আধার নম্বরের ভিত্তিতে সহজে মোবাইল ফোনের সংযোগ নেওয়ার পদ্ধতি স্থির করতে টেলিকম দফতরকে (ডট) নির্দেশ দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সেই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে মোবাইল সিম-এর জলিয়াতিও রুখতে চায় ডট। কলকাতা-সহ দেশের চার শহরে পাইলট প্রকল্পের পরে এ বার তার প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে ডট।
ফোনের সংযোগ নেওয়া বা সিম কেনার সময়ে আবেদনপত্র দাখিল করতে হয় গ্রাহককে। সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) চেয়েছিল আধার নম্বরের ভিত্তিতে বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে দেওয়া হোক সংযোগ। এতে প্রক্রিয়া সহজ হবে। কমবে কাগজের ব্যবহারও। নতুন ব্যবস্থায় আধারের তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে ইচ্ছুক গ্রাহকের তথ্য যাচাই করে সংযোগ দেওয়ার পরিকাঠামো গড়ার জন্য চার শহরে মাসখানেক ধরে পাইলট প্রকল্প চালানো হয়। ডট সূত্রের খবর, কলকাতায় ভোডাফোন, পটনায় এয়ারটেল, মুম্বইয়ে রিলায়্যান্স জিও এবং দিল্লিতে আইডিয়া প্রকল্পের দায়িত্বে ছিল।
গ্রাহকের দেওয়া তথ্য জালিয়াতি করে জাল মোবাইল সিম বিক্রির রমরমা সর্বত্র ছড়িয়েছে। বাদ নেই এ রাজ্যও। বছরখানেকের মধ্যে প্রায় ১৫ লক্ষ ভুয়ো মোবাইল সংযোগ কেটে দেওয়ার পাশাপাশি টেলিকম সংস্থাগুলিকে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল ডট। অভিযুক্ত বিক্রেতাদেরও কালো তালিকায় আনা হয়েছে। ডট-এর দাবি, আধার নম্বরের ভিত্তিতে সিম বিক্রি চালু হলে জালিয়াতি রোখা সহজ হবে।
কী সেই ব্যবস্থা?
দফতর সূত্র জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত যা পরিকল্পনা, তাতে সিম বিক্রির দোকানে টেলিকম সংস্থার সংযোগ দেওয়ার জন্য যন্ত্র বসানো থাকবে। সেই যন্ত্রে দোকানের তরফে একজন স্বীকৃত ব্যক্তি প্রথমে গ্রাহকের আঙুলের ছাপ দিয়ে ওই ব্যবস্থায় ‘লগ ইন’ করবেন। এরপর গ্রাহকের আঙুলের ছাপ সঙ্গে সঙ্গে আধারের তথ্যভাণ্ডারে চলে যাবে যাচাইয়ের জন্য। ওই ছাপ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের আধারের তথ্যের সঙ্গে মিলে গেলে তাঁর ছবি ও তথ্য সরাসরি একটি বৈদ্যুতিন আবেদনপত্রে ভরা হবে। কিন্তু সেই তথ্য কেউ বদল করতে পারবেন না।
প্রস্তাবে আরও ভাবা হয়েছে, এরপর দ্বিতীয় বার গ্রাহক আঙুলের ছাপ দিলে একই রকম ভাবে শুধু ওই সময়ের জন্য তাঁর একটি ‘ডিজিটাল’ সই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় তৈরি হয়ে আবেদনপত্রেই ছাপা হয়ে যাবে। সেটিও বাইরে থেকে কেউ পরিবর্তন করতে পারবেন না। নির্দিষ্ট দিন ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে এই ব্যবস্থা গড়তে পারলে জালিয়াতি রোখা অনেক সহজ হবে, দাবি কর্তাদের।
তবে জালিয়াত বিক্রেতারা তথ্য ঠিক মতো ভরা হয়নি বা প্রক্রিয়াটি অসম্পূর্ণ থাকার কারণ দেখিয়ে দু’বার গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নিয়ে দু’টি সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন বলে আশঙ্কা দফতরের। এ ক্ষেত্রে প্রথম ছাপটি ব্যবহার করে বিক্রেতা জাল সিম বেচতে পারেন। সে দিকেও তাই একটি রক্ষাকবচ রাখতে চাইছে ডট।
যেমন, আবেদনপত্র ভরার পরে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং সংযোগ মেলার পরে আঞ্চলিক ভাষায় তা ঘোষণা করার ব্যবস্থা থাকবে ওই দোকানেই। ফলে, যতক্ষণ না সেই ঘোষণা হবে, ক্রেতা বুঝবেন ততক্ষণ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়নি। আর ঘোষণা হয়ে গেলে বিক্রেতা আর গ্রাহককে বিভ্রান্ত করে নতুন ভাবে আঙুলের ছাপ নিতে পারবেন না। পাশাপাশি কারও ন’টার বেশি সিম রয়েছে কি না, সেটাও নতুন সংযোগের সময়ে দেখে নেওয়ার ব্যবস্থা তৈরির বিষয়টি ভেবে দেখছে টেলিকম দফতর।
অন্য দিকে, নতুন গ্রাহকদের পাশাপাশি পুরনোদেরও আধার নম্বর নথিভুক্ত করানোর জন্য উদ্যোগী হবে টেলিকম দফতর। এখন বিভিন্ন রকমের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মোবাইলের সিম কেনেন গ্রাহকেরা। টেলিকম দফতরের বক্তব্য, যাঁদের আধার নম্বর রয়েছে, ওই ব্যবস্থা চালু হলে ভবিষ্যতে তাঁদেরও সেই নম্বর নথিভুক্ত করা হবে।
তবে গ্রাহকদের অনেকেরই অভিযোগ, তাঁদের তথ্য নিয়ে জালিয়াতি করে বাড়তি সিম চালু করা হয়েছে কি না, তা জানার কোনও ব্যবস্থাই নেই। ‘পোস্ট-পেড’ সংযোগের ক্ষেত্রে তা-ও ফোনের বিল থাকে। কিন্তু প্রি-পেড সংযোগে সংস্থার তরফে সিম ছাড়া আর কোনও নথিপত্র দেওয়া হয় না। গ্রাহকদের দাবি, সে রকম নথিপত্র দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি একজন গ্রাহকের নামে ক’টি সিম কেনা হয়েছে তা যাচাই করার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকা জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy