Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Mukul Das

তিন বাহিনীর তত্পরতায় ছন্দে ফিরছে বিধ্বস্ত চট্টগ্রাম

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী শহর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ভালই ছিল। সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলেও তেমন কোনও শঙ্কার ছায়া পড়েনি। আচমকা বেপরোয়া ঘূর্ণিঝড় 'মোরা'র আবির্ভাব। ভাল করে জানাজানি হওয়ার আগেই ঝাঁপ জনপদে। কাড়ল ৯টি প্রাণ। ধূলিসাৎ হাজার হাজার ঘরবাড়ি, বেঘর মানুষ রাস্তায় এসে দাঁড়াল।

এভাবেই আঘাত হেনেছিল মোরা।—পিটিআই

এভাবেই আঘাত হেনেছিল মোরা।—পিটিআই

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৭:৫২
Share: Save:

শান্তশিষ্ট প্রকৃতি, পরিবেশ বান্ধব আচরণ। ফলে ফুলে সুরভিত শহর গ্রাম গঞ্জ। নদী ছুটছে সাগরের দিকে। সমুদ্রের ঢেউয়ে অফুরন্ত উল্লাস। প্রকৃতির আদরে নিশ্চিন্ত বসবাস। কোমলতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নৃশংসতাও ভয়ঙ্কর। সময় বিশেষে তার অপ্রত্যাশিত প্রকাশ। ঋতুর বালাই নেই। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত যে কোনও সময় তাণ্ডব শুরু হতে পারে। পালিয়েও পরিত্রাণ নেই। জান যাবে, বাসস্থান ভেঙে গুঁড়ো হবে, সর্বস্বান্ত হয়ে পথে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। ক্ষতি যত, ক্ষত তত। রেয়াত করবে না কাউকেই। শিশু-বৃদ্ধকেও নয়। চলে নিজের চালে। ভাঙে আপন গরজে। প্রকৃতির মার দুনিয়ার বার।

পাশাপাশি শহরেও আকাশ পাতাল তফাত। খেয়ালে লাগাম নেই। ঢাকা তখন বৃষ্টিতে ভাসছে, রাস্তায় জল জমছে, জীবনযাত্রা বিপন্ন। আর কলকাতা খটখটে শুকনো, এক ফোঁটা বৃষ্টির প্রতীক্ষায় তৃষ্ণার্ত চাতক। চড়চড়িয়ে বাড়ছে টেম্পারেচার। সাবধানবাণী ঘোষণা চিকিৎসকদের। ঘরে বসে থাকলে চলে কী করে। কাজে তো বেরোতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইটাই চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী শহর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ভালই ছিল। সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলেও তেমন কোনও শঙ্কার ছায়া পড়েনি। আচমকা বেপরোয়া ঘূর্ণিঝড় 'মোরা'র আবির্ভাব। ভাল করে জানাজানি হওয়ার আগেই ঝাঁপ জনপদে। কাড়ল ৯টি প্রাণ। ধূলিসাৎ হাজার হাজার ঘরবাড়ি, বেঘর মানুষ রাস্তায় এসে দাঁড়াল। ৩০ মে সকাল ৬টায় সেন্ট মার্টিন উপকূলে আছড়ে পড়ে 'মোরা'। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। সে সময় ভাটা থাকায় সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস হয়নি। চাষের জমি ক্ষতির হাত থেকে বেঁচেছে। সমুদ্রের নোনাজল চাষের সর্বনাশ করতে পারত। সেটা হয়নি।

আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে আবার নিম্নচাপ, বাংলাদেশ সমুদ্র উপকূলে সতর্কতা

উপকূল থেকে তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিশ হাজার কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। এই মুহুর্তে পুনর্বাসনটাই সবচেয়ে জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নৌ বাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী দুগর্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকার পর ফের চলছে। টেকনাফে লোকবসতি স্বাভাবিক হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হলেও, চালু করতে সময় লাগেনি। বৈদুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিশাল এলাকা অন্ধকারে তলিয়ে যায়। খুঁটি দাঁড় করাতেও দেরি হয়নি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সবকাজ সারা।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে আপাতত বড় দুর্যোগের কোনও আশঙ্কা নেই। তবু সতর্ক থাকাটা জরুরি। স্যাটেলাইটের তথ্য হাতে আসতে একটু সময় নেয়। মানুষের কাছে পৌঁছতে আরও কিছু ক্ষণ লাগে। এ বার যাতে সেই সময়টুকু আরও কমানো যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE