেই আশা করা হচ্ছে এ ধরনের কয়েকটি প্রকল্পে সুদ বাড়ানো হতে পারে। যে তালিকায় থাকতে পারে পিপিএফ, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, সুকন্যা সমৃদ্ধি ইত্যাদি। এটা হলে সুদ নির্ভর মানুষেরা স্বস্তি পাবেন কিছুটা। ইতিমধ্যেই তাঁরা কিছুটা হাঁফ ছেড়েছেন কিছু ব্যাঙ্ক, গৃহঋণ সংস্থা এবং এনবিএফসি আমানতে সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটায়।

লগ্নিকারীরা অবশ্য খুশি আরও একটি কারণে। অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে সময়ের আগেই বর্ষা ঢুকেছে দক্ষিণ ভারত দিয়ে। কেরল, কর্নাটক পেরিয়ে প্রবেশ করেছে পশ্চিম ভারতে। এরই মধ্যে ভাসিয়েছে মুম্বইকে। প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি পেয়েছে রাজ্যও। ১১ তারিখের মধ্যে পুরোপুরি ঢুকে পড়ার কথা গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায়। প্রত্যাশা পূরণ করে পুরো দেশে স্বাভাবিক বর্ষা হলে অর্থনীতির অগ্রগতি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তা হলে চাঙ্গা থাকবে শেয়ার বাজারও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE