Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

হাতি-করিডরেই শিবির, ভয়ে কাঁপছেন রোহিঙ্গারা

কুতুপালং-বালুখালি শরণার্থী শিবিরটির গায়েই অভয়ারণ্য। বন দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন— মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে হাতির যাতায়াতের পথ সেই জঙ্গল, যাকে বলে করিডর।

কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শিবিরে হাতির হানা। —নিজস্ব চিত্র

কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শিবিরে হাতির হানা। —নিজস্ব চিত্র

দেবদূত ঘোষঠাকুর
কক্সবাজার শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

ঝড়বৃষ্টিতে এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা। দোসর হাতির হানা।

কুতুপালং-বালুখালি শরণার্থী শিবিরটির গায়েই অভয়ারণ্য। বন দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন— মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে হাতির যাতায়াতের পথ সেই জঙ্গল, যাকে বলে করিডর। জঙ্গলে খাবারের সঙ্কট আর নিজেদের যাতায়াতের পথ হারিয়ে হামেশাই হাতিরা হানা দিচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে। সরকারি তথ্য বলছে, অক্টোবর থেকে হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০ জনের।

কুতুবুদ্দিন, জাহাঙ্গির, মনসুরেরা বলছিলেন— রাত বিরেতে হানা দিচ্ছে হাতির পাল। কখনও একটা হাতি, কখনও আবার কাচ্চাবাচ্চা-সহ পুরো দল। ঝুপড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। যাকে সামনে পাচ্ছে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারছে। জাহাঙ্গির বলছিলেন, ‘‘এই সে দিনের কথা। বিশাল একটা দাঁতাল হানা দিয়েছিল। আমরা ছুটতে গিয়ে পাহাড় থেকে পিছলে পড়েছি। কারও হাড় ভেঙেছে, কারও মাথা। নদীতে নেমে সাঁতরে বেঁচেছি। চোখের সামনে একটা বাচ্চা ছেলেকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে দিয়েছে।’’

বৃষ্টিতে পাহাড়ে ধস নামলে হাতির হামলা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বন দফতর। বন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পাহাড় থেকে নামার পথেই শিবির।’’ হাতি এলে কী ভাবে তাড়ানো হবে, ইতিমধ্যেই জঙ্গল সংলগ্ন শিবিরবাসীদের তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্ষার সময়ে নিজেদের ঘর বাঁচাবেন, না হাতি ঠেকাবেন— তা নিয়েই দোটানায় শরণার্থীরা।

শিবির তৈরি হয়েছে দড়ি দিয়ে বাঁধা বাঁশের খুঁটির উপরে টিনের চাল দিয়ে। কাঠ দিয়ে দেওয়াল। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড কালবৈশাখীর ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল কলকাতা এবং স‌ংলগ্ন তিন জেলা। কক্সবাজারে ঝড়ের গতিবেগ এতটা না থাকলেও, শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের ভয় ধরানোর পক্ষে তা ছিল যথেষ্ট।
শিবিরে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবকের কথায়, ‘‘এই ভয়টাই আমরা পাচ্ছিলাম। বছরের এই সময়টায় কালবৈশাখী, ঘূর্ণিঝড়ের দাপট তো থাকেই। তার ওপর পাহাড়ে ধস নামলে উপায় নেই। কিন্তু কোথায় যে মানুষগুলোকে সরানো হবে বুঝতে পারছি না।’’

এত দিন প্রায় লাখ দশেক মানুষকে খাইয়ে পরিয়ে রেখে এখন বর্ষায় নতুন সঙ্কটে প্রশাসন। স্বেচ্ছাসেবীদের আশঙ্কা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু যে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা-ই নয়, ডামাডোলের সুযোগে ঢুকে পড়তে পারে বাইরের দুষ্কৃতীরাও। যদিও সেনাবাহিনীর হাতেই এখনও শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব।

উখিয়ার পাঁচটি শিবিরের ম্যাজিস্ট্রেট শামিমুন হক পাভেল বলছিলেন, ‘‘সুযোগসন্ধানীরা যাতে পরিস্থিতির সুযোগ না নিতে পারে, আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। গোয়েন্দারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন।’’ পাভেল বলেন, স্থানীয় মানুষের সংখ্যা ৫ লক্ষ। ওঁদেরই খাবার জোগান দিতে হয় বাইরে থেকে। তার মধ্যে এসে পড়েছেন লাখ দশেক শরণার্থী। অর্থাৎ কষ্টে থাকা স্থানীয় মানুষের সমস্যা আরও বেড়েছে। কিন্তু কত দিন এই ভাবে এলাকার মানুষ কষ্ট সইবেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কক্সবাজার শহরের মানুষও। শহরে ঢোকার পথে মাঝে মধ্যেই ব্যারিকেড কাড়া করা হয়েছে। প্রতিটি গাড়িতে তল্লাশি চলছে। যেন জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকা। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘কিছু শরণার্থীর হাতে ভাল টাকা পয়সা রয়েছে। তাঁরা সন্ধ্যার পরে শিবির ছেড়ে শহরে এসে হোটেলে থাকছেন বলে খবর আসছে। কম মজুরিতে কাজ করতেও অনেকে শহরে আসছেন। আমরা সেটা ঠেকাতে চাইছি।’’ তাঁর দাবি, হাতির হানা আর ঝড়-বৃষ্টির মরসুমও রোহিঙ্গাদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়েছে।

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE