ধৃত হাসনাত করিম এবং তাহমিদ। নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের গুলশান হত্যাকাণ্ডে দুই প্রবাসী বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করল ঢাকা পুলিশ। একজন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এবং ব্রিটেনের নাগরিক হাসনাত করিম। অন্যজন কানাডার নাগরিক এবং সেখানকারই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মহম্মদ ইউসুফ আলি জানান, বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান আড়ংয়ের সামনের রাস্তা থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ হাসনাতকে ধরে পুলিশ। তাহমিদকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লকের একটি বাড়ি থেকে রাত ৯টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে তোলা হলে দু’জনকেই আট দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
হাসনাত করিমের বাবা বাংলাদেশের একটি বড়সড় আর্কিটেক্ট ফার্মের মালিক মহম্মদ রেজাউল করিম। হাসনাত বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসে বাবার ফার্মে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। হামলার দিন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সপরিবারে খেতে গিয়েছিলেন। আর তাহমিদ হাসিব খান বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তিনি কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কানাডার স্থায়ী নাগরিক। গত ১ জুলাই গুলশান হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ। সে দিন সন্ধেয় হোলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন তিনিও।
হাসনাত করিম। নিজস্ব চিত্র।
গত ১ জুলাই রাত ৯টা নাগাদ ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। ১৫ বিদেশি সহ ২০ জনকে তারা কুপিয়ে খুন করে। তা ছাড়াও জঙ্গিদের বোমার আঘাতে মারা যানপুলিশের দুই কর্তা। পর দিন অর্থাত্ ২ জুলাই সকালে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে খতম করে ছয় জঙ্গিকে।
সেনা অভিযানের পর ওই রেস্টুরেন্ট থেকে ৩২ জন পণবন্দিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে হাসনাত করিম ও তাহমিদের আচরণ রহস্যজনক মনে হওয়ায় তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে হাসনাত ও তাহমিদকে ছেড়ে দেওয়ার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও সংবাদমাধ্যম তাঁদের খোঁজ পায়নি।
আরও পড়ুন: ‘মারব নয় মরব, এটাই বেহেস্তে যাওয়ার রাস্তা’! ঢাকা জঙ্গির অডিও ক্লিপ
হাসনাত করিমের পরিবার গত মাসের মাঝামাঝিতে দাবি করে, পণবন্দি দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, গত ২ জুলাই রাতে তাঁর সঙ্গে শেষ বার দেখা হয়। এর পর আর তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। একই ধরনের কথা বলা হয় ফাহমিদের পরিবারের পক্ষ থেকেও।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়, হাসনাত বা ফাহমিদ তাদের হেফাজতে নেই। গুলশান হামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গত মাসে বলেছিলেন, ‘হাসনাত ও তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাগালের মধ্যেই আছেন। তাঁদের আমরা একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো কোনও কারণে ওঁরা বাড়িতে না থেকে অন্য কোথাও আছেন। তবে কোথায় আছেন, এটা মোটামুটি আমাদের ধারণায় রয়েছে। আমাদের ওয়াচের মধ্যেই আছেন, সার্ভিলেন্সের ভেতরেই রয়েছেন। আমরা চাইলেই তাঁদের পাব।’
তাহমিদ। নিজস্ব চিত্র।
ঢাকা পুলিশ সূত্রে খবর, হোলি আর্টিজান বেকারির রেস্তোরাঁয় হামলার যে সব ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার হয়েছিল, তাতে হাসনাত এবং তাহমিদের গতিবিধি সন্দেহজনক লাগে তদন্তকারীদের। এক কোরিয়ান নাগরিকের লুকিয়ে তোলা ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর সন্দেহ আরও গভীর হয়। হলি আর্টিজানের পণবন্দি পর্বের সময় জঙ্গিদের কয়েকজনের সঙ্গে তাঁদের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁটতে ও কথা বলতে দেখা গিয়েছে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে নানান তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে বাংলাদেশ পুলিশ নিশ্চিত, হাসনাত করিম নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের একজন সক্রিয় সদস্য। বিভিন্ন সময় হাসনাতকে সাহায্য করে তাহমিদ। হোলি আর্টিজানে হামলার দিন জঙ্গিরা তাদের নিজস্ব যোগাযোগের জন্য ডব্লিউআইসিকেআর নামে একটি অ্যাপ ব্যবহার করেছিল। হাসনাত করিমের মোবাইলে ওই অ্যাপটি পাওয়া গেছে। জঙ্গিরা ১ জুলাই রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে হোলি আর্টিজানে ঢোকে। পুলিশের দাবি, রাত ৮টা ৫৭ মিনিটে হাসনাতের মোবাইলে ওই অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy