তালা পড়ছে পশ্চিমবঙ্গের আরও দু’টি কারখানায়। হলদিয়ার কারখানার পরে এ বার রোহিত ফেরোটেক তাদের বাঁকুড়ার দু’টি কারখানাও বন্ধ করে দিতে চলেছে। এবং এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের চড়া বিদ্যুতের দামকেই দায়ী করছেন কর্তৃপক্ষ। বাঁকুড়ার কারখানা দু’টি বন্ধ হলে প্রায় ১,০০০ জন কাজ হারাবেন। এর আগে রোহিতের হলদিয়া কারখানা বন্ধ হওয়ার জেরে কাজ হারিয়েছেন ৬০০ জন।
রোহিত ফেরোটেকের প্রোমোটার অঙ্কিত পাটনির অভিযোগ, ‘‘ডিভিসি এবং ডিপিএলের কাছ থেকে যে-দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তার থেকে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দাম ৩৫ শতাংশ বেশি। এর ফলে লাগাতার লোকসানে চলছে কারখানা দু’টি। উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, যে-সব সংস্থা ডিভিসি অথবা ডিপিএলের বিদ্যুৎ কেনে তাদের উৎপাদন খরচ আমাদের থেকে টন প্রতি ৭ হাজার টাকা করে কম পড়ে।’’
অঙ্কিতবাবু জানান, এই ধরনের মাঝারি সংস্থায় উৎপাদনের খরচের অর্ধেকই হয় বিদ্যুৎ কিনতে। তাই তার দাম বেশি পড়ায় কারখানা চালানোই দায়। উৎপাদন খরচের একটা হিসাব দিতে গিয়ে অঙ্কিতবাবু বলেন, ‘‘আমাদের মতো কারখানায় ডিভিসি অথবা ডিপিএল-এর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনলে প্রতি টন ইস্পাত তৈরির খরচ পড়ে ৪৮ হাজার টাকা। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে টন প্রতি ৫৫ হাজার টাকা।’’
রোহিত ফেরোটেকের কারখানা দু’টি রয়েছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। একটিতে তৈরি হয় স্টেনলেস স্টিল, অন্যটিতে ফেরো-অ্যালয়। অঙ্কিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘কারখানা দু’টিতে গত কয়েক বছর ধরেই লোকসান চলছে। ২০১৪-’১৫ সালেই যার পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা। লোকসান কমাতেই তাই সেগুলি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যে শিল্পায়নের জন্য সরকার যে-পরিকল্পনা করেছে, তার প্রধান স্তম্ভ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট শিল্পকে। অথচ শিল্পকে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য যে-নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে, তার ফলে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছে ওই ধরনের বেশ কিছু সংস্থা। কী সেই নীতি?
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণ স্বরূপ নিগম-এর বক্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের বিদ্যুতের দাম ঠিক করে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। আমরা শুধু শিল্পকেই বিদ্যুৎ দিই না। রাজ্যে সাধারণ মানুষকে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। কম দামে বিদ্যুৎ জোগান দিই কৃষির জন্যও। তাই শিল্পে বিদ্যুতের দাম বেশি রাখা হয়েছে।’’ অর্থাৎ নিগমের কথা অনুযায়ী সাধারণ মানুষ এবং কৃষিতে বিদ্যুতে ভর্তুকির লোকসান পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে শিল্পের কাছ থেকে। এর ফলে তাদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিদ্যুতের দাম যে ডিভিসি এবং ডিপিএলের থেকে অনেকটাই বেশি পড়ছে, তা কবুল করেছেন নিগম। রাজ্যের এই নীতির কোপে পড়েই নাভিশ্বাস উঠেছে ফেরো অ্যালয়-সহ বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি ইস্পাত সংস্থার।
হুগলি চেম্বার অব কমার্স জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই হলদিয়ার কারখানা-সহ রাজ্যে মোট ৪টি ফেরো-অ্যালয় কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কারখানাই রাজ্যের পিছিয়ে পড়া অঞ্চল বাঁকুড়ায়। গত তিন বছরে ফেরো-অ্যালয় ছাড়াও ২০টির মতো ছোট ও মাঝারি ইস্পাত সংস্থা হয় বন্ধ হয়েছে, না-হয় উৎপাদন কমিয়ে লোকসান কমানোর রাস্তায় হেঁটেছে।
অঙ্কিতবাবু জানান, ‘‘বিদ্যুতের মাসুল কমানোর জন্য ইতিমধ্যেই কয়েক বার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁরা দেখা করেননি। বাঁকুড়ার কারখানা বন্ধ করার আগে একবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করে আমাদের সমস্যার কথা জানানোর শেষ চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy