—প্রতীকী চিত্র।
জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের দাম চড়া। অথচ বেতন তেমন বাড়ছে না।
এই ত্র্যহস্পর্শে মধ্যবিত্ত মানুষের বাজারে গিয়ে কেনাকাটা কমেছে। তাঁরা খরচ করতে চাইছেন না। খাবার থেকে তেল-সাবান-শ্যাম্পুর মতো রোজকার ব্যবহারের ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) প্রস্তুতকারক কিংবা গাড়ি-স্কুটারের নির্মাতারা তা টের পাচ্ছে। এ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন নেসলে, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, বজাজের মতো সংস্থার কর্তারা। আর তাঁদের অভিযোগকে হাতিয়ার করে নতুন করে মোদী শিবিরকে নিশানা করছে বিরোধীরা।
শিল্পমহলের মতে, শহুরে মধ্যবিত্তেরা আর্থিক ভাবে চাপে রয়েছেন। তাই খরচ করছেন না। গ্রামের অর্থনীতিতে ধাপে ধাপে উন্নতি হচ্ছে। উল্টো দিকে উচ্চমধ্যবিত্ত এবং ধনীরা দেদার খরচ করছেন। বিরোধীদের বক্তব্য, শিল্পের এই অভিযোগেই স্পষ্ট, মোদী জমানায় আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে। বিশেষত কোভিডের পরে বড়লোকেরা আরও ধনী হয়েছেন, গরিবেরা আরও গরিব।
সম্প্রতি নেসলে ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সুরেশ নারায়ণ বলেন, ‘‘আগে একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল, যেখানে আমরা ব্যবসা করতাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তাতে সঙ্কোচন হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, দেশের বড় ও মেট্রো শহরগুলিতে ব্যবসা বৃদ্ধির হার ভাল নয়। গত ছয় থেকে নয় মাসে মধ্যবিত্ত মানুষের কেনাকাটার ক্ষমতা কমেছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সব থেকে বড় চিন্তা।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বড়লোকদের উপরে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তেমন পড়ে না। দেশের গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষকে ঢালাও ভর্তুকি দিচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। মাঝখানে পড়ে মার খাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এমনিতেই চাকরির বাজারের হাল ভাল নয়। বেতন তেমন বাড়ছে না। ফলে হাতে খরচ করার জন্য অর্থ কমেছে। তাই কমেছে এফএমসিজি পণ্যের বিক্রি। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য অর্থনীতিবিদ রথীন রায় বলছেন, ‘‘জনসংখ্যার উপরের ১০% মানুষের মাথা পিছু আয় ১০ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে। একেবারে গরিবদের আয় বেড়েছে। কারণ তাঁরা ভর্তুকি পাচ্ছেন। কিন্তু ভর্তুকির টাকায় ভর্তুকিতে দেওয়া পণ্যের কেনাকাটাই বাড়ে। এফএমসিজি পণ্যের বিক্রি বাড়ে না। আর ধনীরা বিদেশ থেকে আমদানি করা দামি জিনিসে খরচ করেন।’’
টাটা কনজ়িউমার প্রোডাক্টসের এমডি সুনীল ডি’সুজ়াও মন্তব্য করেন, মধ্যবিত্তের কেনাকাটা কমেছে। কারণ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার খাতায়-কলমে যা, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি। যে কারণে বজাজ অটোর আশঙ্কা তাদের স্কুটার-বাইকের বিক্রি বৃদ্ধির হার মাত্র ৩-৫ শতাংশ থাকবে। এত দিন আশা ছিল ৮-৯ শতাংশ। শিল্পের দাবি, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে স্মার্টফোন কেনায় খরচের হারও আশানুরূপ নয়। যা আর্থিক বৈষম্যের প্রতিফলন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, ৩০,০০০ টাকার বেশি দামের স্মার্টফোন বিক্রিতে বৃদ্ধির হার চড়া, ৪৫,০০০ টাকার উপরেরগুলির ক্ষেত্রে তা আরও বেশি। অর্থাৎ বিত্তবানেরা হাত খুলে খরচ করছেন। রাশ টানছেন সাধারণ রোজগেরে মানুষ।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের অভিযোগ, ‘‘আর্থিক বৈষম্য, বেতন বৃদ্ধি না হওয়া, মূল্যবৃদ্ধি— এগুলি শুধু রাজনৈতিক দোষারোপের বিষয় নয়। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির ভিত দুর্বল হবে। মোদী সরকার যদি বিরোধীদের কথা না শুনতে চান, তা হলে অন্তত নিজের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার কথা শুনুক। তিনিই অর্থনীতিতে কর্পোরেট সংস্থাগুলির নতুন কারখানায় লগ্নির পরিবর্তে আর্থিক ক্ষেত্রে লগ্নি নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন।’’
শিল্পমহল, অর্থনীতিবিদ থেকে বিরোধী শিবির— সকলের তোপের মুখে আজ মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রক স্টেট ব্যাঙ্কের একটি গবেষণা রিপোর্টকে তুলে ধরেছে। সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ সাল বা মোদী সরকারের ১০ বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের মানুষের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য ৭৪.২% কমে গিয়েছে। রমেশের পাল্টা যুক্তি, ‘‘আর্থিক বৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য বেসরকারি লগ্নি প্রয়োজন। জিডিপি-র তুলনায় যার হার মোদী সরকারের ১০ বছরে ২৮.৭ শতাংশে নেমেছে, যা ইউপিএ সরকারের দশ বছরে ছিল ৩৩.৪%।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy