মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, তাঁদের শহরেই অধিষ্ঠান করেন স্বয়ং বিষ্ণু এবং লক্ষ্মী। আশীর্বাদ করেন ভক্তদের। কোলাপুরে দেবী লক্ষ্মী দেবী অম্বানি বা অম্বাবাঈ নামে জনপ্রিয়। পঞ্চগঙ্গা নদীর তীরে অম্বাদেবীর মন্দির।
শ্বেত চূড়াবিশিষ্ট মন্দিরটি অসাধারণ সুন্দর। ঐতিহাসিক স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। চারটি বিরাট আকারের প্রবেশদ্বার রয়েছে মন্দিরে। প্রধান দ্বারটিকে বলা হয়, ‘মহাদ্বার’। তার মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করলে অসংখ্য দীপমালা পেরিয়ে প্রথমেই পৌঁছে যাওয়া যায় গরুড় মণ্ডপে। কাঠের কারুকাজ করা চৌকো আকারের স্তম্ভের উপরে এই মণ্ডপ নির্মিত। আঠারো শতকে মারাঠাশৈলীতে এটি নির্মিত। মণ্ডপে রয়েছে গরুড়ের মূর্তি। তার মুখ গর্ভগৃহের দিকে।
জনশ্রুতি বলে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মহাভারতের যুগে নাকি এই মন্দির তৈরি হয়। যা নির্মাণ করিয়েছিলেন স্বয়ং পাণ্ডবরা।ঐতিহাসিকদের অনুমান, সপ্তম শতাব্দীতে চালুক্য সম্রাটদের আমলে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল। তাঁদের মতে, সমগ্র মন্দিরক্ষেত্র একই সময়ে সম্পূর্ণ হয়নি। কিছুটা সপ্তম শতাব্দীতে, বাকিটা ধীরে ধীরে নির্মিত হয়। মারাঠাদের রাজত্বকালে এই মন্দির নতুন ঐতিহ্য তৈরি করে।
এই মন্দিরের দেবীকে ঘিরে দু'টি কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। প্রথমটি বলে, মন্দিরটি একান্ন সতীপীঠের অন্যতম পীঠ। এখানে নাকি বিষ্ণুর সুদর্শনে কর্তিত হয়ে দেবী সতীর দুই চক্ষু পতিত হয়েছিল।
দ্বিতীয় কাহিনি অনুসারে, 'কোলহাসুর' বা 'কোলাসুর' নামে এক দৈত্য এক সময়ে দেবতাদের কাছ থেকে বরলাভ করে দেবতাদেরই ত্রাস হয়ে উঠেছিল। কোলহাসুরের বর ছিল কোনও নারী ব্যতীত কেউই তাকে যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারবে না। যার জেরে কোলহাসুর অজেয় হয়ে উঠল। দেবতারা তখন বাধ্য হয়ে বিষ্ণুর কাছে গেলেন। বিষ্ণুর অনুরোধে দেবী মহালক্ষ্মী তখন কোলহাসুরকে বধ করেন। মৃত্যুর পূর্বে কোলহাসুর দেবীর স্তব করে। তাই তার নামেই এলাকার নাম হয় 'কোলহাপুর'।
দেবীর মূর্তিটি অখণ্ড কষ্টিপাথরে তৈরি। গর্ভগৃহে বছরের বিশেষ দিনগুলিতে আলোর খেলা দেখা যায়। পশ্চিম দেওয়ালে ছোট্ট একটি ঘুলঘুলি রয়েছে। স্থাপত্যবিদেরা এমন নিখুঁত অঙ্ক কষে সেটি নির্মাণ করেছেন যে, সূর্যের আলোকরশ্মি বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে দেবীর বিশেষ বিশেষ অঙ্গে বা সর্বাঙ্গে এসে পড়ে। যেমন ৯ নভেম্বর ও ৩১ জানুয়ারি সূর্যের আলো দেবীর পায়ে এসে পড়ে। ১১ নভেম্বর ও ২ ফেব্রুয়ারি আলো পড়ে দেবীর সর্বাঙ্গে। যাকে ‘কিরণোৎসব’ বলা হয়।
দেবীর পুজো হয় দিনে পাঁচ বার। ভোর সাড়ে চারটেয় মন্দিরের দরজা খোলে, বন্ধ হয় রাত সাড়ে দশটায়। বিশেষ তিথিতে দেবীর মূর্তি পালকিতে বসিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রা বেরোয়। এছাড়া দেবী পালকিতে চড়েন নবরাত্রির উৎসবের সময়েও। নবরাত্রি এই মন্দিরের প্রধান উৎসব। মন্দিরের গর্ভগৃহের একটি দেওয়ালে 'শ্রীযন্ত্র' খোদিত রয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে এই যন্ত্র খোদাই করিয়েছিলেন স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্য।
মহালক্ষ্মী মন্দিরের কাছেই রয়েছে, ‘মণিকর্ণিকা কুণ্ড’। কুণ্ডের তীরে বিশ্বেশ্বর মহাদেবের মন্দির। কোলাপুরবাসীর কাছে মহালক্ষ্মী মন্দির খুবই জাগ্রত। এখানে দেবী রুদ্র রূপে পূজিত। ধনসম্পদ লাভের জন্য বা আর্থিক সমস্যা দূর করতে দেবী লক্ষ্মীর উপাসনা করা হয়।
কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ট্রেনে মুম্বই। সেখানে থেকে কোলাপুর সড়ক পথে ৩৭৫ কিমি। কাছের বিমানবন্দর কোলাপুর।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy