আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে আমাদের ছা-পোষা বাসস্থান বা বহুতল কর্মস্থানে অবস্থানকারী প্রতিটি জৈব-অজৈব-সজীব-জড় বস্তু কোনও না কোনও ভাবে বাস্তুর উপাদান, এবং সেগুলি আমাদের জীবনে-কর্মে-সাফল্যে-ব্যর্থতায় প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে প্রতি মুহূর্তে চলা শুভাশুভের লড়াইয়ের ক্ষুদ্র সংস্করণ যেমন আমাদের দেহে বিদ্যমান, তেমনই আমাদের বাস্তুতেও চলছে দেব-অসুরের যুদ্ধ, নিরন্তর তৈরি হচ্ছে অমৃত এবং হলাহল। বাস্তুর উপাদানগুলিই এই যুদ্ধের সেনানি, কেউ লড়ছে দেবপক্ষে কেউ বা অসুরপক্ষে। কোনগুলি বাস্তুর উপাদান? দরজা-জানলা-সিঁড়ি-আসবাব থেকে মিটারবক্স সবই বাস্তুর এক একটি উপাদান! প্রত্যেকটির প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে আমাদের জীবনে-আচরণে-ভাবনায়। আর এই ভাবনা থেকেই ভবন বা ভবন থেকেই ভাবনার উৎপত্তি। আমরা যেমন যেমন ভাবনা করি তেমন তেমন বিচার প্রকট হয়। যেমন যেমন বিচার প্রকট হয়, তেমন হয় চিন্তন। যেমন চিন্তন তেমন পরিকল্পনা, যেমন পরিকল্পনা তেমন কর্ম সম্পাদন। এই ভাবনা-পরিকল্পনা-কর্ম সম্পাদনেই আমাদের ভাগ্য নির্মাণ হয়। সুতরাং ভাগ্য নির্মাণের নেপথ্যে ভবনের বা ভাবনার ভূমিকা রয়েছে। ঠিক এই কারণেই মানবজীবনে এত বড় নির্ণায়ক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বাস্তু।
বাস্তু-উপাদান ও তার প্রভাব
বাসস্থান, কর্মগৃহ, মন্দির, রাস্তা, উড়ালপুল বা বহুতল যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে, তার রূপ বা প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সেই বাস্তুর বিভিন্ন তত্ত্ব। অর্থাৎ বাস্তু তৈরিতে ব্যবহৃত নির্মাণ সরঞ্জামের অনুপাত, বাস্তুর আকার অনুসারে নির্ণয় হয় বাস্তুর তত্ত্ব। বাস্তুটি বর্গাকার, আয়তাকার, পঞ্চভূজ নাকি ষড়ভূজ, কোনও অংশ বেড়ে আছে কিনা, কোনও অংশ কাটা রয়েছে কিনা, দেওয়াল-ছাদ-মেঝের রং, বাস্তুতে মাটির পরিমাণ, ভেতরে বা বাইরে গাছপালার উপস্থিতি, সেখানকার গন্ধ, কোনও ছবি বা মূর্তি রয়েছে কিনা প্রতিটি স্থূল এবং সূক্ষ্ম বস্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিটি বস্তু এক একটি তত্ত্ব। আকৃতি, বর্ণ, দিক, ওজন, ক্ষেত্রফল, উচ্চতা, আয়তন, গন্ধ-সুগন্ধ-দুর্গন্ধ, ঔষধি-গুল্ম-বৃক্ষ-বনস্পতি, প্রতিমা, চিত্র, দ্রব্য, স্থানের কার্যকারিতা এবং ব্যবহারযোগ্যতা এই সমস্ত কিছুই সেই বাস্তুতে বসবাসকারীদের মানসিক আকাশে প্রভাব বিস্তার করে। একইসঙ্গে এই বাস্তুতেই রয়েছে পৃথ্বি-জল-অগ্নি-বায়ু-আকাশ অর্থাৎ ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম এই পঞ্চতত্ত্ব। বাড়ির সিঁড়ি যেমন পৃথ্বি তত্ত্ব, গাছপালা বায়ু তত্ত্ব আবার ইলেকট্রিক মিটার অগ্নি তত্ত্ব। বাস্তু শাস্ত্র না মেনে যখনই কোনও নির্মাণ হয় তখন সেই বাস্তুর পঞ্চতত্ত্বের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তার প্রভাবে ওই বাস্তুতে বসবাসকারীদের মানসিক পঞ্চতত্ত্বের ভারসাম্যও নষ্ট হয়। মানুষ নমনীয় হতে পারে না, স্থিতিশীলতা কমে যায়, প্রয়োজন-পরিস্থিতি অনুসারে নিজেকে অভিযোজিত করার ক্ষমতা, সহ্যশক্তি হ্রাস পায়। সেই ব্যক্তির ভাষা, মনোভাব, আবেগ তাকে ভুল পথে চালিত করে। অতীতের শোক-তিক্ত স্মৃতির ভার থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। নিজের শক্তি, সুবিধার জায়গা যেমন সে চিহ্নিত করতে পারে না, তেমনই নিজের দুর্বলতা, অসুবিধার জায়গাগুলোও সেই ব্যক্তির কাছে অস্পষ্ট হয়ে থাকে। বাস্তু নিয়ম লঙ্ঘন করলে অবধারিত ভাবে সেই বাস্তুতে বসবাসকারীদের নানান প্রতিকূলতার সম্মুখিন হতে হয়। তাদের শরীর-স্বাস্থ্য, কল্পনা-আবেগ সবেতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত চিন্তা করা, ভয় পাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়। আবার বাস্তুর পঞ্চতত্ত্বের সঙ্গে বাস্তুতে অবস্থানরত দেবতা এবং অসুরদের সঙ্গে ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী গ্রহগুলিও জড়িয়ে রয়েছে। ফলতঃ উপযুক্ত সংস্কার ছাড়া ত্রুটিযুক্ত বাস্তুর কুপ্রভাব এড়ানো যায় না।
বাস্তু পুরুষ এবং ৪৫টি দেবতা ও অসুর
ভবন/গৃহের ভিতর নিরন্তর পরিদৃশ্য স্থায়ী, স্থির, সর্বব্যাপক সমস্ত সম্ভাবনাযুক্ত বিকাশমান এক space বা ভবনের ভিতরের নির্মীয়মান আকাশ বা যা কিছু ভবনের আত্মা তাই বাস্তুপুরুষ। ব্রহ্মার নির্দেশে বাস্তু পুরুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে নিজ নিজ স্থান গ্রহণ করেছিলেন দেবতা ও অসুর। বেদে যে সমস্ত দেবতাদের মান্যতা দেওয়া হয়েছে, বাস্তু ভবন/গৃহের মধ্যে বিশেষ বিশেষ স্থানে তাদের উপস্থিতি অনুভূত হয়(সূত্র-বিশ্বকর্মাপ্রকাশ, সমরাঙ্গণ সূত্রধর)। যখনই কোনও নির্মাণ হয়, তখনই সেই স্থানে, সেই আকাশে বাস্তুপুরুষের স্বরূপ বিকশিত হয়। ওই বাস্তুর নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট স্থানে দেব বা আসুরিক তত্ত্বের স্পন্দন(Frequency) নির্মাণ হয়। একটি বাস্তুতে ফ্লোর বা মেঝে তৈরির পর যখনই চারটি দেওয়াল নির্মাণ হয়, তার এক থেকে দু-দিনের মধ্যে সেই স্থানে ব্রহ্মাণ্ডীয় মন(ব্রহ্মা)-র শক্তি বা উর্জার প্রকাশ ঘটে। এরপর ধীরে ধীরে ৬৮ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে আরও ৪৪টি উর্জা বা শক্তি প্রকট হয় ওই বাস্তুতে। এমনকি একটি ভবনে যতবার নতুন নতুন নির্মাণ হয়, ততবারই সেই স্থানে দৈব বা আসুরিক উর্জা ক্ষেত্র নির্মাণ হয়। বাস্তু শাস্ত্র প্রণয়নের সময়ই ব্রহ্মা আদেশ দিয়েছিলেন, যে নির্মাণকাজে বাস্তুর নির্মাণবিধি লঙ্ঘন হবে, তা অসুরের ভোজন সামগ্রী তৈরি করবে। অসুরের ভোজ্য সামগ্রীর অর্থ ঋণাত্মক শক্তি। ভয়, দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ, আশঙ্কা, ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল বাক্য প্রয়োগ এ সমস্ত নেতিবাচক প্রভাব সেই গৃহে জাগ্রত হবে। অন্যদিকে বাস্তুশাস্ত্র মেনে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে যে নির্মাণ হবে সেখানে দৈবশক্তি জাগ্রত হবে। দৈবশক্তি মানে কল্যাণময়ী কার্য, দূরদর্শিতা, স্পষ্টতা, সঠিক সামাজিক সম্পর্ক, সঠিক বিশ্লেষণী ক্ষমতা, নগদ অর্থ, সাহায্য, আত্মবিশ্বাস, নতুন সুযোগ, সঠিক আকর্ষণ ক্ষমতা, সঠিক শিক্ষা, সঠিক দক্ষতা, লাভ, পুনঃজাগৃতি এবং সঠিক বিসর্জন এবং প্রাপ্তি। সঠিক বাস্তুতে বাস করলেই একজন ব্যক্তির মধ্যে তার স্বপ্নপূরণের, সঠিক ভাবনার সঠিক চিন্তনের ক্ষমতা জন্ম নেয়। তখন ব্রহ্মাণ্ডের জ্যামিতি, বাস্তুভবনের আকাশের জ্যামিতি এবং ব্যক্তির জ্যামিতি একইভাবে স্পন্দিত হয়। সম্ভাবনাময় কল্যাণময় উর্জাক্ষেত্র নতুন আকার নেয়, নতুন নির্মাণবিন্দু তৈরি হয়, শুভ কর্ম এবং নব কর্মের আনন্দ-যজ্ঞকুণ্ড নির্মাণ হয়। এইভাবে বাস্তুর আকাশমণ্ডলের সাহায্যে এক অদৃশ্য-প্রবল শক্তি, মনুষ্য ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বাহ্য এবং অন্তরের প্রেরণা মিলিয়ে মনুষ্য জীবনে অপ্রকট অথবা অন্তর চেতনে পৌঁছে যায়। এই শক্তিই মনুষ্য মন-জীবনের শুভ বা অশুভ কর্মের, প্রকৃতির অধিকাংশ প্রভাব নির্মাণ করে। বস্তুত নিয়ম মেনে বাস্তু নির্মাণ অথবা ত্রুটিযুক্ত বাস্তুর, সংস্কার ছাড়া শুভ প্রভাব নির্মাণ কষ্টসাধ্য। এটিই প্রকৃতপক্ষে বাস্তু শাস্ত্রের মূল সিদ্ধান্ত। বাস্তু বিষয়ক পরামর্শ পেতে
হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর: 86173 72545/98306 83986 (Payable & Non-Refundable)
ডিসক্লেইমার: এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমস্ত বক্তব্য / মন্তব্য একান্তই বিজ্ঞাপনদাতার নিজস্ব। এর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy