Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

About God Vishwakarma

আমরা যে বিশ্বকর্মার পুজো করি, তিনি আসলে কে? জানেন কি?

ক’দিন বাদেই তাঁর পুজো। এই লেখায় থাকল তাঁর স্বরূপ নিয়ে নানান কাহিনি।

পূর্বা সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৩
Share: Save:

বিশ্বকর্মা হলেন দেব শিল্পী। তিনি আমাদের সমস্ত শিল্পের অধিষ্ঠিত দেবতা। কিন্তু বর্তমানের বিশ্বকর্মা পূজোর উৎসমুখ কিন্তু অনেক প্রাচীন। বিশ্বকর্মা বৈদিক দেবতা। বেদে যে রূপে বিশ্বকর্মা চিত্রিত হয়েছেন পৌরাণিক সাহিত্যে এসে সেই বিশ্বকর্মাই ভিন্নভাবে উপস্থাপিত। বৈদিক বিশ্বকর্মা আর পৌরাণিক বিশ্বকর্মা হলেন দুটি ভিন্ন চরিত্র।

যখন থেকে সৃষ্টি, তখন থেকেই সৃষ্টির দেবতা কল্পনার যাত্রা শুরু। তাই বেদে বিশ্বকর্মা সর্বাধিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেবতা। ঋগবেদে বিরাট পুরুষই বিশ্বকর্মা। শুক্ল যজুর্বেদে বিশ্বকর্মাকে 'দক্ষিণা' বলা হয়েছে। দক্ষিণ শব্দের অর্থ প্রসন্ন। যজ্ঞাগ্নির আরেক নাম দক্ষিণাগ্নি।

যিনি প্রসন্ন থাকেন, তিনিই বিশ্বকর্মা। বিশ্বকর্মা সচল, চলনশীল। মহীধরের ভাষ্যে বলা হয়েছে, সমস্ত বিশ্বসৃষ্টি করেন বলেই তিনি বায়ু, যে বায়ু আর্যাবর্তের দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হয়।

বৈদিক সাহিত্যে সূর্যের সঙ্গে বিশ্বকর্মা বারবার একীভূত হয়েছেন। কারণ সূর্যই সৃষ্টিকর্তা। বিশ্বকর্মা যে মূলত সূর্য একথা দেশি -বিদেশি অনেক পণ্ডিত স্বীকার করেছেন। কারণ বেদে বলা হচ্ছে, ‘হে সূর্য, তুমি জ্যোতির মাধ্যমে শোভামান হয়ে দ্যুলোকে প্রকাশিত হও। তুমি সকল কর্ম সম্পাদক, তুমি বিশ্বকর্মা। তোমার তেজে বিশ্বভুবন অধিষ্ঠিত।"

এই বক্তব্যে বিশ্বকর্মার স্বরূপ ব্যক্ত করা হয়েছে। বেদে সূর্য নামক দেবতা ও বিশ্বকর্মা দুই ভিন্ন দেবতা হলেও তাঁদের কাজ এক, স্বরূপত তাঁরা সূর্যাগ্নি বা সূর্যরশ্মি। পৌরাণিক যুগে এই দুই এক গুণসম্পন্ন দেবতা একটি দেবতায় পরিণত হয়েছেন। কিন্তু রেখে গিয়েছেন ক্ষণিক আভাস। যেমন সূর্যের সপ্তরশ্মি, ঠিক তেমনই বিশ্বকর্মারও সপ্তরশ্মি।

বায়ু পুরাণের এক প্রসিদ্ধ কাহিনি আমাদের সূর্য ও বিশ্বকর্মার পারস্পরিক সম্পর্কের বিবর্তিত রূপকে তুলে ধরে। এই কাহিনি অনুসারে বিশ্বকর্মার কন্যা সুরেণুর সঙ্গে বিবাহ হয় ভাস্করের, অর্থাৎ সূর্যের। সূর্যের স্ত্রীরূপে তাঁর নাম হয় সংজ্ঞা। কিন্তু সংজ্ঞা কিছুতেই সূর্যের তেজ সহ্য করতে পারতেন না। তাই তিনি ছায়া সংজ্ঞা তৈরি করে পিতৃগৃহে চলে যান। কিন্তু বিশ্বকর্মা তাঁকে বলেন, বিবাহের পর কন্যার প্রকৃত আশ্রয় স্বামীগৃহ। আর সংজ্ঞা স্বামীকে না জানিয়ে সন্তানদের ফেলে রেখে চলে এসেছেন। সুতরাং তিনি তাঁকে আশ্রয় দিতে পারবেন না। তাঁকে আশ্রয় দিলে সূর্যের ক্রোধ তাঁর উপর বর্ষিত হবে। অসহায় সংজ্ঞা তখন অশ্বের বেশ ধারণ করে বিচরণ করতে থাকেন।পরে সূর্য সব কথা জানতে পেরে সংজ্ঞাকে নিজ গৃহে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তখন সূর্যের অনুমতি নিয়ে বিশ্বকর্মা তাঁর তেজকে কর্তন করেন। সংজ্ঞা তখন সূর্যসঙ্গে বাস করতে থাকেন। এই কাহিনিতে বিবর্তনের ধারায় সূর্য কিন্তু বিশ্বকর্মার থেকে বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন।

পুরাণে বিশ্বকর্মা শিল্পী, তিনি কেবল কর্মকার বা সূত্রধর নন। তিনি শ্রেষ্ঠ স্থপতি ও বাস্তুকার। রামায়ণে দেখি, বিশ্বকর্মা রাবণের সোনার লঙ্কা নির্মাণ করছেন। আবার বিশ্বকর্মা পুত্র নল নামক বানর পিতার শক্তিতে শক্তিমান হয়ে সমুদ্রের উপরে সেতুবন্ধন নির্মাণ করেছিলেন।

আবার হরিবংশে পাই শ্রীকৃষ্ণের আদেশে বিশ্বকর্মা দ্বারকাপুরী নির্মাণ করেছিলেন। বিষ্ণুপুরাণে বিশ্বকর্মা দেবতাদের বিমান ও ভূষণ নির্মাতা। যিনি সমস্ত দেবতাদের বিমান তৈরি করেছেন। মহাভারত অনুসারে বিশ্বকর্মা বিশ্বস্রষ্টা, তিনি স্বর্গেরও স্রষ্টা। আর সহস্র শিল্পেরও স্রষ্টা তিনিই। তাই আজও আমরা সেই পুরাণের দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে পূজা করি। কেবল তাঁর পূজা পদ্ধতির মধ্যে রয়ে গিয়েছে বৈদিক বিশ্বকর্মার অংশটুকু।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy