Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
সুবিধা পেতে পারেন ক্রেতা

বৈদ্যুতিক গাড়িতে ভর্তুকির প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র

দু’চাকা হোক বা চার চাকা। আগামী দিনে যে কোনও বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলেই ক্রেতাকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে কেন্দ্র। আপাতত এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিবেচনাধীন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, মাস কয়েকের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অম্বুজ শর্মা দিল্লি থেকে ফোনে জানান, সাধারণত পেট্রোলের মতো প্রথাগত জ্বালানিতে চলা কোনও গাড়ির তুলনায় তার বৈদ্যুতিক সংস্করণের দাম গড়ে প্রায় ৩০% বেশি।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

দু’চাকা হোক বা চার চাকা। আগামী দিনে যে কোনও বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলেই ক্রেতাকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে কেন্দ্র। আপাতত এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিবেচনাধীন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, মাস কয়েকের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অম্বুজ শর্মা দিল্লি থেকে ফোনে জানান, সাধারণত পেট্রোলের মতো প্রথাগত জ্বালানিতে চলা কোনও গাড়ির তুলনায় তার বৈদ্যুতিক সংস্করণের দাম গড়ে প্রায় ৩০% বেশি। আপাতত ওই ৩০% বাড়তি দামের ৩৫% ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দু’চাকা বা চার চাকা সব ধরনের গাড়িতেই এই সুবিধা মিলবে।

এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্পে অনুমোদন পেতে তা অর্থ মন্ত্রকের ‘এক্সপেন্ডিচার ফিনান্স কমিটি’ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিসভা সায় দিলে, অর্থ মন্ত্রক তাতে চূড়ান্ত সিলমোহর দেবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যে এই প্রথম ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, এমন নয়। এর আগে ইউপিএ জমানায় অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রক দুই ও চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলে ভর্তুকি দিত। কিন্তু সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ। এর পর নতুন প্রযুক্তি এনে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে উৎসাহ দিতে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ধরনের পরিকাঠামো গড়তে গত জানুয়ারিতে ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রিক মোবিলিটি মিশন প্ল্যান-২০২০’ (এনইএমএমপি) ঘোষণা করেছিল মনমোহন-সরকারের ভারী শিল্প মন্ত্রক। ভর্তুকি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সমেত প্রকল্পটি কী ভাবে কার্যকর করা উচিত, তা গাড়ি শিল্পের সঙ্গে কথা বলে যৌথ ভাবে স্থির করেছিল তারা।

কারণ, গাড়ি কিনলে ভর্তুকির রেওয়াজ আগে থাকলেও বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি, তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণ, গবেষণা ইত্যাদির জন্য কোনও উৎসাহ প্রকল্প কার্যত ছিল না। আর সেই কারণেই এই গাড়ির বাজার এ দেশে এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। তাই নতুন (এনইএমএমপি) প্রকল্পে সার্বিক ভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের সহায়ক পরিবেশ তৈরির উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। মাথায় রাখা হয়েছে যে, এর আগে হোন্ডা, মারুতি-সুজুকি ইত্যাদি সংস্থা ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি আনলেও, মূলত তার চড়া দাম ও গাড়ি চার্জ করানোর পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত সেই ব্যবসা থেকে সরে গিয়েছিল।

শর্মা জানান, গোড়ায় গাড়ি চার্জ দেওয়ার মতো পরিকাঠামো গড়তে কেন্দ্র ২০০ কোটি টাকার মতো সহায়তা দেবে। তারপর তা তৈরির জন্য উৎসাহ দেওয়া হবে যৌথ উদ্যোগ তৈরিতে। উল্লেখ্য, ৬ থেকে ৮ ঘণ্টায় একটি বৈদ্যুতিক গাড়িতে চার্জ দেওয়ার মতো পরিকাঠামো গড়তে সাধারণত ১০-২০ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু দ্রুত চার্জ দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে খরচ কয়েক লক্ষ টাকা।

বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ তাতে ব্যবহৃত লিথিয়াম ব্যাটারির মূল্য বেশি হওয়া। এখন ওই ব্যাটারি-সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। কিন্তু আগামী দিনে তা দেশেই তৈরির জন্য গবেষণার কাজে ১,০০০ হাজার কোটি টাকা করে দিয়ে মোট ২,০০০ কোটির তহবিল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র ও গাড়ি শিল্পমহল। নয়া পরিকল্পনায় ওই প্রস্তাবও স্থান পেয়েছে। অটোমোটিভ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া, আইআইটি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণা হতে পারে। প্রস্তাব আছে যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক কমানোরও।

একই সঙ্গে, রাজ্যগুলিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে উৎসাহ দেওয়ারও আর্জি জানাচ্ছে কেন্দ্র। শর্মার বক্তব্য, দিল্লি ও গোয়ায় এ ধরনের গাড়ির উপর যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) কিংবা রেজিস্ট্রেশন কর নেই। এ বার অন্য রাজ্যগুলিও সেই পথে হাঁটলে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার আগ্রহ বাড়বে। সব মিলিয়ে, মাস কয়েকের মধ্যেই কেন্দ্রের প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশা করছেন তিনি।

এনইএমএমপি প্রকল্পে কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল এ দেশে গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়াম-ও। সিয়ামের ডিরেক্টর জেনারেল বিষ্ণু মাথুর জানান, তাঁরাও কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। নীতি তৈরির পরে এ বার প্রকল্প পুরোদস্তুর চালু হলে, শুধু যাত্রীগাড়ি (প্যাসেঞ্জার কার) নয়, ট্রাক-বাস ইত্যাদিতেও সার্বিক ভাবে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন ব্যবহারের আগ্রহ বাড়বে। তাঁদের মতে, আগে নীতি থাকলেও, আর্থিক সুবিধা-সহ পুরো প্রকল্প না-থাকায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সহায়ক পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। ফলে এখন তা কার্যকর হলে, সমস্যার সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা।

উল্লেখ্য, এনইএমএমপি-তে বলা হয়েছিল যে, বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে আগামী ৫-৬ বছরে ১৩-১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করা প্রয়োজন সরকারের। তবে শিল্পকেও এ ধরনের গাড়ি তৈরি ও তার সার্বিক পরিকাঠামো গড়ার জন্য আরও বেশি করে টাকা ঢালতে হবে।

ভারতের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির সম্ভাবনা নিয়ে সিয়াম ও ভারী শিল্প মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল উপদেষ্টা সংস্থা বুজ অ্যান্ড কোম্পানি। সমীক্ষকদের দাবি, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে ৫০ থেকে ৭০ লক্ষ হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা সত্যিই হলে, বছরে ২২-২৫ লক্ষ টন জ্বালানি ব্যবহার কমার সম্ভাবনা।

প্রসঙ্গত, পেট্রোল বা ডিজেলের মতো প্রথাগত জ্বালানির বদলে পুরোপুরি বৈদ্যুতিক এবং আংশিক বৈদ্যুতিক বা হাইব্রিড (যেখানে প্রথাগত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ দু’টিই ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকে) গাড়ি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে সারা বিশ্বেই। কারণ, তাতে জ্বালানি তেলের সীমিত সঞ্চয়ের সমস্যা যেমন কিছুটা কমবে, তেমনই কমবে দূষণও। তা ছাড়া, কিলোমিটার-পিছু পেট্রোল গাড়ি চড়ার খরচ যদি ৩.৫০ টাকা হয়, তা হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে তা মাত্র ৫০ পয়সা। হাইব্রিড গাড়ির জন্য সেই খরচ একটু বেশি হলেও, পেট্রোল গাড়ির তুলনায় তা সস্তা।

আর এই সব কারণেই বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির গবেষণা-সহ বিভিন্ন খাতে ইতিমধ্যেই বড় অঙ্কের লগ্নির পরিকল্পনা নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা (৫০০ কোটি ডলার), চিন (২,০০০ কোটি ডলার), জাপান (১৭০ কোটি ডলার), ফ্রান্স (৩৫০ কোটি ডলার) ইত্যাদি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE