আমেরিকা অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতীয় পণ্যের উপরেও ১০% আমদানি শুল্ক কার্যকর করেছে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৬% শুল্ক চালু হবে ৯ এপ্রিল থেকে। ফলে আশঙ্কা চড়তে শুরু করেছে রফতানি সংস্থাগুলির। বিশেষত বৈদ্যুতিন ও গয়না ক্ষেত্রে। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুযায়ী, ভারত-আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তির জন্য মরিয়া আলোচনা চালাচ্ছেন দুই সরকারের আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, এত দ্রুত চুক্তি হয়ে যাবে এমন আশা কোনও পক্ষই করছে না। তবে ওয়াশিংটনের চড়া শুল্কের জেরে অন্যান্য দেশ থেকে যাতে সস্তার পণ্য বাজার ছেয়ে ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখছে দিল্লি। যে সমস্ত ক্ষেত্রের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, সেগুলির জন্য বিকল্প রফতানি বাজারের খোঁজ চলছে। নজরে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কেন্দ্র মনে করছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত ভাল জায়গায় রয়েছে। ফলে বাণিজ্য আলোচনা থেকে ‘লাভ’ ঘরে তোলা যাবে। আপাতত চলছে তার কৌশল তৈরি।
এরই মধ্যে ফের হুঙ্কার ছেড়েছেন ট্রাম্প। শনিবার নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আমেরিকাবাসীকে কিছু দিন শুল্ক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপুল লগ্নি এবং সমৃদ্ধি আসবে তাঁদের সমাজে। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমরা এত দিন মূক ও অসহায় ছিলাম। কিন্তু আর নয়। এ বার আমরা চাকরি এবং ব্যবসা ফিরিয়ে আনছি। যা আগে কখনও হয়নি। এটা একটা আর্থিক বিপ্লব। এবং আমরা জয়ী হব। অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে। এটা একেবারেই সহজ নয়। কিন্তু চূড়ান্ত ফল ঐতিহাসিক হবে।’’
ভারত ‘উঁচু শুল্কের দেশ’ বলে বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, দিল্লি আমেরিকার পণ্যে শুল্ক কমালে তাঁদের রফতানি অন্তত ৫৩০ কোটি ডলার বাড়তে পারে। আবার ট্রাম্পের শুল্কের বিরূপ প্রভাব ১৪০০ কোটি ডলারের বৈদ্যুতিন পণ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রফকানিকারীদের। গয়না ও পাথরের ক্ষেত্রে তা ৯০০ কোটি ডলার। সূত্রের খবর, এই অবস্থায় ভারত, ভিয়েতনাম এবং ইজ়রায়েলের সঙ্গে সবচেয়ে আগে বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে আমেরিকা। চলছে আলোচনা। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত-আমেরিকার বাণিজ্যের অঙ্ক দ্বিগুণ করে ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চান। যদিও সেই সফরের মাঝে ট্রাম্প শুল্ক-হুঁশিয়ারি দেন।
এ দিন সরকারকে প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার পরামর্শ, শিল্পের পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিক কেন্দ্র। যাতে জাতীয় স্বার্থ অগ্রাধিকার পায়। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি হোক ‘টাস্ক ফোর্স’।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)