কেন্দ্রীয় বিক্রয়কর (সিএসটি) তুলে দিয়ে সারা দেশে একটি অভিন্ন পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালুর উদ্দেশ্যে রাজ্যগুলিকে আপাতত ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হল কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের অর্থ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যগুলি যাতে তাদের বকেয়া প্রাপ্য পায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় কর কাঠামো পরিবর্তন করতে সংসদের আগামী শীতকালীন অধিবেশনে বিল আনা হতে পারে।
গত বছর জানুয়ারি মাসে রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গড়া ভারপ্রাপ্ত বা ‘এমপাওয়াডর্’ কমিটির বৈঠকে হিসেব করা হয়, সিএসটি তুলে দিয়ে জিএসটি চালু করার জন্য ২৯টি রাজ্যের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে আপাতত ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যগুলিকে মেটাতে উদ্যোগী কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গ অর্থ দফতরের এক সূত্র জানান, এর ফলে রাজ্যের বকেয়া প্রাপ্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার আশা উজ্জ্বল হল।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান জম্মু-কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী আবদুল রহিম রাঠের বলেন, “২০১০ সাল থেকে প্রায় সব রাজ্যই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছিল, ক্ষতিপূরণ না-মিললে জিএসটি চালু করা সম্ভব নয়। আগের ইউপিএ সরকার তা মানেনি।” তা হলে ক্ষমতায় বসার অল্প দিনের মধ্যে নতুন কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির এত দিনের দাবি মানতে চলেছে কী ভাবে?
রাঠের বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগেও একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সিএসটির বদলে জিএসটি চালু হলে রাজ্যের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়া, সবই তিনি জানেন। তাই ক্ষমতায় বসেই তার বিহিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি।”
কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিহারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সুশীল মোদী অবশ্য নিজেই বিজেপি নেতা। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জেনে তিনি যারপরনাই খুশি। পটনা থেকে টেলিফোনে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব আর এস গুজরাল ২০১২-র জুনে কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র স্থির করেছে রাজ্যগুলিকে ভ্যাট আদায়ের হার ৪% থেকে বাড়িয়ে ৫% করতে হবে। তাতে যে-সম্পদ সংগ্রহ হবে, তা সিএসটি তুলে দেওয়ার কারণে তৈরি ঘাটতির চেয়ে অনেক বেশি। তাই কেন্দ্র স্থির করে, ২০১০-’১১ অর্থবর্ষ থেকে বকেয়া আর দেওয়া হবে না। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্যই ভ্যাট আদায়ের হার বাড়ায়নি। ফলে তাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। সুশীলবাবুর কথায়, “ইউপিএ সরকারের ওই ভুল সিদ্ধান্তগুলি এনডিএ শুধরে নিচ্ছে।”
বিভিন্ন রাজ্যের বকেয়ার যৌক্তিকতা খুঁজে দেখতে ভারপ্রাপ্ত কমিটির সদস্য সচিব সতীশ চন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রেশমি বর্মাকে নিয়ে একটি কমিটিও তৈরি করে দেয় ইউপিএ সরকার। সুশীল মোদী বলেন, “সেই কমিটি তার রিপোর্টে বলেছে, কোনও পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতি এবং আলোচনা ছাড়াই রাজ্যগুলির বকেয়া প্রাপ্য কাটা হয়েছিল। সেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ওই রিপোর্টটি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকও স্বীকার করে নেয়। বর্তমান সরকার সেই রিপোর্ট মেনে নিয়েই রাজ্যগুলির বকেয়া ৩৪ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, জিএসটি সারা দেশে চালু হলে কয়লার জন্য পশ্চিমবঙ্গের ‘সেস’ আদায় বা পেট্রোল উত্তোলনের জন্য অসমের প্রাপ্য কর বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। এই ধরনের প্রশ্ন তুলে ২৯টি রাজ্যই বর্তমান অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠি দেয়।
কয়েক মাস আগে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, সিএসটি বিলোপ করে জিএসটি চালুর ব্যাপারে ইউপিএ সরকারের সিদ্ধান্তকে ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে নীতিগত সমর্থন জানানো হয়। বহু রাজ্যও জিএসটি-র ধারণাকে সমর্থন করে। কিন্তু অমিতবাবু বলেন, “রাজ্যগুলির হাতে টাকা ছাপানোর ক্ষমতা নেই। রাজস্ব আদায়ের উৎস খুবই কম। যেগুলো আছে, তাও যদি জিএসটি-র চাপে বন্ধ হয়ে যায়, রাজ্যকে নিশ্চিত ভাবেই কেন্দ্রের দয়ার উপর নির্ভর করে থাকতে হবে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে একটিমাত্র কর ব্যবস্থা বা জিএসটি চালু করতে গেলে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা চলবে না, এটা কেন্দ্রকে বুঝতেই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy