Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
International News

ভাষাই ধরিয়ে দিল হায়দরাবাদে লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশি জঙ্গি ইদ্রিশ আলিকে

নরম কেক, গরম কফি। আলতো করে টেবিলে রাখলেও ঠুক করে আওয়াজ। চমকে ওঠার মতো নয়। ঠোঁট ছোঁয়াতে দেরি করলে নিমেষে কফি ঠান্ডা। চাইলে ধোঁয়া ওঠা না হয়ে শীতলও মেলে। হুকুম হলে কোমল পানীয় বেভারিজও আসবে।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ১৪:৪১
Share: Save:

নরম কেক, গরম কফি। আলতো করে টেবিলে রাখলেও ঠুক করে আওয়াজ। চমকে ওঠার মতো নয়। ঠোঁট ছোঁয়াতে দেরি করলে নিমেষে কফি ঠান্ডা। চাইলে ধোঁয়া ওঠা না হয়ে শীতলও মেলে। হুকুম হলে কোমল পানীয় বেভারিজও আসবে। অল্প স্বল্প চুমুক দিতে খারাপ লাগবে না। ঢাকার গুলশনে হোলি আর্টিসাল বেকারি কাফেতে এসব পেয়েই সন্তুষ্ট অতিথিরা। বিদেশিরা ঢোকার আগে চারপাশ চোখ বুলোয়। কাফের নামটা পুরোন, জায়গাটা নতুন। ১ জুলাই যেখানে জঙ্গি হামলা হয়েছিল সেখান থেকে অনেকটা সরে এসেছে। আকারে ছোট হয়েছে। দু'হাজারের জায়গায় ৫০০ স্কোয়ার ফুট। নতুন বাড়ির দোতলায়। ২০০ জন অবশ্য স্বচ্ছন্দে বসতে পারে। কিচেনটিও খুব বড় নয়। বেকারির মনোযোগী কর্মী শাহরিয়ার আহমেদের বয়স ২৭। ঝকঝকে তরুণ, হালকা নীল শার্টস কব্জি পর্যন্ত গোটানো। ট্রাউজার্সের রং কালো। যাতে বেশি নোংরা না হয়। তাঁর সঙ্গীদেরও একই ইউনিফর্ম। অতিথি আপ্যায়নে সবাই সতর্ক। কাজের চাপেও কেউ বেজার নয়। সিসি টিভিতে সবটাই ধরা পড়ছে। কাফের বাইরে পাহারা দিচ্ছে নিরাপত্তা কর্মীরা। তাদের চোখ এড়িয়ে মশা মাছিও গলতে পারবে না।

গত ১ জুলাই জঙ্গি হামলায় নয় ইতালীয়, সাত জাপানি, এক আমেরিকান, এক ভারতীয়র মৃত্যুর পর অনেকটা সময় কেটেছে। গুলশন আর ভয়ে ডুবে নেই। অভিশপ্ত পুরোন বাড়িটা ফিনিক্স পাখির মতো নতুন করে জেগে উঠছে। যত দ্রুত সম্ভব নতুন চেহারায় ফেরানোর আশ্বাস। পুরোন জঙ্গিরা যাতে নতুন হয়ে ওঠার সুযোগ না পায় সে চেষ্টাও অব্যাহত। নিরাপত্তা বাহিনীর এনকাউন্টারে অনেকেই শেষ। তবে এর মধ্যেই নতুন করে দু’এক জায়গায় আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। ভয়ঙ্কর কিছু ঘটাতে না পারলেও সন্ত্রাসীরা যে মরিয়া হয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে। দু'একজন জঙ্গি এদিক সেদিক ছিটকে গেছে। পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চাইছে। তারাও ফাঁদে পড়ছে। পলাতকদের কারও কারও ভারতে পালিয়ে আসার ইঙ্গিত পেতেই ঢাকা-দিল্লি পুলিশ তাদের গ্রেফতারের জাল বিছোয়। ঢাকা তথ্য সরবরাহ করতে থাকে, দিল্লির গোয়েন্দারা গোপন ডেরায় হানা দিয়ে অনুসন্ধান চালায়।

জঙ্গিরা যে দিল্লিতে নেই, অন্য কোনও জায়গায় ঘাঁটি গেড়েছে, সেটা স্পষ্ট হতেই কেন্দ্রীয় পুলিশ বেশ কয়েকটি রাজ্যের পুলিশকে সতর্ক হতে বলে। ভারতের আর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মধ্যে যোগসাজশ বাড়ে। দিল্লিতে তল্লাশি চালিয়ে লাভ হয়নি। পুলিশ জানতে পারে, দিল্লি জঙ্গিদের পছন্দ নয়। সেখানে তাদের ধরা পড়ার আশঙ্কা বেশি বলে অন্য জায়গায় পালিয়ে বেড়ায়। দিল্লির হোটেলে নিয়মিত পুলিশ অভিযান চলে। কড়া ব্যবস্থায় অন্য কোনও রাজ্যের অবৈধ বসবাসকারীরাও পার পায় না। বাংলাদেশের কেউ এলে দিল্লির সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে বিপদে পড়ে। খাওয়া-দাওয়াতেও দূরত্ব বাড়ে।

আরও পড়ুন: টাইগারদের জয়ে উচ্ছ্বসিত হাসিনা, ফোনে জানালেন অভিনন্দন

জঙ্গিরা পছন্দ করেছিল হায়দরাবাদ। ধর্মীয় সংস্কৃতিকে সঙ্গী করে সেখানেই ঠাঁই নেয়। সেখানেও সমস্যা বাধে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ভাষা। বাংলাদেশের জঙ্গিরা বাংলা ভাষাতেই অভ্যস্ত। বিশেষ করে উপভাষাতেই স্বচ্ছন্দ। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। গুলশন হামলার সঙ্গে যুক্ত ইদ্রিশ আলি হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় আসার খবর পৌঁছায় দিল্লি পুলিশের কাছে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল সেটা জানায় কলকাতার পুলিশের টাস্ক ফোর্সকে। গ্রেফতার হয় ইদ্রিশ। তাকে দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফেরান হচ্ছে। জেরায় আরও গোপন তথ্যের সন্ধান মিলবে বলে আশা।

অন্য বিষয়গুলি:

Holi Artisan Bakery Gulshan Attack Idrish Ali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE