শ্রী মণি ভাস্কর
একবার শাকল্য মুনি যাজ্ঞবল্ক্য ঋষিকে প্রশ্ন করলেন, 'এই বিশ্ব চরাচরে কতজন দেবতা রয়েছেন?' উত্তরে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেন, 'স হো বাচ মহিমান এবৈষামেতে ত্রয়স্ত্রিংশত্বেব দেবা ইতি কতমে তে ত্রয়স্ত্রিংশদিতাষ্টৌ বসব একাদশ রুদ্রা দ্বাদশাদিত্যাস্ত একত্রিংশদিন্দ্রশ্চৈব প্রজাপতিশ্চ ত্রয়স্ত্রিংশাবিতি।'(বৃহদারণ্যক উপনিষদ, অধ্যায় ৩/৯/২)। অর্থাৎ এক পরমেশ্বর বা পরমব্রহ্ম হলেও, তিনি নানা শক্তিরূপে প্রকাশিত। যাজ্ঞবল্ক্য ঋষি বললেন, 'ত্রয়স্ত্রিংশদিতাষ্টৌ বসব'....... অর্থাৎ ৩৩ জনের মধ্যে আটজন বসু, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্য, এবং এই ৩১ জন সহ ইন্দ্র এবং প্রজাপতি-কে নিয়ে সর্বসাকুল্যে ৩৩ জন দেবতা। এই একই তথ্য আমরা পাই, অথর্ব বেদের ১০/৭/১৩, ঋগ্বেদের ৮/২৮/১ এবং শতপথ ব্রাহ্মণের ১৪ নং স্কন্দে। অর্থাৎ অষ্টবসু, একাদশ রুদ্র(একজন প্রধান রুদ্র এবং তাঁর ১০টি বর্দ্ধিত শক্তি। এই ১০টি বর্দ্ধিত শক্তি আসলে আমাদের শরীরেরই ১০টি জীবন শক্তি), দ্বাদশ আদিত্য, এক বিদ্যুৎ এবং এক কর্মকাণ্ডের যজ্ঞকুণ্ড, উপনিষদে বর্ণিত এক বিদ্যুৎই (ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফোর্স) হল বাস্তুর কেন্দ্র বা 'ব্রহ্মা', এবং কর্মকাণ্ডের যজ্ঞকুণ্ড হল বাস্তুর 'অদিতি'। ঠিক এই ভাবে আমাদের বাস্তুতে নিহিত পিতৃ, ভূধর, অপহ, ভল্লাট ইত্যাদি দৈবশক্তির মধ্যে নিহিত রয়েছেন অষ্টবসু। আবার বিবস্বান, ইন্দ্র, বরুণ, অর্যমা ইত্যাদি দৈবশক্তিতে দ্বাদশ আদিত্যের প্রকাশ, অন্য দিকে একাদশ রুদ্রের মধ্যে রয়েছেন রুদ্র, অপবৎস, শিখি, জয়ন্ত, সত্য, গন্ধর্ব ইত্যাদি। আমাদের বাস্তুতেই অসুর, শোষ, পাপযক্ষা, রোগ, নাগ ইত্যাদির মতো ১২টি আসুরিক শক্তি রয়েছে।
'একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি' (কঠোপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় বল্লি-র ১২ নং শ্লোক)। অর্থাৎ, একক নিয়ন্তা পরমব্রহ্ম বিভিন্ন রূপ ধারণ করে বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে যোগসুত্র রূপে জগতের সমস্ত কিছুতেই প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত। উপনিষদের এই শ্লোকটিকেই যেন প্রকাশ করলেন কবিগুরু তাঁর গানে, 'প্রথম আদি তব শক্তি- আদি পরমোজ্জ্বল জ্যোতি তোমারই হে গগনে গগনে'। গত পর্বেই বলা হলেছিল, ব্রহ্মাণ্ডের জ্যামিতি, বাস্তুর জ্যামিতি এবং মনুষ্যদেহের জ্যমিতি একইভাবে স্পন্দিত হলে কল্যাণময়, আনন্দময় উর্জা প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের কথায়, 'জ্যোতি তোমারই হে গগনে গগনে'। অর্থাৎ বাস্তুর ব্রহ্মাণ্ডীয় আকাশে সেই এক ও আদি দৈবীয় সত্ত্বার বিভিন্ন রূপের প্রকাশ হয়। কিন্তু সেই প্রকাশ কোনওভাবে বাধাপ্রাপ্ত হলেই আসুরিক শক্তি বা বিনাশ শক্তির উদ্ভব হয়। যেমন, বাস্তুর বিবস্বান (দ্বাদশ আদিত্যের একজন) অংশটি ত্রুটিযুক্ত হলে সেই বাস্তুতে বসবাসকারী ব্যক্তির সম্মান-যশ হানি হয়, কর্ম-আর্থিক উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। বাস্তুর পশ্চিম দিকে অবস্থান করেন বরুণ (দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম)। বেদে সহস্রচক্ষু বিশিষ্ট সর্বদ্রষ্টা রূপে বরুণকে বর্ণনা করা হয়েছে। যে বাস্তুর বরুণ অংশটি ত্রুটিযুক্ত সেই বাস্তুতে আর্থিক দুর্দশা তৈরি হয়। পুষা (দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম) ত্রুটিযুক্ত হলে সেই বাস্তুতে বসবাসকারীদের হৃষ্টপুষ্ট মন-শরীর তৈরি হয় না, তারা নিজেরাই খাল কেটে কুমির ডেকে আনে।
বাস্তুর পূর্ব দিক নিয়ন্ত্রণ করে সূর্য, পশ্চিম দিক শনি, দক্ষিণ দিক মঙ্গল, উত্তর দিক বুধ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক শুক্র, উত্তর-পূর্ব দিক বৃহস্পতি এবং কেতু, উত্তর-পশ্চিম দিক চন্দ্র, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক রাহু এবং বাস্তুর ঠিক মধ্যস্থল নিয়ন্ত্রণ করে কেতু। সূর্য, অর্থাৎ প্রকাশ, প্রাণশক্তি, এই সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয়। শুক্র কথার অর্থ হল শুভ্র, ঔজ্জ্বল্য, সূর্য যখন দক্ষিণ-পূর্ব কোণে যায়, তখনই সর্বাধিক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেকারণেই শুক্রের দিক হল বাস্তুর দক্ষিণ-পূর্ব দিক। উত্তর দিককে ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থ-বৈভব-ঐশ্বর্যের দিক বলে মনে করা হয়। এই দিকটি নিয়ন্ত্রণ করে বুধ, বুধ ধাতুর অর্থ বোধ /উপলব্ধি। দেবী দুর্গার 'বোধন' কথাটিও এসেছে বুধ ধাতু থেকেই। বোধন কথার অর্থ হল বোধযুক্ত জাগরণ। একমাত্র বোধযুক্ত জাগরণ বা প্রকৃত উপলব্ধি হলেই অর্থ-ঐশ্বর্য-বৈভব আসে, সেকারণেই বুধ নিয়ন্ত্রিত উত্তর দিকটিকে বাস্তুশাস্ত্রে সম্পদের দিক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই দিকটির দিকপাল হলেন কুবের। বাস্তুতে মোট আটজন দিকপাল রয়েছেন। উত্তর দিকের দিকপাল কুবের, পূর্বের ইন্দ্র, উত্তর-পূর্বের ঈশান, দক্ষিণ-পূর্বের অগ্নি, দক্ষিণের যম, দক্ষিণ-পশ্চিমের নিঋুতি, পশ্চিমের বরুণ, উত্তর-পশ্চিমের বায়ু, এই অষ্ট দিকপালকে আবার কোথাও কোথাও অষ্টলক্ষ্মীর শক্তি রূপে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাস্তুতে সূর্য-চন্দ্র-মঙ্গল.... এদের প্রভাব
যাঁরা ম্যানেজার, ডিরেক্টর, উচ্চপদস্থ আধিকারিক, নেতা, ইন্টিরিয়র ডিজাইনার এদের প্রত্যেকেরই সূর্যের শক্তি বা পূর্ব দিকের শক্তির প্রয়োজন। যাঁরা নার্স, কাউন্সিলর, মনোবিদ, সমাজকর্মী, জল নিয়ে কাজ করেন, আমদানি-রফতানির ব্যবসা, খাদ্যদ্রব্য বিষয়ক কাজ করেন, মহিলা ও শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন তাঁদের চন্দ্রের শক্তি বা বাস্তুর উত্তর-পশ্চিম দিকের শুভ শক্তির প্রয়োজন। যাঁরা কলকারখানা, মেশিনপত্র, রসায়ন, বায়ো টেকনোলজি বা ওষুধপত্র নিয়ে কাজ করেন, পুলিস বা সুরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত, সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবসা করেন তাঁদের উন্নতিতে আবশ্যক দক্ষিণ দিকের শক্তি বা মঙ্গল গ্রহের শক্তি। যাঁরা সাংবাদিক, বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত, প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার বা কর্মী, পরামর্শদাতা, ইন্টারনেট, টেলিকম, ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করেন, সেলস, বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি, অ্যাকাউন্টেন্ট, ত্বক পরিচর্চার কাজ করেন তাঁদের বাস্তুতে উত্তর দিকের শক্তি বা বুধের শুভ প্রভাব প্রয়োজন। যাঁরা আর্থিক পরামর্শদাতা, শিক্ষাবিদ, জীবনবিমা, বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের বাস্তুর উত্তর-পূর্ব দিক এবং বৃহস্পতির শুভ প্রভাব প্রয়োজন। আর্ট, ডিজাইনিং, ফ্যাশন, ফটোগ্রাফি, টেক্সটাইল, বুটিক, বিউটি প্রডাক্ট, ফ্লোরিস্ট, মিউজিক বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের জন্য প্রয়োজন শুক্রের শক্তি বা বাস্তুর দক্ষিণ-পূর্ব অংশের শুভ শক্তি। যাঁরা কৃষি, জমি, তেল, খনিজ, গ্যাস, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, পোষ্য প্রতিপালন করেন তাঁদের উন্নতিতে আবশ্যিক বাস্তুর পশ্চিম দিকের শুভ শক্তি বা শনির শুভ প্রভাব। যাঁরা টেকনিশিয়ান, প্যাথলজিস্ট, বৈদেশিক কোনও বিষয় নিয়ে কাজ করেন তাঁদের আবার রাহুর শুভ শক্তি বা বাস্তুর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের শক্তি প্রয়োজন। যাঁরা ধর্মীয় কাজ, হিলিং, অকাল্ট সায়েন্স, মেডিটেশন নিয়ে কাজ করেন বা যাঁরা সেলফ ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাডভাইজার তাঁদের জন্য কেতু গ্রহ বা গৃহের মধ্যস্থানের শুভ প্রভাব প্রয়োজন। গৃহের এই দিকগুলির কোনও বাস্তুগত ত্রুটি থাকলে সেই বাস্তুতে বসবাসকারীদের উপর বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাস্তুসম্মত ভাবে এই ত্রুটিগুলির প্রকৃত সংস্কার করলে ধীরে ধীরে সেই বাস্তুতে শুভভাবের সঞ্চার হয়, কল্যাণকারী আনন্দময় উর্জার প্রকাশ ঘটে। বাস্তু বিষয়ক পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন।
WhatsApp - 86173 72545 / 98306 83986 (Payable & Non-Refundable)ডিসক্লেইমার: এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমস্ত বক্তব্য / মন্তব্য একান্তই বিজ্ঞাপনদাতার নিজস্ব। এর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy