লড়াই এ বার মুখোমুখি।
জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইব্যুনালে (এনসিএলটি) টাটাদের বিরুদ্ধে সাইরাস মিস্ত্রির দায়ের করা মামলার প্রথম শুনানি ছিল আজ। তবে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে টাটা সন্সের কাজকর্মে রতন টাটার হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে এ দিন কোনও অন্তর্বর্তী রায় দিতে অস্বীকার করে ট্রাইব্যুনাল। টাটা সন্স পর্ষদ থেকে রতন টাটা যাতে মিস্ত্রিকে সরাতে না-পারেন, সেই নির্দেশ দিতেও ট্রাইব্যুনালে আর্জি জানান সাইরাস। সেটিও বিবেচনা করেনি এনসিএলটি। ফলে সাইরাস মিস্ত্রির দাবি মেনে এখনই তাঁকে স্বস্তি দিল না ট্রাইব্যুনাল। অন্তর্বর্তী শুনানির পথে না-হেঁটে তারা চূড়ান্ত শুনানির দিন স্থির করেছে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি।
টাটা সন্সের মাথা থেকে গত ২৪ অক্টোবর সরে যেতে বাধ্য হওয়ার পরে ২০১৩-র কোম্পানি আইনের ২৪১ ও ২৪২ ধারায় গত ২০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন সাইরাস মিস্ত্রির পরিবার শাপুরজি-পালোনজি-র হাতে থাকা দু’টি সংস্থা সাইরাস ইনভেস্টমেন্টস এবং স্টার্লিং ইনভেস্টমেন্টস। তাদের মূল অভিযোগ টাটা গোষ্ঠীতে বাইরের হস্তক্ষেপ, খারাপ পরিচালনা, বিভিন্ন পক্ষের মতামত গ্রাহ্য না-করা ও ছোট শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ না-দেখা। বিপক্ষে রয়েছেন টাটা ট্রাস্টস-এর ট্রাস্টি-রা ও টাটা সন্সের ডিরেক্টররা। টাটা সন্সের দাবি, গোষ্ঠীর কর্ণধার হিসেবে ফিরে আসা রতন টাটার বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিগত শত্রুতা’রই জের এই মামলা। আইনি লড়াই শুরুর আগেই টাটা গোষ্ঠীর সব পর্ষদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন মিস্ত্রি।
দু’পক্ষের এই তিক্ততার মধ্যেই বিএসভি প্রসাদ কুমার (বিচারবিভাগীয় সদস্য) এবং ভি নাল্লাসেনাপতিকে (কারিগরি সংক্রান্ত সদস্য) নিয়ে গড়া এনসিএলটি-র ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী রায় না-দিয়ে বলেছে দু’পক্ষকেই আগে জানাতে হবে, কেন এই মামলা চালানো হবে। ট্রাইব্যুনালে মিস্ত্রির দাবি ছিল:
১) টাটা সন্সে ক্ষমতায় থাকা পরিচালন পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হোক।
২) তার বদলে তাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম দেখভালের জন্য নিয়োগ করা হোক প্রশাসক।
৩) সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতিকে নন-এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হোক।
৪) পর্ষদের সব বৈঠকে রতন টাটার যোগ দেওয়া বন্ধ হোক।
৫) টাটা সন্সে টাটা ট্রাস্টস-এর ট্রাস্টিদের ভুমিকা নিয়ে তদন্ত চলুক।
৬) ফরেনসিক অডিটের জন্য স্বাধীন অডিটর নিয়োগ করা হোক।
৭) মিস্ত্রির জায়গায় নতুন চেয়ারম্যান খুঁজতে যে-কমিটি গড়া হয়েছে, সেটিকে অকোজো করে নতুন কমিটি গড়া, যাতে সিলমোহর দেবে ট্রাইব্যুনাল।
এগুলি নিয়ে এ দিন কোনও অন্তর্বর্তী রায় দিতে অস্বীকার করে ট্রাইব্যুনাল।
আজ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সাইরাস মিস্ত্রিকে রতন টাটা ও টাটা সন্সের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সমর্থনে দাখিল করতে হবে নথিপত্র। মিস্ত্রির ওই সওয়ালের জবাব ১৫ দিনের মধ্যে দিতে হবে টাটাদের। জবাবের বিষয় নিয়ে পাল্টা আপত্তি জানাতে হলে মিস্ত্রির সংস্থা দু’টিকে তা করতে হবে আরও ১৫ দিনের মধ্যে।
দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতেই দু’পক্ষের সায় নিয়ে চূড়ান্ত শুনানির দিন স্থির করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাইব্যুনালের ডিভিশন বেঞ্চ। টাটা সন্সের কৌঁসুলি অভিষেক সিঙ্গভি-র দাবি, অপর পক্ষের সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মেনেই তাঁরা জবাব দেবেন। মিস্ত্রির তরফে কৌঁসুলি জনক দ্বারকাদাস-ও জানিয়েছেন, নির্দেশ মেনে সময়সীমার মধ্যে তাঁরা অভিযোগের প্রমাণ দাখিল করবেন।
সওয়াল জবাব
•মিস্ত্রির আর্জি মেনে অন্তর্বর্তী রায় নয়
•টাটা সন্স থেকে এখনই সরতে হচ্ছে না রতন টাটাকে
•খারাপ পরিচালনার অভিযোগ কেন, প্রশ্ন মিস্ত্রির কাছে
•বক্তব্য জানাতে হবে টাটাদেরও
•চূড়ান্ত শুনানি ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি
সাইরাস মিস্ত্রির আগেই অবশ্য আইনি পথে হেঁটেছেন গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় স্বাধীন ডিরেক্টর হিসেবে থাকা শিল্পপতি নুসলি ওয়াদিয়া। তিনি ইতিমধ্যেই ৩ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন রতন টাটা, টাটা সন্স ও কিছু ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে। মিস্ত্রির ‘সমর্থক’ বলেই টাটা গোষ্ঠী তার বিভিন্ন সংস্থার পর্ষদ থেকে সরাচ্ছে ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান ওয়াদিয়াকেও।
টাটা স্টিলের বিশেষ সাধারণ সভা বা ইজিএমে তাঁর ডিরেক্টর পদ বাতিল হয়েছে বুধবারই। হাজির থাকা শেয়ারহোল্ডারদের ৯০.৮ শতাংশ ওয়াদিয়াকে সরানোর পক্ষে ভোট দেন। বৃহস্পতিবার টাটা মোটরসের ইজিএমেও তাঁর বিপক্ষে ভোট দেন সিংহভাগ শেয়ারহোল্ডার। পাশাপাশি, রতন টাটার নেতৃত্বে আস্থা রেখেছেন তাঁরা। আগামী কাল টাটা কেমিক্যালসের ইজিএমেও একই ভাবে ওয়াদিয়াকে সরতে হবে বলে ইঙ্গিত সংশ্লিষ্ট মহলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy