মধ্যবিত্ত ক্রেতা টানতে এ বার উচ্চবিত্তদের জন্য চিহ্নিত বিলাস-বৈভব তাদের নাগালের মধ্যে হাজির করছে নির্মাণ শিল্প। সাধারণ আবাসন প্রকল্পগুলিও এখন উচ্চকোটির ক্লাব সংস্কৃতির বিলাসিতার মোড়কে সাজাচ্ছে তারা। ক্রেতার উপর বাড়তি খরচ না-চাপিয়েই জল, হাওয়া ও শব্দ দূষণ ঠেকানোর ব্যবস্থা, স্কাইওয়াক বা ডিজাইনার টাইলের মতো বিলাসিতার উপকরণ আগেও জোগান দিয়েছেন নির্মাতারা। কিন্তু তা মূলত ৪০ লক্ষ টাকার বেশি দামি বাড়ির জন্যই বরাদ্দ ছিল। ক্লাবের সুযোগ এ বার পাচ্ছেন ৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা দামের বাড়ির ক্রেতাও।
ক্লাবের চাহিদা অবশ্য নতুন নয়। ক্রেতাদের মধ্যে অবসর বিনোদনের এই চেনা মাধ্যমের প্রতি আকর্ষণ বরাবরই ছিল। আর সেই চাহিদাকে বিপণনের হাতিয়ার হিসেবে আগেও ব্যবহার করেছে বিভিন্ন স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা। কিন্তু বিলাসিতার এই ছোঁয়া এত দিন তথাকথিত উচ্চবিত্ত ক্রেতার জন্যই বরাদ্দ ছিল। এ বার সেই একই জাদু কাঠির ছোঁয়ায় বদলাচ্ছে মধ্যবিত্ত আবাসনের সংজ্ঞা।
আসলে সপ্তাহভর ইঁদুর-দৌড়ের ক্লান্তি দূর করতে সপ্তাহান্তে কিছুটা বিনোদনের শরিক মধ্যবিত্তও। লাউঞ্জ বার বা ডিস্কো, ফিল্ম দেখে রেস্তোরাঁয় খাওয়া, অথবা ‘মল হপিং’। গতে বাঁধা এই বিনোদনে একঘেয়েমি আছে। সমস্যাও আছে। ছোট ছেলেমেয়েদের হাত ধরে এ ধরনের ‘হ্যাং আউট’ সুবিধেজনক নয়। আর এই খামতি ভরাট করতে রয়েছে ক্লাব। পরিবারের সকলে মিলে হাত পা ছড়িয়ে ছুটি উপভোগ করার জায়গা। গ্যারাজ থেকে গাড়ি না-বার করেও আবাসনের ক্লাবে যাওয়া যাবে। বা কোনও দিন কাজের শেষে ইচ্ছা হলে ক্লাবে সময় কাটানো যেতেই পারে।
বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার এই চাহিদার হাত ধরে নতুন ব্যবসার খোঁজ পাচ্ছে শহরের নির্মাণ সংস্থাগুলিও। আবাসনের চৌহদ্দির মধ্যেই ক্লাব তৈরি হচ্ছে। সুইমিং পুল, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলার জায়গা থেকে রেস্তোরাঁ। সময় কাটানোর প্রায় সব উপাদানই মজুত ক্লাবগুলিতে। সিদ্ধা গোষ্ঠী আর এক ধাপ এগিয়ে রাজারহাটের সিদ্ধা টাউন প্রকল্পে ৩২ হাজার বর্গ ফুটের ক্লাবে তৈরি করেছে রাইফেল শুটিং রেঞ্জ। সংস্থার প্রধান সঞ্জয় জৈনের দাবি, মধ্যবিত্ত দামে পাঁচতারা বিলাসিতাই এই আবাসনকে ক্রেতা টানার দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে।
শুধুই অবসর যাপন নয়। মধ্যবিত্ত ক্রেতার কাছে ক্লাবের সদস্যপদ পাওয়াও আর এক স্বপ্নপূরণ বলে মনে করছে বিজিএ রিয়্যাল্টর্স ও সৃষ্টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট-এর মতো সংস্থা। কারণ ব্রিটিশ রাজের ‘বং কানেকশন’ হিসেবে আপাদমস্তক ঐতিহ্যে মোড়া শহরের ক্লাবগুলিতে পারিবারিক বা কর্পোরেট সূত্রে সদস্যপদ না-থাকলে ওই ঐতিহের ফটক পেরোনো প্রায় অসম্ভব। নির্মাণ সংস্থাগুলির দাবি, নিজের আবাসনের মধ্যেই ক্লাব পেয়ে সেই চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছেন মধ্যবিত্ত ক্রেতা। চাহিদা ও সরবরাহের ফাঁক ভরাট করতে সোনারপুর ও শিলিগুড়ির প্রকল্পে ক্লাব তৈরি করছে বিজিএ। একই ভাবে আসানসোল, দুর্গাপুর ও শান্তিনিকেতনে ক্লাব তৈরি করেছে সৃষ্টি।
প্রতিযোগিতার বাজারে সরাসরি ছাড় ও উপহারের চমক অবশ্যই ক্রেতা টানতে সাহায্য করে। কিন্তু একই সঙ্গে আর পাঁচটা প্রকল্পের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকল্পের বিশেষত্ব বজায় রাখতে ক্লাবের মতো বাড়তি বিলাসিতার ছোঁয়া কাজে দেয় বলে জানান নির্মাণ শিল্প বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের বাড়তি সুবিধা সংস্থা ও আবাসন প্রকল্প, দুইয়েরই ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করে দেয়। বাড়তি খরচের জন্য লাভের পরিমাণ কি়ঞ্চিত কমলেও দ্রুত বিক্রি হয়ে যায় এ ধরনের প্রকল্প।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy