Advertisement
E-Paper

রাখের উৎসব- কার্তিকে আর এক দীপাবলি!

গুটি গুটি পায়ে শীত যখন চৌকাঠ ডিঙোয়, বাঙালিও তখন সুদীর্ঘ চার মাসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। হাজারো ব্রত আর উপবাসের আড়ে নিজের দেহের অর্গল বাঁধছে। তেমনই এক উৎসব হল রাখের উপবাস বা কার্তিক ব্রত। এ যেন আর এক দীপাবলি।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:২৮
Share
Save

গুটি গুটি পায়ে শীত যখন চৌকাঠ ডিঙোয়, বাঙালিও তখন সুদীর্ঘ চার মাসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। হাজারো ব্রত আর উপবাসের আড়ে নিজের দেহের অর্গল বাঁধছে। তেমনই এক উৎসব হল রাখের উপবাস বা কার্তিক ব্রত। এ যেন আর এক দীপাবলি। শতসহস্র প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত আকাশের নীচে এ সমগ্র চরাচর। তাই তো এই উদযাপনের আর এক নাম ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন।

বাংলাদেশে বাবা লোকনাথ বারদীর আশ্রমে প্রথম তাঁর ভক্তদের কার্তিক মাসে এই 'রাখের উপবাস' পালন করতে আদেশ দেন। এই অনুষ্ঠানকে কেউ কেউ তাই 'কার্তিক ব্রত'ও বলে থাকে।

নিয়ম ও উপকরণ

১৫ থেকে ৩০ কার্তিক এই ১৫ দিনের প্রতিটি শনি ও মঙ্গলবার সারা দিন উপবাস রেখে সন্ধ্যায় এই ব্রত পালন করেন ব্রতীরা। আয়োজনের মূল উপকরণ– কলাপাতা, মাটির প্রদীপ ও ঘি।

গোধূলির সময় থেকে মন্দির প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন নারীরা। লোকনাথ বাবার মূর্তির সামনে দুধ ঢেলে, ধূপ জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করেন তাঁরা। নৈবেদ্য দেওয়া হয় ফলমূল আর মিষ্টান্ন দিয়ে। এর পরে মন্দিরের সামনে সারিবদ্ধ ভাবে বসে সামনে কলাপাতার উপরে সলতে পাকিয়ে রাখা হয় ঘিয়ের প্রদীপ।

পরিবারের যে ক’জন লোক, যাঁদের বিপদ রক্ষার্থে প্রার্থনা করা, সেই ক'টি প্রদীপই রাখা হয়। চার পাশে সাজিয়ে দেওয়া হয় নানা গোটা ফলের নৈবেদ্য।

সূর্যাস্তে বেজে ওঠে ঘণ্টা। উলুধ্বনিতে প্রাঙ্গণ মুখরিত করতে করতে প্রদীপ জ্বালাতে শুরু করেন নারীরা। একসঙ্গে জ্বলে ওঠে শত শত প্রদীপ। সবশেষে, প্রার্থনা সেরে ভাঙা হয় সারা দিনের উপবাস। প্রাঙ্গণ তখন শত শত দীপের শিখায় ভাস্বর। অদ্ভুত উষ্ণতা চরাচর জুড়ে।

আপনজনের মঙ্গল কামনায় এই উপবাস করেন ভক্তকুল। তবে এর উত্তাপ যেন সামগ্রিক কল্যাণকে ছুঁয়ে যায়।

কারণ

সচরাচর হেমন্ত আর বসন্তের আবহাওয়ায় বেশ মিল থাকে। এর দরুণ হেমন্ততেও কখনও বসন্তের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এখন অনেকাংশে নরম হলেও, সে কালে বসন্ত মাত্রেই ছিল প্রাণঘাতী।

অতীতে শুধু ১৮১৭-২০ র মধ্যে পাঁচ বার কলেরা দেখেছিল ভারত। তার আগে অজস্র বার৷ কলেরার ভয়াবহতা ছিল প্রবল। চার-পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যেতেন একটি দশায়। বৈশাখ, আষাঢ় ও হেমন্তে রোগের প্রাদুর্ভাব প্রবল হত। তাই কলেরা-বসন্তের হাত থেকে বাঁচতে কার্তিক মাসে উপবাস পালন এবং আশ্রম প্রাঙ্গণে ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ-ধুনো জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা লোকনাথ। কার্তিকের দামোদর উদযাপন, দীপাবলি, আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন সবই আলোর উৎসব। এ-ও এক নতুন আলোর উৎসব।

সরাসরি হয়তো এর কোনও প্রভাব নেই। কিন্তু এই প্রস্তাবনার আড়ে অতীতের বিভীষিকাকে স্মরণ করিয়ে সাবধান করাটাই মূল। আপনজনের সুস্থতা কামনা করার পাশাপাশি মানুষ নিজেও সচেতন হয়।

উৎসবের অন্যতম বড় কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম। এ ছাড়া দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকা অজস্র লোকনাথ মন্দিরে পালন হয় এই রীতি।

স্বল্পশ্রুত এই রীতিটি কেন আর এক দীপাবলি, তা ছবি দেখলেই বোঝা যায়। এমন আলো উদ্ভাসিত যাপনের সঙ্গে একমাত্র দীপাবলিরই তুলনা করা চলে হয়তো।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Bangladesh Joy Baba Loknath Ananda Utsav 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।