প্রতীকী চিত্র
কালীপুজোর সময়ে দেবীকে ঘিরে নানা গল্পকথা নতুন করে শোনা যায়। বাংলা জুড়ে সাধারণ ভাবে যে কালীমূর্তির দেখা মেলে সর্বত্র, তিনি খড়্গহস্ত, হাতে মুণ্ডমালা। তাঁর পায়ের তলায় শুয়ে থাকেন শিব। কালী এবং শিবের এমন বিগ্রহের অর্থ হয়তো অনেকেরই জানা নেই।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, শ্মশানের পাশে ঘন জঙ্গলে এক প্রাচীন ভয়ঙ্করী দেবীর অধিষ্ঠান ছিল। চার হাতের সম্পূর্ণ উলঙ্গিনী দেবীকে দেখলে, ভয়ে-ভক্তিতে এমনিই মাথা নুইয়ে আসত সকলের। দেবীর হাতে রক্তমাখা খাঁড়া এবং মুন্ডমালা। তাঁর পায়ের নীচে শুয়ে শিব। সদ্য কাটা মুণ্ড থেকে ঝরে পড়া রক্ত পান করছে শিয়াল।
মা কালী উলঙ্গ কেন, সে কথা প্রথমেই জানা দরকার। তিনিই শক্তি, তিনি প্রকৃতি। শক্তিকে ঢাকার কোনও বস্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। পঞ্চভূত জুড়ে তিনিই বিরাজ করেন। তাই মা কালী অনাবৃত।
দেবীর বাম হাতের খড়্গটি আসলে জ্ঞানের খড়্গ। যা দিয়ে মা কালী জাগতিক বন্ধন ছিন্ন করেন। বাঁ হাতের মুণ্ডমালাটি মোক্ষ এবং চৈতন্যের প্রতীক।
ডান দিকে উপরের হাতে অভয় এবং নীচের হাতে বরমুদ্রা। মা কালীর গলার মুণ্ডমালায় থাকে ৫০টি করোটি। এর প্রত্যেকটি বর্ণমালার প্রতীক। অর্থাৎ, মা কালীকে জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। দেবীর এলোকেশী রূপ অতি ভয়ঙ্কর।
মা কালীর পদতলে থাকা শিব কিন্তু আসলে দেবতা শিব নয়। আসলে তা শবদেহ। শক্তি ছাড়া শিব একদমই অচল। তখন সে শবদেহের রূপ নেয়। এই শব-শিবের হৃদয়ে মা কালীর চরণ। যার অর্থ, মন যখন শবদেহে পরিণত হয়, বাহ্যিক চেতনা যখন লোক পায়, তখনই হৃদয়ে আবির্ভূত হন মা কালী। অর্থাৎ মানুষের অভ্যন্তরীণ তেজ-শক্তি-বোধ-বুদ্ধিই হল মা কালী।
যুগ যুগ ধরে মা কালীর এই রূপকেই বিগ্রহ হিসেবে পুজো করে আসা হচ্ছে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy