Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
International

ঢাকায় পুলিশের গুলিতে খতম গুলশন হামলার চাঁই মারজান

গুলশন হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত। সাদ্দাম হোসেন নামে তার এক সহযোগীরও মৃত্যু হয়েছে এই সংঘর্ষে। বৃহস্পতিবার রাত ৩টে নাগাদ রাজধানীর রায়ের বাজার বেড়িবাঁধের কাছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুর্ধর্ষ ওই জঙ্গির মৃত্যু হয়।

নিহত দুই জঙ্গি। নিজস্ব চিত্র।

নিহত দুই জঙ্গি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ১৩:০৪
Share: Save:

গুলশন হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম মারজান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত। নিহত তার আরও এক সঙ্গী। নিহত অপর জঙ্গির নাম সাদ্দাম বলে জানা গেলেও তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত একজনের নাম নুরুল ইসলাম মারজান হলেও অন্যজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার ভোররাতে রাজধানীর রায়ের বাজার বেড়িবাঁধের কাছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুর্ধর্ষ ওই জঙ্গির মৃত্যু হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্তা জানান, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে নাগাদ জঙ্গি নেতা মারজান দুই সঙ্গী-সহ মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়ে যায়। সে সময় মারজানের এক সঙ্গী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে দু’পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। ঘটনাস্থলেই মারজান-সহ দু'জন নিহত হয় এবং অন্য জন পালিয়ে যায়। নিহত মারজানকে সনাক্ত করতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কেন না, লম্বা দাড়ি-গোঁফের আড়ালে মারজানের প্রকৃত চেহারা হারিয়ে গিয়েছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, মারজানের সঙ্গে নিহত সাদ্দাম আর এক শীর্ষ জঙ্গি নেতা বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, অনেকগুলি হত্যার সঙ্গে এই সাদ্দাম জড়িত।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশ ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টে ৪০ নাগাদ মহম্মদপুর থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে দুটি মরদেহ ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসে। জরুরি বিভাগের ডাক্তাররা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একজনের মাথায় ও বুকে গুলি লেগেছে এবং অন্যজনের শুধু বুকে গুলি লেগেছে।

গত বছর ১ জুলাই গুলশনের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি-সহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনার তদন্তে মারজানের নাম উঠে আসে। মারজানকে ওই হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করেন তদন্তকারীরা। নব্য জেএমবির অন্যতম এই শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেই হোলি আর্টিজানের ভিতর থেকে রক্তাক্ত লাশের ছবি বাইরে পাঠানো হয়েছিল।

মারজানের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আফুরিয়ায়। স্থানীয় বাজারের দর্জি নাজিমউদ্দিন ও সালমা খাতুনের ১০ সন্তানের মধ্যে মারজান চতুর্থ। গত এক বছর ধরে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে মারজান পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি সে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করে। পরে ভর্তি হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। পুলিশ সূত্রের দাবি- মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের সক্রিয় নেতা ছিল। এক পর্যায়ে শিবিরের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক স্তর সাথীতে পৌঁছে যান সে। গত অগস্টে পুলিশ মারজানের পরিচয় প্রকাশ করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানায়, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে আরবি বিভাগের ভর্তির পর থেকেই মারজান শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কামরুজ্জামান বলেন, ‘মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় এখানকার তালিকাভুক্ত শিবির নেতা ছিলেন। সে ছিল ধুরন্ধর প্রকৃতির। তার সম্পর্কে খোঁজ পেয়ে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ধরতে পারেনি পুলিশ। আমরা যাওয়ার আগেই সব সময় সে সটকে পড়ে।’

নুরুল ইসলাম মারজান

গত বছরের ১১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুর রব হলে অভিযান চালিয়ে শিবিরের ১৫ জন নেতাকে ধরা হয়। প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করে পুলিশ। এই নথিতে শিবিরের সাথী পর্যায়ের নামের তালিকায় আরবি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র পরিচয়ে নুরুল ইসলাম নামের একজন ছিল। এই নুরুল ইসলামই যে জঙ্গি মারজান সে বিষয়ে পরে নিশ্চিত হয় পুলিশ। কারণ ওই শিক্ষাবর্ষে নুরুল ইসলাম নামে আরবি বিভাগের আর কোনও শিক্ষার্থী ছিল না।

আরও পড়ুন: চিহ্নিত গুলশন হামলার মাস্টারমাইন্ডরা, খুব তাড়াতাড়ি গ্রেফতারও হবে!

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর মারজান বিয়ে করেন পিসতুতো বোন শায়েলা আফরিন প্রিয়তীকে। বিয়ের পর স্ত্রীকেও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেন মারজান। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে আটক হন প্রিয়তী।

গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, গুলশান হামলার অন্যতম সমন্বয়কারী মারজান নিউ জেএমবির সামরিক শাখার একজন কমান্ডারও ছিল। অতি উগ্রবাদী চিন্তায় বিশ্বাসী মারজানের সঙ্গে জেএমবির হাইপ্রোফাইল জঙ্গিদের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকও হয়। পরবর্তী হামলার জন্য ছকও তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে তাদের সেই ছক ভেস্তে যায়। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২২ বছর বয়সী মারজান ভারী অস্ত্র চালাতে পারদর্শী। আটক জঙ্গি জাহাঙ্গির ওরফে রাজীব ওরফে সুভাষ গাঁধীকে জিজ্ঞাসাবাদে করেই মারজান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা।

নব্য জেএমবির মূল নেতা এবং সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডের প্রধান হোতা কানাডীয় পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম চৌধুরী গত বছরই ২৭ অগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত হয় দুই সঙ্গী সহ। এর পর ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ আজিমপুরের আর এক জঙ্গি আস্তানা থেকে তিন জঙ্গির স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়; তাদের মধ্যেই মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি ছিল। কিন্তু মারজানকে ধরতে পারছিল না পুলিশ। এর মধ্যে পাবনায় মারজানের বাবা নিজামউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনিও ছেলের কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না বলে পুলিশকে জানান।

অন্য বিষয়গুলি:

Marjan Gulshan Attack Terrorist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE