গুলশন ও কিশোরগঞ্জে সন্ত্রাসবাদী হামলার তদন্তে এ বার কলকাতায় এলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। সোমবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় পৌঁছেছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাঁরা তদন্ত করবেন। এনআইএ-র একটি সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ও পার বাংলার গোয়েন্দারা এ পারের বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়া সন্দেহভাজনক ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গি মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে মুসার সঙ্গে কথা বলবেন।
মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে এনআইএ ফের মুসাকে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে। এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ জানান, এ দিন আদালতে তোলা হলে একপ্রস্ত নাটক করে মুসা। সে ‘জয় হিন্দ’ বলে চিৎকার করতে থাকে। তার পরে কাঁদতে কাঁদতে বলে— তাকে যেন এনআইএ হেফাজতে না-পাঠানো হয়। এনআইএ নির্যাতন করে। বাংলাদেশি পুলিশও জেরার নামে একই কাজ করবে। মুসার স্ত্রীও একই দাবি জানান। কিন্তু বিচারক মুসাকে দু’দিনের জন্য এনআইএ-র হেফাজতেই পাঠান।
এনআইএ সূত্রের খবর, আইএস জঙ্গি সংগঠনের পথ অনুসরণ ও তাদের হয়ে কাজ করায় তাকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে মুসা বরাবর আবু সুলেমান ওরফে মহম্মদ সুলেমান নামে এক বাংলাদেশি যুবকের কথা বলেছে। এনআইএ জেনেছে, ওই সুলেমান গুলশন ও কিশোরগঞ্জে জঙ্গি হামলার অন্যতম চক্রী। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ইদের জমায়েতে হামলার সময়ে সে নিজে উপস্থিত ছিল। কিন্তু এখনও সে অধরা।
সুলেমান সম্পর্কে মুসার কাছ থেকে সরাসরি তথ্য জানতে চেষ্টা করবে বাংলাদেশ পুলিশ। তা ছাড়া, তাঁরা সুলেমান সম্পর্কে ইতিমধ্যেই যে সব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো মুসার সঙ্গে কথা বলে মিলিয়ে দেখবেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের জেরায় মুসা বলে, ওই সুলেমান আদতে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্য হলেও পরে বাংলাদেশে সে আইএসের নামে কার্যকলাপ চালাতে শুরু করে। সুলেমান ইংরেজি ভাষায় অনলাইনে প্রকাশিত, আইএস-এর মুখপত্র ‘দাবিক’ বাংলায় অনুবাদ করে সমমনস্কদের মধ্যে ছড়ায় বলেও মুসা গোয়েন্দাদের জানিয়েছে।
তদন্তকারীরা জানান, সুলেমান এই বছরই এক বার বীরভূমে ও পরের বার মালদহে এসে মুসার সঙ্গে দেখা করে যায়। মালদহে সুলেমানের সঙ্গে ছিল আর এক বাংলাদেশি নাগরিক, যাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসা চেনে ‘বাংলার বাঘ টু’ নামে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ পুলিশ বিভিন্ন সে দেশের বিভিন্ন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গির ছবি মুসাকে দেখিয়ে জানার চেষ্টা করবে, সেই ‘বাংলার বাঘ টু’ আসলে কে। আবু সুলেমান ওরফে মহম্মদ সুলেমান নামটিও আসল নয় বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। ওই নামের আড়ালেই বা সে দেশের কোন মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি ভারতে আইএসের চাঁই হিসেবে কাজ করছে কি না, সেটাও জানতে চাইবে বাংলাদেশ পুলিশ।
১জুলাই গুলশনের হলিআর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জে ইদের জমায়েতে জঙ্গি হামলার পর প্রথম সে দেশের গোয়েন্দারা ভারতে এলেন। তবে বীরভূমের লাভপুরের যুবক মুসা বাংলাদেশের কোনও মামলায় অভিযুক্ত নন। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন পড়শি দেশের গোয়েন্দারা? এনআইএ-র এক অফিসার বলেন, ‘‘আমাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মুসার সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ কথা বলতেই পারে। সেই জন্যই মুসাকে ফের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’’ ৫ জুলাই ধৃত মুসা প্রথমে সিআইডি হেফাজতে ছিল। মামলার তদন্তভার এনআইএ নেওয়ার পর তাদের হেফাজতে মুসা ছিল সপ্তাহ খানেকের বেশি। আদালত ১ অগস্ট মুসাকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy