মিষ্টিমুখ: হালুয়ার হাতা জেটলির হাতে। বাজেটের নথি ছাপার কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হল শনিবারই। দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ মেনে অর্থ মন্ত্রকে চাপল হালুয়ার কড়াইও। পরিবেশনে খোদ অর্থমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
ছোটদের পরে বড়দের উপহার দেওয়ার পালা।
ছোট-মাঝারি সংস্থাকে গত তিন বছর ধরে কোম্পানি করে সুবিধা দেওয়ার পরে বড় সংস্থার জন্যও এ বারের বাজেটে সেই বোঝা কমাতে পারেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ভোটের মুখেই তিনি সুখবরটা শিল্পমহলকে দিতে চান বলে ইঙ্গিত সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
২০১৫-র বাজেট বক্তৃতায় জেটলি নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, ভারতে কোম্পানি কর বা কর্পোরেট ট্যাক্সের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বড্ড বেশি। তাই ৩০ শতাংশ থেকে তা ধাপে ধাপে ২৫ শতাংশে কমিয়ে আনা হবে। তার জন্য ৪ বছর সময়ও চেয়েছিলেন জেটলি।
তবে মোদী সরকার বাজেটে উত্তরাধিকার কর ফিরিয়ে আনতে পারে বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দেওয়ায় আতঙ্কিত শিল্প ও ব্যবসায়ী মহল। উত্তরাধিকর সূত্রে পাওয়া বিষয়-সম্পত্তির উপর এই কর অতীতে ভারতেও চালু ছিল ‘এস্টেট ডিউটি’ হিসেবে। ১৯৮৫ সালে রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে তা উঠে যায়। জেটলি নতুন করে এই কর বসানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করায় শিল্পমহলের প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে আর কোম্পানি করে ছাড় দিয়ে কী লাভ।
সাল অঙ্ক
• ২০১৪-’১৫ ৪.২৯
• ২০১৫-’১৬ ৪.৫৩
• ২০১৬-’১৭ ৪.৯৪
• ২০১৭-’১৮ ৫.৩৮*
(*আনুমানিক)
কোম্পানি কর লক্ষ কোটি টাকায়
গত তিন বছরে ছোট-মাঝারি, নতুন সংস্থার জন্য জেটলি কোম্পানি করের ভার কমিয়েছেন। বছরে ৫০ কোটি টাকার কম ব্যবসা রয়েছে, এমন সংস্থাগুলিই সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু বড় সংস্থার বরাত খোলেনি। এ বার তাই বাজেটের আগে শিল্পপতিরা অর্থমন্ত্রীকে তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এক দফায় হয়তো কোম্পানি করের হার কমে ২৫ শতাংশ হবে না। কিন্তু অন্তত ২৮ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কমপক্ষে বছরে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা করছে, এমন সংস্থাগুলিকে সুরাহা দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, এটা নিছক উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা নয়। মোদী জমানার চার বছর কাটতে চললেও, দেশীয় শিল্প সংস্থাগুলি তেমন লগ্নি করতে এগিয়ে আসেনি। বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি। আর্থিক বৃদ্ধির হারও এ বছর ৬.৫ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা। সেই কারণেই কোম্পানি করের হার কমিয়ে মোদী-জেটলি লগ্নি, বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরিতে গতি আনতে চাইছেন। অর্থ মন্ত্রকও মনে করছে, ৩০ শতাংশ হারে করের চাপে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে এ দেশের সংস্থাগুলি। নানা খাতে কর ছাড় দিতে গিয়ে আদতে সরকারের ৩০ শতাংশ আদায়ও হয় না। অথচ ভারতে কোম্পানি কর খুব বেশি বলে আন্তর্জাতিক মহলে ভুল বার্তা যায়।
শিল্পমহল চায়, ম্যাট (মিনিমাম অল্টারনেট ট্যাক্স) ও ডিভিডেন্ড বণ্টন কর বা ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স (ডিডিটি)-এর বোঝাও কমানো হোক। বণিকসভার এক কর্তার যুক্তি, ‘‘অর্থমন্ত্রী যদি রাজকোষ ঘাটতির কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত কোম্পানি কর কমাতে না পারেন, তা হলে ম্যাট, ডিডিটি-র হার কমালেও করের বোঝা অনেকটাই কমবে।’’
যে সব সংস্থাকে নানা রকম ছাড়ের ফলে আখেরে কোনও করই মেটাতে হয় না, তাদের ক্ষেত্রেই একটি ন্যূনতম বিকল্প কর বা ম্যাট চাপে। তবে শিল্পমহলের যুক্তি, এর ফলে নগদ জোগানে সমস্যা হচ্ছে। শেয়ারের মালিকদের ডিভিডেন্ড বণ্টনের সময়ে সংস্থাকে ডিডিটি মেটাতে হয়। শিল্পমহলের দাবি, শেয়ারের মালিকদের কাছ থেকেই এই কর আদায় করা হোক। শিল্পমহলের যুক্তি, করের বোঝা কমলে ব্যবসা বাড়বে, অর্থনীতির আয়তনও বাড়বে। ফলে আখেরে সরকারের আয়ও বাড়বে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে ছোট-মাঝারি, নতুন সংস্থার করের হার কমানোর ফলেও সরকারের কোম্পানি কর আদায় বেড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy